কোত্থেকে কোথায় অর্পিতা
মধ্যবিত্ত বাড়ির মেয়ের দু’ চোখ ভরা উচ্চাকাঙ্ক্ষা৷ সেই উচ্চাকাঙক্ষাই অতীতের সাদামাটা অর্পিতাকে করে তুলেছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ। বেলঘরিয়ার সাধারণ সেই মেয়ের নাম আজ রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির অন্যতম ভরকেন্দ্র । তাকে ঘিরে থাকা বিনোদন দুনিয়ার রোশনাই ম্লান হয়ে গিয়েছে দুর্নীতির কালো ছায়ায়।
বেলঘরিয়ার অর্পিতা মডেলিং দুনিয়ায় আসা যাওয়া করতে শুরু করেন ২০০৪-০৫ সাল নাগাদ। পরিচিতি বাড়তে থাকে বিনোদন দুনিয়ার লোকজনের সঙ্গে। ক্রমে আসতে শুরু করে ছবিতে অভিনয়ের টুকটাক সুযোগ। বাংলার পাশাপাশি সেখানে ছিল ওড়িয়া ছবিও। কিন্তু অর্পিতার মন এতে ভরত না। তাঁর ঘনিষ্ঠ বৃত্তের কথায়, অর্পিতা চাইতেন বড় বাজেটের ছবির নায়িকা হয়ে উঠতে। অর্পিতার অপেক্ষার অবসান হতে সময় লাগেনি। প্রযোজক গৌতম সাহার ছবি ‘হৃদয়ে লেখো নাম’-এ তিনি অভিনয়ের সুযোগ পেলেন। এ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন মনিকা বেদিও।
সিনেমার নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখা অর্পিতাকে ভোলেননি গৌতম। তিনি বলেছেন ‘‘অর্পিতা ছিলেন খুব সাহসী ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী।’’ তিনি যে নায়িকা হতে এসেছেন, এ কথা জানাতে দ্বিধা ছিল না অর্পিতার৷ তবে সৌন্দর্য থাকলেও অর্পিতার অভিনয়ে খামতি ছিল, মত গৌতমের। তবে তাও তিনি অভিনয়ের সুযোগ দিয়েছিলেন৷ বললেন, ‘‘আমরা ওকে অভিনয়ের সুযোগ দিয়েছিলাম। ছবি মুক্তি পেয়েছিল ২০১১ সালে। এই ছবি ওকে তারকার পরিচিতি দেয়। তবে ২০১২ থেকে অর্পিতার মধ্যে একটা পরিবর্তন খেয়াল করেছিলাম আমরা। এই সময় থেকেই অর্পিতা প্রায়ই বড় বড় পার্টিতে যেতে শুরু করে।’’
একবার পরিচিত পেয়ে যেতেই অর্পিতা আর যোগাযোগ রাখেননি। আক্ষেপ গৌতমের। তবে অতীতেও ছিল চাপা অসন্তোষ। অর্পিতা মানতে পারেননি তাঁর প্রথম ছবি পরিচিত হবে ‘মনিকা বেদির কামব্যাক মুভি’ বলে। ক্ষুব্ধ অর্পিতা ছিলেন না ছবির প্রেমিয়ারেও। জানালেন গৌতম।
‘‘আমরা অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। যে মুহূর্তে অর্পিতা বুঝল যে ওঁকে অনেকে চিনতে পারছেন, ও যোগাযোগ রাখা বন্ধ করে দিল। কিছু দিন পরে আমি ওকে পার্থদা’র সঙ্গে দেখি। ওর বাড়ি থেকে যা যা পাওয়া গিয়েছে, সে সব দেখে আমরা স্তম্ভিত। অর্পিতা ছিল সাধারণ উচ্চাশী একটা মেয়ে মাত্র৷’’ বলছেন অর্পিতার প্রথম ছবির প্রযোজক।
জানা যাচ্ছে, কেরিয়ারের প্রথম দিকে যাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল, তাঁদের সঙ্গে ২০১৩ থেকে যোগাযোগ ছিন্ন করেন অর্পিতা। তত দিনে তিনি পার্থ-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত হয়ে গিয়েছেন।
পরিচালক সঙ্ঘমিত্রা চৌধুরী এখন বিজেপিতে। তাঁর চোখে এখনও ভাসছে অর্পিতার সাধারণ ভাবমূর্তি। বললেন ‘‘আমার তিনটি ছবিতে অভিনয় করেছেন অর্পিতা। সে সময় ও খুব সাধারণ ছিল। একটা গাড়ি পর্যন্ত ছিল না। পরে একটা সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কেনে। শ্যুটিং সেটে আমরা খুব মজা করতাম। ২০১৩-র পরে আমি বিজেপি-তে যোগ দিই। ও আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা বন্ধ করে দেয়। পরে আমি ওকে নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের পুজোর হোর্ডিংয়ে দেখি। ওর এই উত্থানে আমি খুশিই হয়েছিলাম। কিন্তু গত ১ সপ্তাহ ধরে যা দেখছি, তাতে আমি শিহরিত। এই ঘটনায় এটাই প্রমাণ হয় যে একজন দায়িত্বপূর্ণ মন্ত্রী কীভাবে ওকে ব্যবহার করেছেন এবং ও নিজেও নিজেকে ব্যবহৃত হতে দিয়েছে।’’
অর্পিতাকে খুব কাছ থেকে দেখা ইন্ডাস্ট্রির লোকজন বলছেন অর্পিতা চটজলদি বিখ্যাত হয়ে যশ, প্রতিপত্তি ও অর্থ চেয়েছিলেন। সেই ছাপই ধরা পড়েছিল ওঁর ঘন ঘন রাজনৈতিক বৃত্ত ও বড় পার্টিতে যাওয়ার প্রবণতায়। একসময় সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ির সওয়ারি অর্পিতা এখন অডি ও মার্সিডিজ চালান। তাঁর উত্থান নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ। কিন্তু তাঁর প্রাক্তন সহকর্মীদের মতে উত্থানের জন্য যে অন্ধকার পথে তিনি পা রেখেছিলেন সেটা ধ্বংসলীলার।