গাজার তীব্র শীতে শিশুর মৃত্যু: এক মায়ের হৃদয়বিদারক গল্প
ছবি: সংগৃহীত
গাজার চলমান হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের মধ্যে পরিস্থিতি দিন দিন আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে শীতের তীব্রতা, যা গাজার শিশুদের জন্য মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিলার বয়স মাত্র তিন সপ্তাহ। গাজায় অবস্থা এতটাই খারাপ যে, শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচার জন্য পর্যাপ্ত কাঁথা-কম্বলও নেই।
একদিন সকালে সিলার মা, নরিমান আল-নাজমেহ, লক্ষ্য করেন তার মেয়ে কোন প্রকার নড়াচড়া করছে না। পরীক্ষা করার পর তিনি দেখেন, শিশুটির মুখ নীল হয়ে গেছে এবং মুখ থেকে রক্ত ঝরছে। সব চেষ্টা সত্ত্বেও, তার ছোট্ট শিশুটিকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
নরিমান তার স্বামী মাহমুদ ফাসিহ এবং দুই ছোট বাচ্চা, রায়ান (চার বছর) এবং নিহাদ (দেড় বছর), নিয়ে দক্ষিণ গাজার সমুদ্র সৈকতের পাশে একটি তাঁবুতে বসবাস করছেন। তারা জানান, গত ১৪ মাসের যুদ্ধে তারা ১০ বার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। নরিমান বলেন, "আমার স্বামী একজন জেলে। আমরা উত্তর গাজা থেকে এসেছি, কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণের ভয়ে কিছুই নিয়ে আসতে পারিনি।" তিনি আরও জানান, "যখন আমি গর্ভবতী ছিলাম, তখন চিন্তা করতাম, কীভাবে আমার বাচ্চার জন্য প্রয়োজনীয় কাপড় জোগাড় করব। তবে এখন, যুদ্ধের কারণে সব কিছু বন্ধ হয়ে গেছে। শীতের তীব্রতা সহ্য করার মতো গরম কাপড় আমাদের কাছে নেই।"
সিলার ছোট্ট জীবন ছিল সীমাহীন কষ্টে ভরা। সে ছিল আল-মাওয়াসি এলাকায়, যেখানে হাজার হাজার মানুষের ভিড় ও দুর্বল অবকাঠামো সমস্যার সাথে ভয়াবহ বন্যার পরিস্থিতি চলছিল। তবে, সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে শীতের তীব্রতা। সিলার বাবা, মাহমুদ ফাসিহ, বলেন, "শীত এতই তীব্র যে, সারা রাত আমরা একে অপরের পাশে কুঁকড়ে থাকি। আমাদের জীবন এখন নরক। যুদ্ধের কারণে আমাদের পরিবারের অনেকেই শহীদ হয়েছেন। আমার প্রিয় সন্তান পৃথিবী থেকে চলে গেছে। এখন আমাদের অবস্থা ভীষণ কষ্টকর।"
বেসামরিক লোকদের নিরাপদ স্থানে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বারবার আল-মাওয়াসি আক্রমণ করেছে, যেখানে হাজার হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে, গাজার শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগে আছেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি মা-বাবা। তারা জানেন না, তাদের সন্তানদের রক্ষা করবে কি ইসরায়েলি হামলা, না কি শীতের কঠোরতা।
গাজার এই হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি, বিশেষ করে শিশুদের প্রতি অত্যাচার, বিশ্ববাসীর কাছে মানবতার ডাক হয়ে উঠেছে।