নোটবন্দীর দেড় বছর আগেই মোদি সরকার ছাপে ৫০০ টাকার নোট!
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার অর্থাৎ নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে তথ্য জানার অধিকার আইনে এক ভয়াবহ দুর্নীতির কথা ফাঁস হয়েছে। এই দুর্নীতির অভিযোগ আগেই করেছিল দেশের বিরোধী দলগুলো, বিশেষ করে কংগ্রেস। মুম্বাইয়ে বসবাসকারী বাঙালি মনোরঞ্জন রায়ের তথ্য জানার অধিকার আইনে একটি আবেদনের ভিত্তিতে প্রকাশ্যে এসেছে ভয়াবহ এই দুর্নীতির খবর।
ভারতের নোটবন্দী হওয়ার দেড় বছর আগেই গোপনে ৫০০ টাকার নোট ছাপা শুরু হয়ে গিয়েছিল। ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৬ এর ডিসেম্বর। এই দেড় বছরে সাড়ে ৩৭ কোটি নতুন ডিজাইন এর ৫০০ টাকার নোট ছাপা হয়েছিল। আর চাঞ্চল্যকর এই তথ্য দিয়েছে খোদ সরকারি নোট ছাপাখানা।
এই একটি তথ্যই যাবতীয় হিসাব গন্ডগোল করে দিয়েছে। কারণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নোট বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর, রাত ৮টায়। তাই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে তার আগেই কীভাবে নতুন ৫০০ টাকার নোট ছাপা শুরু হলো? তার থেকেও বড় প্রশ্ন, রিজার্ভ ব্যাংকের গর্ভনর হওয়ার আগেই কীভাবে নতুন ডিজাইনের ৫০০ টাকার নোটে চলে এলো উর্জিত প্যাটেলের সই?
তথ্য জানার অধিকার আইনের আওতায় এই চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে এসেছে মুম্বাইয়ে বসবাসরত আরটিআই অ্যাক্টিভিস্ট মনোরঞ্জন রায়ের। আরটিআইয়ের জবাবে এই তথ্য জানিয়েছে নাসিকে অবস্থিত কেন্দ্রীয় ছাপাখানা ‘কারেন্সি নোট প্রেস’। আর একে অস্ত্র করেই তিনি মোদি সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টে।
কেন্দ্র কয়েকদিন আগেই সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে নোট বাতিলের আলোচনা শুরু হয়েছিল। এই আলোচনার ভিত্তিতে আগামী বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) শীর্ষ আদালতে পরবর্তী শুনানি। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে আলোচনা শুরু হলে নোট বাতিলের ১৭ মাস আগে নতুন নোট ছাপা শুরুর যুক্তি কী?
আবেদনকারী মনোরঞ্জন রায়কে কারেন্সি নোট প্রেসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মণীশ শঙ্কর লিখিতভাবে জানিয়েছেন, ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নতুন ডিজাইনের ৫০০ টাকার নোট ছাপা হয়েছে ৩৭৫.৪৫০ মিলিয়ন, অর্থাৎ ৩৭ কোটি ৫৪ লাখ ৫০ হাজার। এর মধ্যে রিজার্ভ ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে ৩৪৫ মিলিয়ন, অর্থাৎ ৩৪ কোটি ৫০ লাখ। আবেদনকারী এই তথ্য কবে জেনেছিলেন? ২০১৭ সালের ৭ এপ্রিল। তাহলে এখন এই হিসাব চর্চার ভরকেন্দ্র কেন? কারণ সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রের হলফনামা। সর্বোচ্চ আদালতে মোদি সরকারের দেওয়া ১৬ পাতার জবাবের সঙ্গে আরটিআইয়ের তথ্যের ফারাক প্রকাশ্যে এসেছে। ২০১৬ সালে দায়ের করা মামলা এখন নতুন করে উঠেছে শীর্ষ আদালতে। কেন্দ্র দাবি করছে, মামলার গুরুত্ব নেই। সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য তা মানতে নারাজ। তাই ৫ বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চ বসিয়ে ফের শুরু হয়েছে শুনানি।
সেই মামলাতেই নিজেকে যুক্ত করছেন মনোরঞ্জন বাবু। তার অভিযোগ, মোদি সরকার আদালতকে বিভ্রান্ত করছে। মিথ্যা বলছে। আমার হাতে রয়েছে সরকারি ছাপাখানার তথ্য। তাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, কবে থেকে ছাপা হচ্ছে নতুন ডিজাইনের ৫০০ টাকার নোট।
প্রবাসী এই বাঙালি আরটিআই অ্যাক্টিভিস্ট বলেন, ‘রঘুরাম রাজন আরবিআই গভর্নর থাকার সময় নতুন ডিজাইনের কোনো ৫০০ টাকার নোট ছাপা হয়নি। ছাপা হয়েছে উর্জিত প্যাটেলের সময়ে। অথচ আরবিআই গভর্নর হিসেবে উর্জিত প্যাটেল দায়িত্বই নিয়েছেন ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। তাহলে? দেড় বছর আগে থেকে কীভাবে ছাপা হলো নতুন ডিজাইনের ৫০০ টাকার নোট? সুপ্রিম কোর্টে এই মামলায় যুক্ত হতে চেয়ে ইতোমধ্যেই প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়েছি। এবার অ্যাপ্লিকেশন জমা করছি।’
এসজি