মিয়ানমারে সেনাশাসনের বছরপূর্তি
মিয়ানমারে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। ২০২০ সালের নভেম্বরে মিয়ানমারে জাতীয় নির্বাচন হয়। জয় পায় অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে অভিযোগ আনে দেশটির সেনাবাহিনী। তবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলো জানায়, নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
নির্বাচনে কারচুপি হওয়ার অভিযোগ তুলে অভ্যুত্থান করে সামরিক বাহিনী। আটক করা হয় অং সান সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও এনএলডির অন্য জ্যেষ্ঠ নেতাদের। সামরিক বাহিনী এক বছরের জন্য দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে এবং সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের কাছে রাষ্ট্রক্ষমতা হস্তান্তর করে। পরে জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরও বাড়ানো হয়।
মিয়ানমারে শুরু হয় অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, অসহযোগ আন্দোলন। এনএলডির দলীয় কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে নথিপত্র ও কম্পিউটার জব্দ করে নিয়ে যায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা। অং সান সু চির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন ভাঙার অভিযোগ আনে সামরিক জান্তা সরকার। অং সান সু চির বিরুদ্ধে একডজনের মতো মামলা করা হয়। কয়েকটি মামলার রায়ও হয়েছে এর মধ্যে। জন্তার আদালতে চলছে সু চির বিচার। তবে সু চি কোথায় বন্দী থাকবেন সেটা জানানো হয়নি।
ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। ২০০৭ সালের পর সেনাবিরোধী সব চেয়ে বড় বিক্ষোভ শুরু হয় মিয়ানমার জুড়ে। মিয়ানমারের মান্দালয় শহরে ব্যানার হাতে অভ্যুত্থানবিরোধী স্লোগান দিয়ে রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করেন শত শত বিক্ষোভকারী। সেসময় টুইটার ও ইনস্টাগ্রাম বন্ধ করে দেয় জান্তা সরকার। এমনকি ইন্টারনেটও বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে ইন্টারনেট সংযোগ সচল করা হলেও সামাজিক মাধ্যম বন্ধই থাকে।
রাজধানী নেপিডোতে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে সরাসরি গুলি, রাবার বুলেট, জলকামান, ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। এরপর সাধারণ মানুষ ধর্মঘট শুরু করেন। বন্ধ হয়ে যায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। দেশজুড়ে মানুষ রাস্তায় জড়ো হয়ে অভ্যুত্থানবিরোধী স্লোগান দিতে শুরু করেন।
জাতিসংঘে মিয়ানমারের দূত অভ্যুত্থান ঠেকাতে জাতিসংঘকে প্রয়োজনীয় যেকোনো ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। পরদিন বরখাস্ত হন তিনি। এরপর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা জান্তার এক প্রতিনিধির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। সু চির মুক্তি এবং বিক্ষোভে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধের আহ্বান জানান তারা।
এরপর আগস্টে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং। ২০২৩ সালের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করার প্রতিশ্রুত দেন তিনি।
তবে সংকট নিরসনে গৃহীত পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ না হওয়ায় আসিয়ান জোটের দেশগুলোর সম্মেলন থেকে বাদ পড়েন জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং।
এদিকে, গত বছর ডিসেম্বর থেকে বিক্ষোভে উসকানি ও করোনা মোকাবিলাসংক্রান্ত বিধিনিষেধ লঙ্ঘনের দায়ে সু চিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। দুই বছরের জন্য তাকে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। তবে সু চি কোথায় বন্দী থাকবেন সেটা জানানো হয়নি। প্রথমে সু চির সাজা হয়েছিল চার বছরের। পরে সেনাপ্রধান দুই বছরের সাজা মাফ করে দেন।
চলতি বছর জানুয়ারিতে বাড়িতে লাইসেন্সবিহীন ওয়াকিটকি রাখা ও সেসব ব্যবহারের অভিযোগে জান্তা–নিয়ন্ত্রিত এক আদালত সু চিকে আরও চার বছরের কারাদণ্ড দেন। সর্বশেষ গত ১৪ জানুয়ারি ৭৬ বছর বয়সী সু চির বিরুদ্ধে আরও পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। এসব অভিযোগে সব মিলেয়ে সর্বোচ্চ ১৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে সু চির। আর সু চির বিরুদ্ধে করা সবগুলো মামলার বিচারে সু চির ১০৪ বছর পর্যন্ত সাজা হতে পারে।
কেএফ/