পেরুর ইতিহাসে প্রথম নারী রাষ্ট্রপতি
পেরুর উপ-রাষ্ট্রপতি দিনা বোলোয়ার্তে গতকাল বুধবার রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন। তিনি দেশের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হয়েছেন।
গতকাল একটি নাটকীয় দিনের পর তিনি দেশের ক্ষমতায় এসেছেন। দিনের শুরুতে সাবেক রাষ্ট্রপতি পেদ্রো কাস্তিয়ো বলেছিলেন, কংগ্রেসকে একটি ‘বিরল জরুরি সরকার’ মাধ্যমে পুনঃস্থাপন করবেন। তবে আইন প্রণেতারা তার এই উদ্যোগকে উপেক্ষা করে গিয়েছেন। এরপর তারা কংগ্রেসে একটি জরুরি সভায় মিলিত হয়েছেন। প্রেসিডেন্টকে অভিসংশিত করেছেন। তাকে আটক করা হয়েছে এবং তিনি বিদ্রোহের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, তখন তিনি রাজধানীতে মার্কিন দূতাবাসের দিকে যাচ্ছিলেন।
তার স্থলাভিষিক্ত দিনা বোলোয়ার্তেও একজন আইন প্রণেতা এবং সংসদ সদস্য। তিনি তার উপ-রাষ্ট্রপতি। তার বয়স ৬০ বছর।
নতুন রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন, তিনি ২০১৬ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত সরকার প্রধান থাকবেন। কেননা, তখন পেদ্রো কাস্তিয়োর মেয়াদকাল শেষ হবে। রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে শপথের পর তিনি রাজনৈতিক সংঘাতে বিরতি দেবার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন, যেন যে সংকটে তার দেশ কবলিত হয়েছে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।
তিনি আরও বলেছেন, ‘আমি একটি জায়গার জন্য বলছি, যেখানে আমরা সময়গুলো পাব, সেই সময়গুলো চাইছি দেশকে উদ্ধারের জন্য।’
বুধবারের এই একের পর এক নাটকীয় ঘটনাবলীর শুরু হয়েছে যখন জাতীয় টেলিভিশনের ভাষণে প্রেসিডেন্ট পেদ্রো কাস্তিয়ো জাতিকে জানালেন যে, তিনি দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করছেন। বিরোধীদল নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসকে ভেঙে দিচ্ছেন।
এরপর পুরো দেশ ধাক্কা খেল এবং আন্দোলন শুরু হলো। কয়েকজন মন্ত্রী প্রতিবাদে পদত্যাগ করলেন এবং তাকে প্রতিরোধে নামলেন। বিদেশেও সমালোচনা এবং প্রতিবাদ শুরু হলো।
সাংবিধানিক আদালতের প্রধান তাকে বেআইনি বা জবরদস্তিমূলকভাবে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের দায়ে অভিযুক্ত করল।
মার্কিন দূতাবাস তার সঙ্গে শক্তভাবে যুক্তি দেখালো যে, তাকে তার সিদ্ধান্তের বিপরীত অবস্থানে আসতে হবে। পেরুর পুলিশ বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনী একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করল। সেখানে জানালেন যে, তারা সাংবিধানিক নিদের্শকে মান্য করছেন।
প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসে আইন প্রণেতারা তারা তার বিপক্ষে অভিসংশনের মাত্র এক ঘন্টা আগে তিনি সংসদ ভেঙে দিলেন। এই নিয়ে ২০২১ সালের জুলাই মাসে তিনি ক্ষমতায় আসার পর তৃতীয়বারের মতো কংগ্রেসকে ভেঙে দিয়েছেন।
তিনি তার টেলিভিশন ভাষণে বলেছেন, ‘আমার দেশের প্রধানের মেয়াদকালীন সময়ের মধ্যে নাগরিকদের প্রয়োজনগুলোতে সাড়া দেবার জন্য এবং পেরুকে শ্বাস নিতে দেওয়ার জন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, একটি ব্যতিক্রমী সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করব। যার লক্ষ্য হবে আইন ও গণতন্ত্রের শাসন আবার প্রচলন করা।’
তিনি তার ভাষণে আরও বলেছেন, ‘একটি নতুন কংগ্রেস করবেন তিনি, যাদের একটি নতুন সংবিধানের খসড়া তৈরি করার ক্ষমতা থাকবে।’ তিনি অঙ্গীকার করলেন, ‘এজন্য নয় মাসের বেশি সময় নেওয়া হবে না।’
তবে কংগ্রেস তার বিরোধী দলগুলো নিয়ন্ত্রিত, তাদের সদস্যরা একটি জরুরি সেশনের ডাক দিলেন এবং যে ইমপিচমেন্ট বা অভিসংশনকে প্রেসিডেন্ট প্রতিরোধ করতে চেষ্টা করছিলেন, সেটি সম্পন্ন করে তাকে অভিসংশিত করলেন।
পেরুর জাতীয় সংসদে প্রেসিডেন্ট পেদ্রো কাস্তিয়োকে সরানোর পক্ষে ১০১ ভোট পড়লো। মোটে ছয়টি তার পক্ষে গেল এবং ১০ জন ভোটদানে বিরত থাকলেন। এরপর দ্রুত তাকে পুলিশ ঘিরে ফেলল। পুলিশের দেওয়া টুইটার অ্যাকাউন্টের ছবিগুলোতে জানা গেল। তবে দ্রুতই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেগুলো ডিলিট করে দিল। ছবিগুলোতে তাকে বসে থাকতে দেখা গেল, তিনি বেশ নিরুদ্বেগ রয়েছেন এবং অন্যদের সঙ্গে আলোচনারত অবস্থায়ও দেখা গেল।
এরপর ফুটেজগুলো প্রকাশিত হলো। সেখানে অভিসংশকদের সঙ্গে কাগজপত্রগুলোতে তিনি স্বাক্ষর করছেন। দেরিতে তাকে আটক করা হলো এবং সাংবিধানিক নির্দেশ প্রদানের ক্ষমতা ভাঙার দায়ে অভিযুক্ত হলেন।
পেরু রাজনীতিতে রকেটের মতো উত্তেজক ও পরিবর্তনের কাল অতিক্রম করছে। এই সময়কালে কয়েকজন প্রেসিডেন্টকে তাদের রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে সরে যেতে বাধ্য করা হলো। ২০২০ সালে পাঁচ দিনের মধ্যে পেরুতে তিনজন প্রেসিডেন্ট হয়েছেন।
সর্বশেষ রাষ্ট্রপতি সম্প্রতি দুর্নীতির অভিযোগগুলোর বিপক্ষে লড়ছিলেন। তিনি বলেছেন, এই অভিযোগগুলো তাকে বহিষ্কারের অংশ।
ওএফএস/