সামরিক শক্তি জোরদারের ঘোষণা জার্মানির
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার প্রেক্ষিতে প্রতিরক্ষা ব্যয় পরিকল্পনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানি। এর আগে রাষ্ট্রীয় নীতিতে পরিবর্তন এনে ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহের ঘোষণাও দিয়েছে দেশটির সরকার।
প্রতিরক্ষা খাতে বড় ধরনের ব্যয় বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানির সরকার। রবিবার দেশটির পার্লামেন্ট বুন্ডেসটাগে এই ঘোষণা দেন চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস। ইউক্রেন সংঘাতের প্রেক্ষিতে ২০২২ সালে প্রতিরক্ষা খাতে ১০০ বিলিয়ন ইউরো ব্যয়ের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন তিনি। ঋণের মাধ্যমে ব্যয় বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির অর্থমন্ত্রী।
ন্যাটোর পক্ষ থেকে প্রতিরক্ষা খাতে জিডিপির দুই শতাংশ বা তার বেশি ব্যয়ের শর্ত থাকলেও তা উপেক্ষা করে এতদিন তার চেয়ে কম ব্যয় করে এসেছে জার্মানি। ন্যাটোর সমালোচনা ও চাপ সত্ত্বেও তাতে পরিবর্তন আনা হয়নি। ইউক্রেন সংঘাতের কারণে সেই নীতি থেকে সরে আসার ঘোষণা দিলেন শলৎস। এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন এক অধ্যায়ের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।’’ এখন থেকে জার্মানি প্রতিরক্ষা খাতে প্রতি বছর জিডিপির দুই শতাংশের বেশি ব্যয় অব্যাহত রাখবে বলে জোর দিয়ে উল্লেখ করেন তিনি।
রাশিয়ার সমালোচনা করে শলৎস বলেন, ‘‘ইউক্রেনে হামলার মধ্য দিয়ে পুটিন বিশ্ব মানচিত্র থেকে শুধু একটি দেশকেই মুছে দিতে চান না, তিনি ইউরোপের নিরাপত্তা কাঠামোকেও ধ্বংস করে দিতে চান যা হেলসিংকি (চুক্তি) থেকে বিদ্যমান রয়েছে।'' উল্লেখ্য ১৯৭৫ সালে ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকিতে সার্বভৌমত্ত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা, সামরিক হুমকি থেকে বিরত থাকা সংক্রান্ত একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ।
এদিকে আগামী তিন মাসের জন্য জার্মানির আকাশসীমায় রাশিয়ার বিমান উড্ডয়ন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে দেশটির পরিবহণ মন্ত্রণালয়। নিজেদের আকাশসীমায় রুশ বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুয়ানিয়াও৷ এর আগে শুক্রবার একই ঘোষণা দিয়েছে পোল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, বুলগেরিয়া ও চেক রিপাবলিক৷
জার্মানির অস্ত্র সরবরাহ নীতিতে পরিবর্তন
ইউক্রেনে ১০০০ ট্যাক বিধ্বংসী অস্ত্র এবং ৫০০ মিসাইল পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে শনিবার বার্লিন৷ যত দ্রুত সম্ভব সেগুলো দেশটিতে পৌঁছে দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সংঘাতময় অঞ্চলে অস্ত্র সরবরাহ না করার নীতি থেকে সরে আসলো জার্মানি।
ইউক্রেনকে সরাসরি অস্ত্র দেয়ার এই সিদ্ধান্তের স্বপক্ষে রবিবার বুন্ডেসটাগে জার্মান চ্যান্সেলর বলেন, ‘‘ইউক্রেনের জরুরি প্রয়োজনের মুহূর্তে আমাদের সাহায্য তাদের দরকার। পুটিনের আগ্রাসনের অন্য কোন প্রতিক্রিয়া সম্ভব নয়।’’ পুটিনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘পুটিন এই যুদ্ধ বেছে নিয়েছেন, রুশ জনগণ নয়। কাজেই আমরা অবশ্যই এটিকে পুটিনের যুদ্ধ হিসেবেই দেখবো।’’
এদিকে জার্মানির এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ইউক্রেন। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এক টুইটে শলৎসের প্রশংসা করে এই উদ্যোগ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
জার্মানিতে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত আন্দ্রিজ মেলনিক বার্তা সংস্থা ডিপিএকে বলেছেন, ‘‘অবশেষে জার্মানির ১৮০ ডিগ্রি পরিবর্তনে আমরা আনন্দিত।’’
উল্লেখ্য, রাশিয়ার হামলার আগে জার্মানি ইউক্রেনে পাঁচ হাজার নিরাপত্তা হেলমেট সরবরাহের কথা জানিয়েছিল। সেসময় তাদের এই সিদ্ধান্তকে ‘হাস্যকর’ বলে উল্লেখ করেছিলেন কিয়েভের মেয়র।
সূত্র: ডয়চে ভেলে