কারাগারেই গর্ভবতী হচ্ছেন নারী বন্দীরা !
ঢাকাপ্রকাশ ফাইল ।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কারাগারগুলোতে নারী বন্দীরা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ছেন এবং কারাগারেই তাদের সন্তানরা জন্ম নিচ্ছে। এমন খবরে গোটা দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে রাজ্যগুলোতে কারাগারের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে বিষয়টি জানতে পারেন আইনজীবী তাপস ভঞ্জ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টকে এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছেন তাপস। তিনি বলেন, ‘রাজ্যের সংশোধনাগারগুলোর (কারাগার) পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গিয়ে যে ছবি উঠে এসেছে সেটা উদ্বেগজনক। সংশোধনাগারে থাকাকালীন নারী বন্দিরা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ছেন। ১৯৬ জন শিশু মায়ের সঙ্গে সংশোধনাগারে রয়েছে।’
কলকাতা হাইকোর্টে এই প্রতিবেদন পেশ করার পর দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছেন প্রধান বিচারপতি টি এস গণনম। বিষয়টি ফৌজদারি মামলার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চে পাঠানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহেই এর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে ২০১৩ সালের জুন মাসে ভারতের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি আর সি লাহোটি সুপ্রিম কোর্টকে একটি চিঠি দিয়ে দেশের কারাগারের করুণ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানিয়েছিলেন।
সে সময় সর্বোচ্চ আদালতকে দেশের কারাগারগুলোতে বন্দিদের মাত্রাতিরিক্ত সংখ্যা, অস্বাভাবিক মৃত্যুসহ সেখানকার বেহাল পরিস্থিতির কথা জানানো হয়েছিল। রাজ্যগুলো যে বন্দিদের প্রতি দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না, সে বিষয়েও উল্লেখ করেছিলেন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি। সে বছর জুলাই মাসে ওই চিঠি ‘জনস্বার্থ রিট পিটিশন’ হিসাবে দায়ের হয়।
কলকাতা হাইকোর্টে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে রাজ্যের বিভিন্ন কারাগারে বন্দিদের সমস্যা ও বেহাল পরিষেবার চিত্র জানানো হয়েছে। আইনজীবী তাপস বলেন, ‘২২ জানুয়ারি জেলা প্রশাসন এবং কারা বিভাগের আইজিসহ আমরা আলিপুর সংশোধনাগার পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। সে সময় এক নারী বন্দিকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় দেখা যায়।’
তিনি জানান, আলিপুর নারী কারাগারে ১৫জন শিশু তাদের মায়ের সঙ্গে রয়েছে, যাদের মধ্যে সাত জন স্কুলে পড়ে এবং আট জন কারাগারেই পড়াশোনা করে। একাধিক নারী কারাগারের মধ্যেই সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। সেখানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভাল নয় এবং তা ক্রমশ আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
কারাগারে বন্দিদের মধ্যে যারা এখন অন্তঃসত্ত্বা বা ইতিমধ্যেই সন্তান জন্ম দিয়েছেন, তারা আগে থেকেই সন্তানসম্ভবা ছিলেন না কি জেলে এসে অন্তঃসত্ত্বা হয়েছেন, সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তাপস বলেন, ‘তাদের মধ্যে কেউ কেউ জেলের কর্মীদের দ্বারা অন্তঃসত্ত্বা হয়েছেন, এমনটা হতেই পারে। সেই কারণে আমি সুপারিশ করেছি, সংশোধনাগারে ঢোকার আগে প্রেগনেন্সি টেস্ট করা হোক। যাতে বোঝা যায়, কী কারণে এমন ঘটনা ঘটছে।’
বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে পেশ করা ওই প্রতিবেদন প্রকাশ্যে আসার পর সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সমাজকর্মী রত্নাবলী রায় বলেন, “আমার কাছে বিষয়টা নিজের শরীরের উপর বন্দি নারীর অধিকারের প্রশ্ন, সন্তান ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতার প্রশ্ন।” তিনি বলেন, ‘এ ধরণের নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে যৌনতা কখনও কখনও একটা সুবিধা আদায়ের উপায়ও হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু সেটাকে আমরা তার স্বাধীন পছন্দ ও সিদ্ধান্ত বলবো কি? বা যে সন্তানের জন্ম হলো, তার শৈশবের সুরক্ষার দায় নেবে কে?’
সমস্যা থেকে রেহাই পেতে কয়েকটি সুপারিশ করেছেন আইনজীবী তাপস। কলকাতা হাইকোর্টে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে, কারাগারে প্রবেশের আগে প্রেগনেন্সি টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হোক। নারী বন্দিরা যেখানে থাকেন সেখানে কারা বিভাগের পুরুষ কর্মীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হোক। মৃত বন্দিদের দেহের ময়না তদন্তের ভিডিও রেকর্ডিং বাধ্যতামূলক করা হোক। এছাড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতির উপর জোর দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।