পশ্চিমাদের আশ্বাসে ৩ হাজার পরমাণু অস্ত্র ধ্বংস করেছিল ইউক্রেন
পশ্চিমাদের আশ্বাসেই তার পারমাণবিক অস্ত্র ধ্বংস করতে রাজি হয়েছিল ইউক্রেন। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট ইউক্রেনকে আশ্বাস দিয়েছিল পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের বিনিময়ে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করা হবে।
সে প্রতিশ্রুতি যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য রক্ষা করেনি বলেই অভিযোগ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। পশ্চিমারা এই সঙ্কটকালেও ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ায়নি বলেই অভিযোগ তার। যুদ্ধটা রাশিয়ার সঙ্গে অবশেষে ইউক্রেনকে একাই করতে হচ্ছে।
১৯৯৪ সালে মস্কোতে বুদাপেস্ট মেমোরেন্ডাম স্বাক্ষরের মাধ্যমে নিরস্ত্রীকরণ প্রচেষ্টার পরিসমাপ্তি ঘটে, যেখানে রাশিয়া, ইউক্রেন, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একত্রিত হয়ে প্রতিশ্রুতি দেয় যে দেশটি তার স্বাধীনতার জন্য ভবিষ্যতের যেকোনো হুমকি থেকে মুক্ত হবে এবং দ্রুত প্রবেশাধিকার পেতে সক্ষম হবে।
সাধারণ ইউক্রেনবাসীও এখন মনে করছেন পারমাণবিক অস্ত্র ধ্বংস করে তারা ভুল করেছেন। তারা মনে করছেন পারমাণবিক অস্ত্র থাকলে রাশিয়া আক্রমণ করতো না। আজ যদি পরমাণু অস্ত্র থাকত তাহলে রাশিয়া হামলা করতে সাহস পেত না। সাধারণ এক পরমাণু শক্তিধর আরেক পরমাণু শক্তিধরকে আক্রমণ করে না। এই ধারণা থেকে মূলত ইউক্রেনবাসী মনে করছেন নিরস্ত্রীকরণে রাজি হওয়াটাই ঠিক ছিল না।
এক সময় বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পারমাণবিক শক্তিধর দেশ ছিল ইউক্রেন। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যখন স্বাধীন ইউক্রেন হয় তখন এটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পারমাণবিক শক্তিধর দেশ ছিল। কিন্তু সেটি অল্প কিছু দিনের জন্য। এই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও রাশিয়ার উদ্যোগেই ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ করা হয়েছিল।
বুদাপেস্ট মেমোরেন্ডামের মাধ্যমে এই পারমাণবিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি হয়েছিল। ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা লাভের পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০২১ সালের মধ্যে ইউক্রেনকে পুরোপুরি পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ করা হয়। পশ্চিমাদের আর্থিক সহায়তায় ইউক্রেনের পরমাণু অস্ত্রগার ও ক্ষেপনাস্ত্রগুলো ধ্বংস করা হয়।
ইউক্রেনকে পারমাণবিকভাবে যখন নিরস্ত্রীকরণ করা হচ্ছে সেই সময়টাতেই উপমহাদেশের দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তান পরমাণু শক্তিধর দেশে পরিণত হয়। তখন ইউক্রেনের এই পদক্ষেপ বিশ্ববাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছিল।
কত পারমাণবিক অস্ত্র ছিল ইউক্রেনের
ফেডারেশন অব আমেরিকান সাইয়েন্টিস্টস এর হিসেবে, ১৯৯১ সালে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে তখন ৩ হাজার পারমাণবিক অস্ত্র ছিল দেশটির। এর চেয়ে বেশি পারমাণবিক অস্ত্র ছিল শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কাছেই। এ ছাড়াও ইউক্রেনের কাছে ২ হাজার স্ট্র্যাটেজিক অস্ত্রও ছিল। এই অস্ত্র দিয়ে দেশটি বিশ্বের যেকোনো দেশে হামলা চালাতে সক্ষম ছিল।
কথা রাখেনি যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও রাশিয়া যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি বলে অভিযোগ করেছেন সাধারণ ইউক্রেনবাসী থেকে শুরু করে দেশটির জনপ্রতিনিধিরাও। দেশটির সংসদ সদস্য অ্যালেক্সি গোঞ্চারেঙ্কো বলছেন, তখন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কাছ থেকে নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি পাওয়ার কারণেই ইউক্রেন পরমাণু অস্ত্র ধ্বংস করেছিল। সেই প্রতিশ্রুতি কোথায়। ইউক্রেনে বোমা পড়ছে। আমরা মরছি।
ইউক্রেনের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী এনরি জাহোরোদনিউক বলেন, ‘আমরা কোনো কিছু পাওয়ার আশা ছাড়াই নিজেদের পরমাণু অস্ত্র ছেড়ে দিয়েছি। আজ তার ফল ভোগ করছি।’ সূত্র: বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট
আরইউ/এমএমএ/