চীন হামলা করলে তাইওয়ানকে রক্ষা করবে যুক্তরাষ্ট্র: বাইডেন
চীন অপ্রত্যাশিত হামলা চালালে মার্কিন বাহিনী তাইওয়ানকে রক্ষা করবে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নের জবাবে বাইডেন এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, তাইওয়ান প্রসঙ্গে মার্কিন নতি পরিবর্তন হয়নি।
সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাইওয়ান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে ‘কৌশলগত অস্পষ্টতার’ নীতিতে আটকে আছে এবং তাইওয়ানের ওপর চীনা আক্রমণ হলে ওয়াশিংটন সামরিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে কি না তা স্পষ্ট করেনি। তবে এর বিকল্প নেই বলে প্রতিবেদনটিতে জানানো হয়।
তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমা দেশগুলোর উত্তেজনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সময়ই এ বিষয়ে বেশ কড়া বক্তব্য দিয়েছে। তবে তাইওয়ান ইস্যুতে এটিই জো বাইডেনের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে স্পষ্ট বক্তব্য এবং এটি বেইজিংকে নিশ্চিতভাবেই ক্ষুব্ধ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সাক্ষাৎকারে দেওয়া বাইডেনের স্পষ্ট এমন মন্তব্যের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কার্যত তাইওয়ান ইস্যুতে তাদের দীর্ঘদিনের নীতি থেকে বেরিয়ে এসেছে বলে মনে হয়েছে। এ ছাড়া এই দ্বীপ ভূখণ্ডটি রক্ষায় মার্কিন সেনাদের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার বিষয়ে তার সর্বশেষ এই বক্তব্যও ছিল আগের অন্যান্য বিবৃতির চেয়ে স্পষ্ট।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র জানান, তাইওয়ানের প্রতি মার্কিন নীতির পরিবর্তন হয়নি। মুখপাত্র বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট আগেও এই কথা বলেছিলেন। এমনকি এই বছরের শুরুর দিকে টোকিও সফরের সময়ও তিনি এমনটি বলেছেন। তিনি তখনও স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে আমাদের তাইওয়ানের নীতি পরিবর্তন হয়নি। সেটাই এখনও সত্য।’
এর আগে গত মে মাসে জো বাইডেনকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, তাইওয়ানকে রক্ষা করার জন্য তিনি সামরিকভাবে সংশ্লিষ্ট হতে ইচ্ছুক কি না। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন: ‘হ্যাঁ ... এটাই আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।’
সিবিএস নিউজের ৬০ মিনিটস সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট বাইডেন অবশ্য পুনর্ব্যক্ত করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে সমর্থন করে না এবং আমরা ‘এক-চীন’ নীতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ ছাড়া ওয়াশিংটন আনুষ্ঠানিকভাবে তাইপেইকে নয় বেইজিংকে স্বীকৃতি দেয়।
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সর্বশেষ এই মন্তব্য নিশ্চিতভাবে বেইজিংকে ক্ষুব্ধ করবে। এর আগে আগস্টে মার্কিন হাউসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের সময়ও ব্যাপকভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছিল চীন।
ওয়াশিংটনে চীনের দূতাবাস অবশ্য বাইডেনের সর্বশেষ এই মন্তব্যের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
উল্লেখ্য, তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমা দেশগুলোর দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। তাইওয়ান পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ, যা তাইওয়ান প্রণালীর পূর্বে চীনা মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। অবশ্য তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং।
গত বছরের অক্টোবরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছিলেন, মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে তাইওয়ানের পুনরেকত্রীকরণ অবশ্যই সম্পূর্ণ করতে হবে। এজন্য সামরিক পথে অগ্রসর হওয়ার বিষয়টিও খোলা রেখেছে বেইজিং।
অন্যদিকে চীনের প্রদেশ নয়, বরং নিজেকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে মনে করে থাকে তাইওয়ান। চীনা প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের জবাবে সেসময় তাইওয়ান জানায়, দেশের ভবিষ্যৎ তার জনগণের হাতেই থাকবে।
১৯৪৯ সালে চীনে কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখল করার পর তাইওয়ান দেশটির মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যদিও তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং। এরপর থেকে তাইওয়ান নিজস্ব সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে।
এসএন