গুজরাটে বিজেপি, হিমাচল কংগ্রেসের
ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে একটা কথা খুব চালু রয়েছে। তা হলো, সদ্য তৈরি হওয়া সরকার ফেলে দেওয়ার ব্যাপারে অমিত শাহ কিংবদন্তির মতো। আর এ ব্যাপারে সবচেয়ে ভুক্তভোগী কংগ্রেস। তাই ভারতের অঙ্গরাজ্য হিমাচল প্রদেশে যখন সরকার গড়ার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, তখন বৃহস্পতিবার দুপুরে অন্য পরিকল্পনা নিল কংগ্রেস।
কংগ্রেস ঠিক করেছে, হিমাচলের জয়ী বিধায়কদের চণ্ডীগড় হয়ে ছত্তীসগড়ে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে ক্যাম্প করে রাখা হবে তাদের। তারপর শপথ গ্রহণের দিন ঠিক হলে সেদিন সোজা শিমলায় ফের নিয়ে যাওয়া হবে বিধায়কদের।
বিশ্বকাপের আবহে অনেকে বলছেন, এসব কৌশলে অমিত শাহ খানিকটা কিলিয়ান এমবাপের মতো। এমন একটা স্প্রিন্ট টেনে দেবেন, বুঝে ওঠার আগেই অঘটন ঘটে যাবে। সেসব ভেবেই বোধহয় ডিফেন্সিভ স্ক্রিন ব্যবহার করতে চাইছে আকবর রোড। হিমাচলের মোট আসন ৬৮। এই রাজ্যে কংগ্রেস এগিয়ে ৪৯টিতে। বিজেপি এগিয়ে ২৬টিতে। এদিন সকাল থেকে অল্প আসনে এগিয়ে-পিছিয়ে যাওয়া চলছিল কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে। কখনো এমনও দেখা যায়, দু’দল সমান সংখ্যক আসনে এগিয়ে রয়েছে। তবে ১২টার কিছুটা আগে সেই ব্যবধানটা বেশ কিছুটা বাড়িয়ে নেয় কংগ্রেস।
প্রসঙ্গত, হিমাচল প্রদেশ বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডার নিজের রাজ্য। ওদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাটে হইহই করে জিতছে বিজেপি। কিন্তু সভাপতির রাজ্য যদি হাতছাড়া হয়, তাহলে তা তার কাছেও খুব একটা সম্মানজনক হবে না। সেদিক থেকে বিজেপি শেষ পর্যন্ত হিমাচল দখলে রাখতে চাইতে পারে বলে মনে করছে কংগ্রেস। সে কারণেই ভূপেশ বাঘেলের নিরাপদ আশ্রয়ে বিধায়কদের রাখার পরিকল্পনা নিল সাবেক দল।
এক-দু’বার নয়, সাত-সাত বার। এই নিয়ে পর পর সাত বার গুজরাটে জয় পেল বিজেপি। এমন নজির গোটা দেশে নেই, একমাত্র বাংলা ছাড়া। এ রাজ্যে ১৯৭৭ সালে সিপিএম নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকার প্রথমবার ক্ষমতায় আসে। তারপর টানা সাতবার। ২০০৬ সাল পর্যন্ত। গুজরাটেও জনতার রায় পরপর সাতবার বিজেপির পক্ষেই গেল। ১৯৯৫ সালে প্রথমবার সে রাজ্যে এককভাবে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। ২০২২ সালের ভোটের ফলও জানিয়ে দিল, এবারও তারা সরকার গড়বে। বাংলা ছাড়া আর কোথাও এমনটা ঘটেনি। তবে বিজেপির হাতে পরপর সাতবার যাওয়া গুজরাট কিন্তু বাংলায় বামফ্রন্টের নজির ছুঁয়েও ছুঁতে পারল না। সামান্য হলেও দূরত্ব রয়ে গেল।
পশ্চিমবঙ্গে ১৯৭৭ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল সিপিএম নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট। বাংলায় বামেদের সেই বিজয়কেতন উড়েছিল সব মিলিয়ে ৩৪ বছর। পরপর সাতবার জিতে তারা ৩৪ বছর রাজ্যের ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু গুজরাটে সমান সংখ্যক জয় পেলেও বিজেপি কিন্তু ৩৪ বছর সে রাজ্যের ক্ষমতায় থাকবে না। সব কিছু ঠিক থাকলে, ২০২৭ সালের ডিসেম্বরে যখন গেরুয়া শিবির আবার সে রাজ্যের বিধানসভা ভোটে অংশ নেবে, তখন তাদের সরকারের বয়স হবে ৩২ বছরের একটু বেশি।
১৯৯৫ সালে গুজরাটে বিজেপি এককভাবে প্রথমবার সরকার গড়লেও, ১৯৯৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৯৮ সালের ৪ মার্চ পর্যন্ত তাদের সরকারের বাইরে থাকতে হয়েছিল। প্রায় দেড় বছর সরকারের বাইরে থাকায় সাতবারের বিজেপি-পরিচালিত সরকারের বয়স শেষ পর্যন্ত হতে পারে ৩২ বছর। তাই সমসংখ্যক বার জয় পেয়েও বামেদের রেকর্ড ছোঁয়া হবে না বিজেপির।
এসএন