ইউক্রেন নিয়ে বাইডেনের বাজি!
১৯৮০’ র দশকে ওয়াশিংটন ডিসিতে সোভিয়েত ইউনিয়নের দূতাবাস নির্মাণ ছিল একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। এফবিআই ওই ভবনের নীচে সুড়ঙ্গ করে রাশিয়ানদের কথা শোনার জন্য ওঁত পাতলেও, তা ব্যার্থ হয়, তাদের নিয়োগ দেওয়া এজেন্ট ডুয়েল গেম খেলে, ফলে তা ফাঁস হয়ে যায়।
চলতি বছর আবারও ফিরে এসেছে সেই উত্তেজনা। যদিও চক্রান্ত আগের চেয়ে কম। তারপরও প্রশ্ন জাগে ইউক্রেন নিয়ে কী ভাবছেন বাইডেন। বাইডেনের নেত্রীত্বের দক্ষতা ও তার সরকারের পররাষ্ট্রনীতি কতটা শক্তিশালীভাবে স্বৈরাচারী শাসনের মোকাবেলা করে পশ্চিমা গণতন্ত্রকে ধরে রাখতে পারবে।
একদিকে, ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার সামরিক শক্তি বৃদ্ধি দেখে শঙ্কিত হয়ে ওঠে আমেরিকানরা। আর তখন বাইডেনের বার্তা ছিল 'হ্যান্ডস অফ ইউক্রেন'।
অপরদিকে, মার্কিন দূতাবাসের বাইরে কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীর জড়ো হয়ে ইউক্রেন ইস্যুতে স্লোগান দিতে থাকে। তাদেরে একজন ইহোর সামোকিশ বলেন, 'আমি মনে করি ইউক্রেনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরও প্রাণঘাতী অস্ত্র পাঠানো উচিত। এটি পুতিনের কাছে একটি শক্তিশালী সংকেত পাঠাবে।'
আর গত কয়েক বছর ধরে আমেরিকার কাছ থেকে এমন মিশ্র সংকেত পাচ্ছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট।
আমেরিকা-রাশিয়া ষড়যন্ত্র আরও বেশি জট পাকায় যখন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুতিনের অবাধ প্রশংসা করতে শুরু করেন। পুতিনের প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের অদম্য প্রশংসার ফল মার্কিন নীতিকে জটিল করে তুলেছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট যখন ক্রেমলিনের প্রশংসা করছিলেন এবং ন্যাটোকে অপমান করছিলেন, তখন এফবিআই মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপেরের বিষয় নিয়ে লড়াই করছিল।
ক্ষমতায় আসার পর বাইডেন রাশিয়ার আক্রমনাত্মক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে তার কৌশল 'পূর্বসূরীর থেকে আলাদা'। বাইডেন রাশিয়ার সঙ্গে একটি স্থিতিশীল সম্পর্ক চেয়েছিলেন, যাতে তিনি চীনের কৌশলগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মনোনিবেশ করতে পারেন।
আমেরিকা-রাশিয়া শীতল যুদ্ধ থেকে বাইডেন পিছু হটতে চেয়েও পারননি। পুতিন রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তের কাছে সেনা সমাবেশ ঘটিয়ে এই ঠাণ্ডা যুদ্ধে ঘি ঢাললেন। আর এই পরিস্থিতিতে বাইডেনকে চ্যালেঞ্জ নিতেই হলো। আর তাই ইউরোপকে সঙ্গে নিয়ে এই পরিস্থিতির মোকাবেলায় তৎপর বাইডেন।
বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেন ইস্যুতে ইউরোপের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কূটনৈতিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। আর তাই মিত্রদের একজোট হতে তিনি তার চেনা পথের বাইরে হাঁটছেন। যা বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্র নীতি। কারণ বাইডেন আফগানিস্তান থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর তার মিত্ররা তার ওপর অসন্তষ্ট হয়েছেন। আর আফগানিস্তানে আমেরিকার কৌশলগত পরাজয় রাশিয়াকে আশার আলো জুগিয়েছে। আর তাই হয়তো রাশিয়া মার্কিন শক্তি এবং পররাষ্ট্রনীতির দুর্বলতাকে কাজে লাগাতে চাচ্ছে।
আর ক্রেমলিন ইউক্রেন সীমান্তে যে সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে সেখান থেকে একটুও সরে আসেনি। যদিও বলে আসছে ইউক্রেনে হামলার তার কোন পরিকল্পনা নেই। পুতিনের এই কৌশল ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন করে ভাবাচ্ছে। আর তাই পূর্ব ইউরোপে আরও সেনা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ১ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পেন্টাগনের পক্ষ থেকে সেনা পাঠানোর বিষয়টি জানানো হয়।
পেন্টাগন জানায়, নর্থ ক্যারোলিনার ঘাঁটি থেকে জার্মানি ও পোল্যান্ডে পাঠানো হবে প্রায় দুই হাজার সেনা। আগে থেকে জার্মানিতে থাকা এক হাজার সেনাকে মোতায়েন করা হবে রোমানিয়ায়।
পেন্টাগন মুখপাত্র জন কিরবি জানান, সেনা মোতায়েনের মাধ্যমে পুতিনকে শক্তিশালী বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বিশ্ববাসীর প্রতি বার্তা এটিই যে, ন্যাটো যুক্তরাষ্ট্র এবং আমাদের মিত্রদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি সেনা মোতায়েনকে 'ধ্বংসাত্মক' বলে উল্লেখ করেছে রাশিয়া।
এদিকে শীতকালীন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে চীন যান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেন নিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এ সফর ভিন্ন তাৎপর্য এনে দেয়। চীনকে পাশে পেয়ে গেলেন পুতিন।
এই প্রেক্ষাপটে চীনের আবির্ভব মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য নতুন ভাবনার বিষয়ই বটে।
কেএফ/