বিক্ষোভে উত্তাল দিল্লি, মোদির বাড়ি ঘেরাও কর্মসূচি
ছবি: সংগৃহীত
ভারতে জাতীয় নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে ততই উত্তপ্ত হচ্ছে সে দেশের রাজপথ। ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন দিল্লির জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তিনি এখন কারাগারে। তার অনুপস্থিতিতে দলের হাল ধরেছেন তার স্ত্রী। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও গ্রেপ্তারের গুঞ্জন বাতাসে। সত্যি যদি তাকে গ্রেপ্তার করা হয় তাহলে আরও উত্তপ্ত হবে ভারতের রাজনীতি।
এদিকে আবগারি দুর্নীতিকাণ্ডে বর্তমানে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর হেফাজতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এদিকে তাকে গ্রেপ্তার করার পর থেকেই উত্তপ্ত ভারতের রাজধানী। দফায় দফায় বিক্ষোভ, প্রতিবাদ চলছে। কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারির প্রতিবাদে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবন ঘেরাওয়ের ডাক দিয়েছিল আম আদমি পার্টি। বিক্ষোভ ঠেকাতে প্রস্তুত ছিল পুলিশও।
প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের বাইরে একাধিক স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয় পুলিশের তরফে। গোটা চত্বরে ১৪৪ ধারা জারির পাশাপাশি কোনওরকম মিটিং-মিছিলের উপর জারি ছিল নিষেধাজ্ঞা। নির্দেশ অমান্য করে প্যাটেল চক মেট্রো স্টেশনের কাছে আপ কর্মী সমর্থকদের জমায়েত শুরু হতেই বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে পুলিশের তরফে মাইকে ঘোষণা করা হয়, “এই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। আপনারা এখানে জমায়েত করবেন না। আপনাদের ৫ মিনিট সময় দেওয়া হচ্ছে এলাকা খালি করে দিন।''
তবে পুলিশের নির্দেশকে উড়িয়ে আরও কর্মী-সমর্থক এসে জড়ো হয় ওই এলাকায়।
এর পরই বিক্ষোভকারীদের সরাতে মাঠে নামে পুলিশ। শুরু হয় হাতাহাতি। পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধের মাঝেই আটক করা হয় পাঞ্জাবের মন্ত্রী হরজোৎ সিং বাইন-সহ একাধিক আপ কর্মী-সমর্থককে। অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে মুক্তির দাবি জানানোর পাশাপাশি বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগে আপ নেত্রী রিনা গুপ্তা বলেন, “ আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে ভয় পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাকে ভোটের প্রচার থেকে দূরে রাখতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
এদিকে কেজরিওয়াল জানিয়ে দিয়েছেন জেল থেকেই তিনি রাজ্য চালাবেন। দুদিন আগে জেল থেকেই নিজের প্রথম সরকারি নির্দেশ দিয়েছিলেন কেজরিওয়াল। এবার ফের একবার ইডি হেফাজত থেকেই নিজের দ্বিতীয় সরকারি নির্দেশ দিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। দিল্লির মন্ত্রী সৌরভ ভারদ্বাজ জানালেন, বিনামূল্যে ওষুধ এবং প্যাথলজি পরীক্ষার দ্বিতীয় নির্দেশ দিলেন কেজরিওয়াল।
সৌরভ এদিন বলেন, দিল্লিবাসীর যাতে কোনও ধরনের সমস্যা না হয় সেজন্যেই নিজের কাজ ইডি হেফাজতে থেকেও চালিয়ে যাবেন কেজরিওয়াল। স্বাস্থ্য পোর্টফোলিওর দায়িত্বে থাকা সৌরভ ভারদ্বাজ একটি প্রেস মিটে বলেন, ‘তিনি ভিতরে বা বাইরে যেখানেই হোন না কেন, যখনই কোনও আন্ডার প্রিভিলেজ ব্যক্তি ওষুধ নিতে সরকারি হাসপাতালে যায়, তখনই তার তা পাওয়া উচিত। একজন মধ্যবিত্ত ব্যক্তি ওষুধ কিনতে পারেন, কিন্তু দিল্লির লক্ষাধিক আন্ডার প্রিভিলেজ পরিবার ওষুধের জন্য সম্পূর্ণরূপে সরকারি হাসপাতাল এবং মহল্লা ক্লিনিকের উপর নির্ভরশীল। এই ওষুধগুলির মধ্যে কিছু আজীবন খেতে হয়। মুখ্যমন্ত্রী কিছু মহল্লা ক্লিনিকে বিনামূল্যে পরীক্ষার সুবিধার সমস্যা সম্পর্কে তথ্য পেয়েছেন। তাই তিনি আমাকে নিশ্চিত করতে বলেছেন যে সমস্ত হাসপাতাল এবং মহল্লা ক্লিনিকগুলি যেন বিনামূল্যে পরীক্ষা এবং ওষুধ সরবরাহ করে।
এই বিতর্কের মাঝেই আবগারি দুর্নীতি মামলায় জেলবন্দি অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ উঠেছে। জঙ্গি মুক্তির বিনিময়ে খালিস্তানি নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনের থেকে ১৩৪ কোটি টাকা নিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী! এমনটাই দাবি করে জাতীয় রাজনীতিতে শোরগোল ফেলে দিলেন ‘শিখস ফর জাস্টিস’ প্রধান। পান্নুনের ভিডিওবার্তা প্রকাশ্যে আসার পর রীতিমতো অস্বস্তিতে আম আদমি পার্টি। কেজরিকে বিপাকে ফেলে খালিস্তানি জঙ্গি নেতার অভিযোগ, ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত খলিস্তানি সংগঠনগুলির থেকে মোট ১৬ মিলিয়ন ডলার অর্থসাহায্য পেয়েছে আম আদমি পার্টি। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১৩৩.৫৪ কোটি টাকা। অবশ্য পান্নুনের এহেন দাবি পুরোপুরি খারিজ করা হয়েছে আপের তরফে। তাদের বক্তব্য, আম আদমি পার্টি কখনও দেশবিরোধী কাজ করে না। তবে এই ইস্যুকে হাতিয়ার করে মাঠে নেমে পড়েছে বিজেপি। সব মিলিয়ে সময়টা মোটেই ভালো যাচ্ছে না দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর।