১২তম দিনে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হয় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি। এরই মধ্যে ইউক্রেনের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস করেছে বলে জানিয়েছে রাশিয়া। সোমবার (৭ মার্চ) ১২তম দিনেও চলছে হামলা।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে রবিবারের উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা এখানে তুলে ধরা হলো–
১. কিয়েভের কাছে ইরপিন শহর থেকে একটি মর্টারের গুলির আঘাতে অন্তত তিন জন মারা গেছেন। এর মধ্যে একজন মা ও দুটি শিশু রয়েছে। শহরটি ভারি বোমাবর্ষণের মধ্যে রয়েছে। বেসামরিক নাগরিকরা ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি সেতুর ওপর দিয়ে শহরটি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। রুশ বাহিনীকে ঠেকাতে সেতুটিতে ইউক্রেনীয় বাহিনী বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল।
২. দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মারিউপোলে মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য যুদ্ধবিরতির আরেকটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এজন্য রাশিয়া-ইউক্রেন উভয়পক্ষই একে অপরকে দোষারোপ করছে। রেড ক্রস বলেছে, তারা লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সম্মত হয়নি। কয়েকদিন ধরে শহরটি বিদ্যুৎ ও পানিবিহীন রয়েছে।
৩. রাশিয়ান কমান্ডারের আদেশে জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক প্ল্যান্ট দখলে নেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পারমাণবিক পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা গ্লোবাল নিউক্লিয়ার ওয়াচডগ। এটি ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর অ্যাটমিক এনার্জির প্রধান রাফায়েল গ্রসি বলেছেন, নিরাপত্তার জন্য পারমাণবিক প্লান্টটির কর্মীদের নিরাপদে চাপমুক্তভাবে কাজ করতে হবে।
৪. ইউক্রেন থেকে ১০ লাখের বেশি মানুষ পোল্যান্ডে প্রবেশ করেছে। প্রায় ১৫ লাখ মানুষ এখন পর্যন্ত দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।
৫. দুই ঘণ্টার ফোনালাপে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে বলেছেন, রাশিয়া ‘আলোচনা বা যুদ্ধের মাধ্যমে তার লক্ষ্য অর্জন করবে। এর আগে রোববার তিনি তুরস্কের নেতা রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানকেও একই কথা বলেছিলেন।
৬. রাশিয়ায় যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভে চার হাজার ৬০০ জনেরও বেশি লোককে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ১৩ হাজার জনেরও বেশি লোককে আটক করা হয়েছে।
৭. রাশিয়া থেকে করপোরেট কার্যক্রম স্থগিত করেছে নেটফ্লিক্স, পিডাব্লিউসি ও আমেরিকান এক্সপ্রেস। টিকটকও দেশটিতে ভিডিও লাইভ স্ট্রিমিং এবং নতুন কনটেন্ট দেখানো বন্ধ করেছে।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গত আট বছরের লড়াইয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
এগারো দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। সাময়িক যুদ্ধবিরতি শেষে আজ চলছে যুদ্ধের ১২তম দিন। রাজধানী কিয়েভ ঘিরে রেখেছে রুশ সেনারা। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/