দুর্নীতির শঙ্কায় মাল্টার নাগরিকত্ব পাননি টিউলিপের চাচি
ছবি: সংগৃহীত
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার এক আত্মীয়, টিউলিপ সিদ্দিকের চাচি শাহীন সিদ্দিক, ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র মাল্টার নাগরিকত্ব পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুর্নীতির শঙ্কায় মাল্টার কর্তৃপক্ষ তার নাগরিকত্বের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে।
সম্প্রতি ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শাহীন সিদ্দিকের পরিবার অর্থপাচার, দুর্নীতি, জালিয়াতি এবং ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে জড়িত বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এ কারণেই মাল্টা তাদের নাগরিকত্বের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে।
শাহীন সিদ্দিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকের স্ত্রী। ২০১৩ এবং ২০১৫ সালে তিনি মাল্টার নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিলেন। মাল্টায় নাগরিকত্বের বিনিময়ে বিনিয়োগ কর্মসূচি পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। তাদের অভিযোগ ছিল, শাহীন এমন একটি কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত যা ঢাকায় অবৈধভাবে মূল্যবান সরকারি জমি দখলের সঙ্গে জড়িত।
হেনলির নথিপত্র থেকে জানা যায়, শাহীন ২০১৩ সালের নাগরিকত্ব আবেদনে তার কোম্পানি "প্রচ্ছায়া"তে তার পদ উল্লেখ করেছিলেন। অথচ প্রতিষ্ঠানটি ২০১২ সালেই ঢাকার জমি দখলের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়। একইসঙ্গে শাহীন তার মেয়ে বুশরার সঙ্গে যৌথভাবে মাল্টার পাসপোর্টের জন্য ২০১৫ সালে আবার আবেদন করেন। এতে উল্লেখ ছিল, নাগরিকত্বের জন্য ৬৫০,০০০ ইউরো এবং ৭০,০০০ ইউরো ফি পরিশোধ করতে হবে।
শাহীন কুয়ালালামপুরের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অর্থ প্রদানের নিশ্চয়তা দেন, যেখানে প্রায় ২.৭৬ মিলিয়ন ডলার জমা ছিল। কিন্তু এ অর্থের সুনির্দিষ্ট উৎস উল্লেখ করা হয়নি। বাংলাদেশের মুদ্রা আইন অনুসারে একজন নাগরিক বছরে সর্বোচ্চ ১২,০০০ ডলার দেশে বাইরে নিতে পারেন। ফলে এত বিপুল অর্থ কীভাবে পাচার হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে।
এদিকে, শেখ হাসিনার পতনের পর টিউলিপ সিদ্দিক ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন করে আলোচনায় এসেছে। টিউলিপ বিনামূল্যে দুটি ফ্ল্যাট গ্রহণ করেছিলেন বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। এ ঘটনায় লেবার পার্টির মন্ত্রী হিসেবে তার পদত্যাগের দাবি উঠেছে।
অপরদিকে, তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং তার পরিবারের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। ২০১৯ সালের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালার আওতায় তাদের লেনদেন এবং লকার ব্যবহার স্থগিত করা হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারে সরকারের পক্ষ থেকে অভিযান চলছে।
এই ঘটনার মাধ্যমে টিউলিপ সিদ্দিক ও তার পরিবারের দুর্নীতি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বিতর্কিত হয়ে উঠেছে। বিষয়টি বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।