৩৩ হাজারে পৌঁছেছে গাজায় নিহতের সংখ্যা

ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে টানা ছয় মাস ধরে চলছে ইসরায়েলি আগ্রাসন। ইসরায়েলের নৃশংস বর্বরোচিত হামলায় অঞ্চলটিতে নিহতের সংখ্যা প্রায় ৩৩ হাজারে পৌঁছেছে। নিহত এসব ফিলিস্তিনিদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই ২৪ হাজারের বেশি।
এছাড়া টানা প্রায় ছয় মাস ধরে চলা এই আগ্রাসনে আহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭৫ হাজার ৫০০। বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ও বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
আল জাজিরা বলছে, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩২ হাজার ৯৭৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একই সময়ে আহত হয়েছেন আরও ৭৫ হাজার ৫৭৭ জন।
অন্যদিকে গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হামলায় ২৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আনাদোলু।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস বলেছে, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকায় ২ হাজার ৯২২টি গণহত্যা চালিয়েছে। আর এর জেরে গাজায় মোট ১৪ হাজার ৫০০ শিশু এবং ৯ হাজার ৫৬০ জন নারী নিহত হয়েছেন। এছাড়া আরও ৭ হাজার মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছেন বা নিখোঁজ রয়েছেন এবং ইসরায়েলি হামলায় ৭৫ হাজার ৫৭৭ জন আহত হয়েছেন।
মিডিয়া অফিস আরও বলেছে, গাজায় ইসরায়েলি হামলার মুখোমুখি হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৭৩ শতাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া গাজায় ১৭ হাজার শিশু তাদের পিতামাতা বা উভয়ের যেকোনও একজন ছাড়াই বসবাস করছে।
গাজার অনাহারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মিডিয়া অফিস বলেছে, অপুষ্টি ও পানিশূন্যতার কারণে গাজায় এখন পর্যন্ত ৩০ জন শিশু প্রাণ হারিয়েছে। এতে আরও বলা হয়, ৪৮৪ জন স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, ১৪০ জন সাংবাদিক এবং ৬৫ জন সিভিল ডিফেন্স কর্মীও ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন।
গুরুতর অসুস্থ এবং বিদেশে চিকিৎসার প্রয়োজন এমন আহতদের সংখ্যা ১১ হাজার এবং ১০ হাজার ক্যান্সার রোগী অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবার কারণে মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছেন।
ইসরায়েলি বাহিনী ৩১০ জন স্বাস্থ্যসেবা কর্মী এবং ১২ জন সাংবাদিককে আটক করেছে এবং গাজা উপত্যকায় ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। গাজায় প্রায় ৭০ হাজার বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং আরও ২ লাখ ৯০ হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় হামলা চালিয়ে ২৯৭টি মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বলেও জানিয়েছে মিডিয়া অফিস। এর মধ্যে ২২৯টি মসজিদ সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে এবং তিনটি গির্জায়ও তারা হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে।
এছাড়া ইসরায়েলি বাহিনী গাজার ১৫৯টি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানকেও লক্ষ্যবস্তু করেছে। এতে ৫৩টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ৩২টি হাসপাতালের পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেছে এবং ১২৬টি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে বলে জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের বিভিন্ন অবৈধ বসতি লক্ষ্য করে হামলা চালায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। ওই হামলায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি প্রাণ হারান।
এরপর ওইদিন থেকেই গাজায় বর্বর হামলা চালানো শুরু করে ইসরায়েলি সেনারা। তাদের হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় প্রায় ৩৩ হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও প্রায় এক লাখ মানুষ।
৭ অক্টোবর ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলিকে হত্যার পাশাপাশি আরও ২৫০ জনকে ধরে গাজায় নিয়ে আসেন হামাসের যোদ্ধারা। যারমধ্যে ১০৫ জনকে গত নভেম্বরে এক সপ্তাহব্যাপী চলা যুদ্ধবিরতিতে ছেড়ে দেয় তারা।
ইসরায়েলের বিশ্বাস হামাসের কাছে এখনো ১৩০ জিম্মি রয়েছে। যারমধ্যে ৩৩ জন ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন।
