উত্তরপ্রদেশে প্রিয়াঙ্কার প্রার্থী উন্নাওয়ের নির্যাতিতার মা
ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে বিধানসভা ভোটে প্রথম দফার প্রার্থীতালিকা প্রকাশ করেছে কংগ্রেস। ১২৫ জন প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন ২০১৭ সালের উন্নাওয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার কিশোরীর মা। ওই ঘটনার মূল অপরাধী তৎকালীন বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিং সেঙ্গারের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। ধর্ষণের শিকার কিশোরীর বাবাকে খুনের অভিযোগও প্রমাণিত হয়েছে সেঙ্গারের বিরুদ্ধে।
সাজা ঘোষণার পর কুলদীপকে তার দল বিজেপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল; কিন্তু তার স্ত্রী সঙ্গীতা এখনও কানপুর সংলগ্ন উন্নাও জেলার প্রভাবশালী বিজেপি নেত্রী। এই প্রেক্ষিতে কংগ্রেস নির্যাতিতার মাকে নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার পদক্ষেপ রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের ১২৫ জনের প্রথম দফার প্রার্থীতালিকায় ৫০ জন নারী এবং ৪০ জন তরুণ প্রার্থী রয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার এ খবর জানিয়েছে।
উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্গা গান্ধী আগেই জানিয়েছিলেন, বিধানসভা ভোটে প্রার্থীতালিকায় ৪০ শতাংশ নারী থাকবেন। বুধবার (১২ জানুয়ারি) প্রথম দফার প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছি। কংগ্রেস প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সালমান খুরশিদের স্ত্রী লুইস।’
চাকরি দেওয়ার নাম করে বাড়িতে ডেকে ২০১৭ সালের ৪ জুন ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করেছিলেন তৎকালীন বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গার। পরে তার শাগরেদরা ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় পুলিশে অভিযোগ জানান ওই কিশোরী; কিন্তু পুলিশ কুলদীপ সেঙ্গারের নামে অভিযোগ নিতে রাজি হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে চিঠি লেখেন নির্যাতিতা।
বছর পেরিয়ে গেলেও কুলদীপের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি যোগী সরকার। বরং কুলদীপের লোকজন নির্যাতিতার পরিবারকে নানাভাবে হেনস্থা করতে শুরু করে। উন্নাও আদালতে মামলার শুনানি চলাকালীন নির্যাতিতার বাবাকে মারধর করেন কুলদীপের ভাই অতুল ও তার লোকজন। সেই নিয়ে অভিযোগ জানাতে গেলে বেআইনি অস্ত্র রাখার অভিযোগে নির্যাতিতার বাবাকেই গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এমন পরিস্থিতিতে ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল যোগী আদিত্যনাথের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন নির্যাতিতা ও তার পরিবার। সেখানে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন নির্যাতিতা। এরপর তার বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৯ এপ্রিল পুলিশি হেফাজতে নির্যাতিতার বাবার মৃত্যু হয়।
ময়নাতদন্তের রিপোর্টে তার রক্তে বিষক্রিয়া এবং পায়ুপথে ফুটো হয়ে যাওয়ার উল্লেখ ছিল। তার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন ছিল বলেও জানা যায়। পরে প্রমাণিত হয়, কুলদীপই দুই পুলিশ কর্মকর্তার সাহায্যে নির্যাতিতার বাবার উপর নির্যাতন চালিয়েছিলেন।
শেষ পর্যন্ত প্রবল জনরোষের মুখে এই মামলা সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ধর্ষণকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত হয়ে যাবজ্জীবন সাজা পান কুলদীপ। ২০২০ সালের এপ্রিলে নির্যাতিতার বাবার উপর হামলা এবং খুনের অপরাধে কুলদীপ এবং অতুলের ৭ বছর জেলের সাজা হয়।
উন্নাওকাণ্ডের সময় নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ওই নির্যাতিতার মাকে মনোনয়ন দিয়েছে কংগ্রেস। উল্লেখ্য, এবারের উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর উপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এসএ/