বাড়ছে লাশের বোঝা, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ১২০০ ছাড়িয়েছে
ছবি সংগৃহিত
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধ ষষ্ঠ দিনে গড়িয়েছে। এই যুদ্ধে উভয় দেশেই প্রায় ২৪ শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এর মধ্যে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১ হাজার ২০০। আহত হয়েছে ৫ হাজার ৬০০। ইসরায়েলেও নিহতের সংখ্যা ১২ শতাধিক। বার্তা সংস্থা এএফপি গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর সকালে ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা শুরু করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। তারা মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে ইসরায়েলের দিকে ৫ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। একই সঙ্গে স্থলপথ, জলপথ ও আকাশপথে দেশটিতে ঢুকে পড়েন হামাস যোদ্ধারা। ইসরায়েলও এমন পরিস্থিতিতে যুদ্ধ ঘোষণা করে হামাসের বিরুদ্ধে। ইসরায়েলের সেই ঘোষণার পর দেশটির বিমানবাহিনী গাজা উপত্যকায় ব্যাপক হামলা চালায়।
এর আগে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী বলেছিল, হামাসের বন্দুকধারীরা এক হাজার ২০০ ইসরায়েলিকে হত্যা করেছে এবং মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের বিভিন্ন স্থানে সিরিজ বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এতে এক ঘণ্টায় কমপক্ষে ৫১ জন ফিলিস্তিনি নিহতে। আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৬০০ জনে।
হতাহতের সংখ্যা বাড়ার কারণে গাজাজুড়ে হাসপাতালগুলো সমস্যায় পড়েছে। জনপদটির বহু এলাকা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। ইসরায়েলের প্রায় বিরতিহীন বিমান ও গোলার হামলা থেকে বাঁচতে অনেক ফিলিস্তিনি গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছে। ফলে হাসপাতালগুলো পরিণত হয়েছে কার্যত শরণার্থীশিবিরে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োআভ গালান্ত বলেছেন, তিনি সেনাদের ওপর থেকে সব বিধি-নিষেধ তুলে নিয়েছেন। তিনি বলেন, গাজা কখনোই আর আগের অবস্থায় ফিরে আসবে না। ইসরায়েলি অবরোধের কারণে জ্বালানির অভাবে গাজার একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার বিকেলে বন্ধ হয়ে গেছে। এতে কার্যত বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে পুরো অঞ্চল।
অন্যদিকে হামাসের ঘাঁটি বলে পরিচিত গাজায় অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। পাশাপাশি এই অভিযানে প্রত্যেক হামাস সদস্যের ‘মৃত্যু পরোয়ানা’ ঘোষণা করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গোষ্ঠীটির সব সদস্যকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিয়েছেন তিনি।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যার দিকে দেওয়া এক ভাষণে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রত্যেক হামাস সদস্যকে মৃত দেখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘প্রত্যেক হামাস সদস্যই (আমার চোখে) মৃত ব্যক্তি বা ডেড ম্যান।’ সাধারণত পশ্চিমা বিশ্বে প্রাচীন আমলে প্রতিপক্ষকে হত্যা করার হুমকি দিতে এই ডেড ম্যান শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হতো।
অন্যদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর তথ্যমতে, ইসরায়েলে কমপক্ষে ১২০০ জন নিহত এবং ২৮০০ জন আহত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্রমাগত ইসরায়েলি বিমান হামলার ফলে জাতিসংঘের হিসেবে গাজায় এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। বিমান হামলা অব্যাহত থাকায় বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।