পানিতে মিলিয়ে যাবে ডেসমন্ড টুটুর মরদেহ
দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ বিরোধী নেতা নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটুকে পরিবেশ বান্ধব উপায়ে সমাহিত করা হবে। বিশেষ পদ্মতিতে তার মরদেহ পানিতে মিলিয়ে দেওয়া হবে।
৯০ বছর বয়সে রবিবার (২৬ ডিসেম্বর) মারা যান আফ্রিকার আশাবদী কন্ঠস্বর ডেসমন্ড টুটু। রাষ্ট্রিয় মর্যাদায় তার মরদেহ বর্তমানে কেপটাউনের সেন্ট জর্জ ক্যাথেড্রালে রাখা আছে। সেখানে হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন তাকে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসছেন। খবর বিবিসির।
আশা করা যাচ্ছে চলতি সপ্তাহের শেষেই ডেসমন্ড টুটুকে সমাহিত করা হবে। তবে তার শেষকৃত্য একান্তই পারিবারিকভাবে নাকি রাষ্ট্রিয়ভাবে করা হবে সে বিষয়ে তার পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোন সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।
আর্চবিশপ টুটু আইপি ট্রাস্ট এবং ডেসমন্ড এবং লেহ টুটু লিগ্যাসি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, 'তার শেষকৃত্যে খুব বেশি ব্যায় করা হবে না। এমনকি তার কফিনটিও হবে সবচেয়ে সস্তা।'
আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু দেহভস্ম সেন্ট জর্জ ক্যাথেড্রালের পালপিটের পিছনে দাফন করা হবে। এই গির্জাতেই তিনি ৩৫ বছর আর্চবিশপ হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন।
যে পদ্ধতিতে ডেসমন্ড টুটুর মরদেহ ভষ্মে পরিণত করা হবে: মরদেহ ছাইতে পরিণত করতে আগুন ব্যবহার করা হলেও টুটুর মরদেহ অ্যাকুয়ামেশন পদ্ধতিতে ছাইতে পরিণত করা হবে। অ্যাকুয়ামেশন পদ্ধতিতে মরদেহ ছাইতে পরিণত করতে পানি ব্যবহার করা হয়। টুটুর শেষকৃত্যে পরিবেশ বান্ধব উদাহরণ রাখা হচ্ছে। আগুনে পোড়ালো কার্বন নিঃস্বরণ হবে, তাই তার মরদেহ ছাইতে পরিনত করা হবে পানির মাধ্যমে যে পদ্মতিটিকে বলা হয় 'অ্যালকালাইন হাইড্রোলিসিস'।
অ্যালকালাইন হাইড্রোলিসিস পদ্মতিতে কার্বন নিঃস্বরণ ৯০ শতাংশ কম হয়। শরীর পানিতে পূর্ণ করা হয়। এরপর পটাশিয়াম হাইড্রোঅক্সাইডের সঙ্গে পানি মিলিয়ে ১৫৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৩০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে মরদেহ ছাইতে পরিণত করা হবে। আর ও প্রক্রিয়ায় সময় লাগবে ৯০ মিনিট।
এ প্রক্রিয়ায় শুধু শরীরের মাংস ছাইতে পরিণত হবে। পরে হাড়গুলোকে ১২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় শুকিয়ে মেশিনের সাহায্যে হাড়গুলো গুড়ো করে পাউডারে পরিণত করা হবে। হাড় গুঁড়ো করতে ক্রিমুলেটর মেশিন ব্যবহার করা হবে। এসব প্রক্রিয়া শেষে মৃত্যের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার দেহভষ্ম সমাহিত করা হবে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ বিরোধী শাসনের অবসানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু ৯০ বছর বয়সে রবিবার (২৬ ডিসেম্বর) মারা যান। তার মৃত্যু দক্ষিণ আফ্রিকার আশাবদী কন্ঠস্বর স্তব্ধ হলো। বিশ্ব তাকে চেনে আশাবাদ, আর তার সেই চিরচেনা হাসির জন্য।
প্রস্টেট ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের পরে কেপটাউনে তার মৃত্যু হয়। ১৯৯০ দশকের শেষের দিকে টুটুর প্রোস্টেট ক্যানসার ধরা পড়ে। গত কয়েক বছরে তাকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।
দক্ষিণ আফ্রিকার ডেসমন্ড টুটু একজন আর্চবিশপ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। যিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। বর্ণবাদ-পরবর্তী আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) শাসকদের দরিদ্র কৃষ্ণাঙ্গ মানুষকে সাহায্যে ব্যর্থ হওয়ার জন্য সমালোচনা করতে ছাড়েননি টুটু।
বর্ণবাদী শাসনের অবসান ঘটাতে দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষের সংগ্রামে তিনি যে অবদান রাখেন, সেজন্য তাকে ১৯৮৪ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়। ১৯৯৯ সালে সিডনী শান্তি পুরস্কারসহ ২০০৭ সালে গান্ধী শান্তি পুরস্কার লাভ করেন তিনি।
ডেসমন্ড টুটু দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদী শাসনবিরোধী সংগ্রামের প্রধান নায়ক নেলসন মান্ডেলার সমসাময়িক। ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকায় সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গরা গাত্রবর্ণের ভিত্তিতে মানুষকে আলাদা করে যে বৈষম্যমূলক বর্ণবাদী শাসন চালিয়েছিল, তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে তিনি ছিলেন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক শক্তি। ম্যান্ডেলা কারাগারে থাকাকালে তার আন্দোলন এগিয়ে নেন টুটুসহ অন্যরা।
ডেসমন্ড টুটু ১৯৩১ সালের ৭ অক্টোবর ট্রান্সভাল সোনার খনির শহর ক্লার্কসডর্পে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা জাকারায়া ছিলেন শিক্ষক এবং মা আলেটা ছিলেন গৃহিনী। তিনি প্রাথমিকভাবে তার বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের জন্য স্কুলে পড়ালেখার ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শিক্ষকতা ছেড়ে দেন।
টুটু বিশপ ট্রেভর হাডলস্টন এবং অন্য বর্ণবাদবিরোধী শ্বেতাঙ্গ পাদরিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। ১৯৬১ সালে একজন গির্জার যাজক নিযুক্ত হন। ১৯৭৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ অ্যাংলিকান ডিন নির্বাচিত হন।
কেএফ/