ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলে লিবিয়ায় ২০ হাজার মৃত্যুর শঙ্কা
ঘূর্ণিঝড় ও এর পরে বন্যায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে লিবিয়ার বন্দরনগরী দারনা। ছবি: সংগৃহিত
পথে পথে মরদেহ। মৃত মানুষ ভেসে আসছে সমুদ্র থেকেও। পচা দেহের গন্ধ আর স্বজন হারানোর আর্তনাদ মিশে ক্রমশ ভারী হচ্ছে লিবিয়ার বাতাস।এই খবর লেখা পর্যন্ত ৫ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর কথা জানা গেছে। তবে নিখোঁজের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা এখনও বলতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। তবে দেশটির আল-বায়দা মেডিকেল কলেজের পরিচালক আব্দুল রহিম মাজিক দাবি করেছেন, মৃতের সংখ্যা ২০ হাজারের ঘরে পৌঁছাবে।
গত রোববার লিবিয়ার উত্তর উপকূলে আঘাত হানে ভয়াবহ এক ঘূর্ণিঝড়। ড্যানিয়েল নামের এ ঘূর্ণিঝড়ের পর দেখা দেয় বন্যা। এতেই তৈরি হয় বিপর্যয়। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এক লাখ বাসিন্দার বন্দরনগরী দারনা। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, দারনা শহরে প্রাণহানি হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
লিবিয়ায় ২০ হাজার মৃত্যুর শঙ্কা, সমুদ্র থেকে ভেসে আসছে একের পর এক মৃতদেহ।সমুদ্রের তীরে ভেসে আসছে একের পর এক লাশ। গত রোববার লিবিয়ার দেরনা শহরে প্রলয়ংকরী একটি ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে সমুদ্রে ভেসে গিয়েছিলেন এই মানুষগুলো। এখন পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও লিবিয়ার কর্তৃপক্ষ বলছে আরও ১০ হাজারের বেশি মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছে। তবে দেশটির আল-বায়দা মেডিকেল কলেজের পরিচালক আব্দুল রহিম মাজিক দাবি করেছেন, মৃতের সংখ্যা ২০ হাজারের ঘরে পৌঁছাবে।
বুধবার রাতে দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেরনা শহরের রাস্তা-ঘাটে এখনো মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। জলোচ্ছ্বাস ডেনিয়েলের আঘাতে দেরনা এলাকার অসংখ্য পরিবারের সব সদস্যই মারা গেছেন। বেশ কিছু বিচ্ছিন্ন গ্রামীণ জনপদ পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় কত সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে তা নিরূপণ করা অত্যন্ত কঠিন হবে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ।
কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে যে ধারণা করেছিলেন, তার চেয়ে ক্ষয়ক্ষতি যে অনেক বেশি হয়েছে, দিন যতই যাচ্ছে ধীরে ধীরে তা আরও স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। জনবহুল বন্দরনগরী দারনাসহ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। গৃহহীন হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পরিবার।
দেশটির পূর্বাঞ্চলে রয়েছে পৃথক প্রশাসন। সেই প্রশাসনের বেসরকারি বিমান চলাচলবিষয়ক মন্ত্রী হিশেম আবু কিওয়াত। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘সাগর থেকে একের পর এক লাশ ভেসে আসছে। আমাদের হিসাবে ৫ হাজার ৩০০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এ সংখ্যা বেড়ে আরও অনেক বেশি এমনকি দ্বিগুণ হতে পারে। কারণ, এখনো হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ।’ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন আবু কিওয়াত। তিনি বলেন, এ ধরনের একটি বিপর্যয় মোকাবিলা করার মতো অভিজ্ঞতা লিবিয়ার নেই।
এক পরিবারেই ৩০ জনের মৃত্যু :
দেরনা শহরের বাসিন্দা মুস্তাফা সালিম। তিনি জানান, তার পরিবারের ৩০ জন সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। মুস্তাফা সালিম বলেন, ‘সেই রাতে সবাই ঘুমাচ্ছিল। এমন বিপর্যয় যে আসবে, এর জন্য প্রস্তুত ছিল না কেউ। আমার পরিবারেরই ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে।’
দেরনা শহরে জন্ম ওয়ালিদ আবদুলাতির। এখন তিনি ত্রিপোলিতে। ওয়ালিদ জানতে পেরেছেন, দেরনায় তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য হয় মারা গেছেন, নয়তো নিখোঁজ। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি পরিবার ১০ জন পর্যন্ত স্বজন হারিয়েছে।’
লিবিয়ায় এই ঘূর্ণিঝড় ও বন্যাকে ‘নজিরবিহীন বিপর্যয়’ বলছেন আল-জাজিরার মালিক ত্রেইনা। তিনি জানান, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে দারনা। সৈকতে লাশ ভেসে আসতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এসব লাশের বর্তমান অবস্থা এমনই যে এখন আর তা উদ্ধার করার মতো অবস্থায় নেই।
৬ বাংলাদেশি নিহত :
লিবিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার তাণ্ডবে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে বসবাসরত ছয়জন বাংলাদেশি নাগরিক মৃত্যুবরণ করেছে। তাদের মধ্য থেকে চারজনের প্রাথমিক পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন রাজবাড়ী জেলার শাহীন ও সুজন এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার মামুন ও শিহাব। দূতাবাসের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত অবশিষ্ট দুজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া দেরনা শহরে বসবাসরত আরও কিছু সংখ্যক বাংলাদেশি নিখোঁজ থাকার আশঙ্কা করা যাচ্ছে।