শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১২ পৌষ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

১০ বছরের শাসনে নাগরিক চোখে 'অযোগ্য' কিম

২৭ বছর বয়সী কিম জং উন উত্তরসূরী হিসেবে উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতায় আসেন, তাও ১০ বছর হলো। নেতা হিসেবে তিনি কেমন হবেন সে পরীক্ষা তাকে দিতে হয়নি। কিম জং ইলের পর তিনিই রাষ্ট্রিয় ক্ষমতায় আসবেন সেটা নির্ধারিতই ছিল। কিম জং উন তার ১০ বছরের শাসনকালে নানাভাবে হয়েছেন খবরের শিরোনাম। 

৬৯ বছর বয়সী কিম জং ইল মারা যান ২০১১ সালে। উত্তর কোরিয়ার মিডিয়া তার মৃত্যুর খবর প্রকাশ করে ১৯ ডিসেম্বর। ২৭ বছর বয়সেই তথাকথিত নেতা হিসেবেই পরিচিতি পান বিশ্ব জুড়ে। বিশ্বের বহু দেশের নেতা ভেবেছিলেন তিনি দেশকে সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিতে পারবেন না। তবে এই ১০ বছরে কিম জং উন শুধু নিজের অবস্থানই শক্ত করেননি। 'কিম জং-ঐক্যবাদ' নামে নতুন এক যুগের সূচনা করেছেন।

ক্ষমতায় আসার পর কিম তার বিরোধীতা করা কয়েক শত মানুষকে হত্য করেছেন। পারমানবিক পরীক্ষা করিয়েছেন। শতাধিক ব্যালাস্টিক ক্ষেপনাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছেন। আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় বসে বিশ্ব মিডিয়ার নজর কেড়েছেন। পারমানবিক অস্ত্রে বলীয়ান হওয়ার মূল্য এখন দিতে হচ্ছে উত্তর কোরিয়াকে, কোরিয়া এখন আগের চেয়ে বেশি গরীব আরও বেশি বিচ্ছিন্ন একটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।

কিমকে নিয়ে যা বললেন তারা-

কিম জং ইল যেদিন মারা যান কিম জিউম-হিউক তখন ছাত্র ছিলেন। তিনি চীনে পড়ালেখা করতেন। উত্তর কোরিয়ার অভিজাত পরিবারের সন্তান তিনি। উত্তর কোরিয়ার অল্প কিছু ভাগ্যবানদের একজন, যিনি দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি বলেন, যেদিন কিম জং ইল মারা যান, সেদিন তিনি পার্টি করেছিলেন। এ কাজের জন্য তার মৃত্যুও হতে পারতো। তিনি ভেবেছিলে কিম শাসনের অবসান হলো এবার। আর নতুন শাসক কিম জং উন যেহেতু ইউরোপে পড়ালেখা করেছেন। তাই তার দৃষ্টিভঙ্গী হবে আমাদের মতো। আমি ভেবেছিলাম নতুন যুগের সূচনা হবে উত্তর কোরিয়ায়। চীন বিশ্ব সম্পর্কে আমার চোখ খুলে দিয়েছে।

কিম জিউম-হিউক আরও বলেন, তবে চীনে থাকাকালীন দেশ সম্পর্কে বিশ্ব মিডিয়া, ইন্টারনেটে যে সব তথ্য পেয়েছি, তাতে আমার বিশ্বাস ছিলো পশ্চিমার মিথ্যা বলছে। তবে আমার বিশ্বাস ভঙ্গ হয়, দেশে ফিরে এসে, আমার দেশের ২৫ মিলিয়ন মানুষ জানে না বিশ্ব তাদের সম্পর্কে কীভাবছে। উত্তর কোরিয়ার মানুষ এভাবেই নিজ দেশে অবরুদ্ধ। এদেশের মানুষকে শেখানো হয়েছে,তাদের নেতা প্রতিভাবান, বিশ্বস্ততা পাওয়া যোগ্য।

উত্তর কোরিয়ায় এ কথাও ফিসফিসিয়ে লোকমুখে শোনা যায় যে, কিম জং উন যোগ্য উত্তরসূরী নন, তিনি বিশেষভাবে সুবিধাপ্রাপ্ত; বলেছেন উত্তর কোরিয়ার সাবেক কুয়েত বিষয়ক রাষ্ট্রদূত রিউ হিউর-উ। তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়ানরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে উত্তরাধিকারের শাসন দেখতে দেখতে। বিশেষ করে অভিজাতরা। তারা নতুন কিছু চাইছেন। কিমের পরিবার ১৯৪৮ সাল থেকে শাসন করে আসছে। নাগরিকদের শেখানো হয় যে, কিমের বংশের রক্তধারা পবিত্র, দেশ শাসনের জন্য উপযুক্ত, আমাদের এই প্রিয় দেশকে সঠিকভাবে শাসন একমাত্র এ বংশের রক্তই করতে পারবে। তিনি প্রশ্ন করেন, ২৭ বছর বয়সী একজন দেশ শাসন সম্পর্কে কিজানে? কিবুঝে?

২০১২ সালে নতুন নেতা উন দেশের মানুষের উদ্দেশ্যে বলেন,'কোরিয়ানদের আর কখনওই শক্ত বাঁধনে বাঁধা হবে না।' দেশের মানুষ ভাবতে শুরু করলো, নতুন নেতা তাদের ভোগান্তির অবসান ঘটাবে। ১৯৯০ সাল থেকে উত্তর কোরিয়াতে দুর্ভিক্ষ চলছে, হাজার হাজার মুনুষ না খেয়ে মারা গেছে। খাদ্য ঘাটতি দূর করবে নতুন নেতা। খাদ্যের মজুদ বাড়াবে। এটা ছিলো একটি অসাধারণ মুহূর্ত; কথাগুলো বলেছেন পূর্ব-উপকূলীয় প্রদেশের গাড়ি চালক ইয়ু সিওং-জু। তিনি বলেন,পররাষ্ট্র কর্মকর্তাতের নির্দেশ দেয়া হয় বিদেশি বিনিয়োগ সৃষ্টির সুযোগ করে দিতে এবং দেশে কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছিল। সুপার মার্কেটগুলোতে পণ্য সরবরাহ বেড়ে ছিলো। আমাদের দেশের পণ্যের মান চীনের পণ্যের থেকে সবদিক থেকে উন্নত ছিলো। আসলে এটা ছিলো আমাদের গর্বের। আমাদের অহংকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলো।

তবে সিংহাসনের জন্য যে বা যারা হুমকি স্বরূপ তাদের প্রতি কিমের সুনজর স্থায়ীত্ব পায়নি। চীন সীমান্ত এলাকার এক ব্যবাসায়ী চোয়ি না-রাই বলেন,যাদেরই কিম হুমকি মনে করেছেন তাকেই হত্যা করেছেন। তরুণ নেতা এভাবেই তার ক্ষমতা ধরে রেখেছেন। নিজের চাচাকেও সে ছাড় দেয়নি। কুকুরের চেয়েও খারাপ পরিণতি হয়েছে তার। উনের চাচা জ্যাং সং-থায়েক মিত্রদের নিয়ে উনের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গঠন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনিই ছিলেন দেশ শাসন করার যোগ্য। তিনি যদি ক্ষমতায় আসতে পারতেন তবে দেশে অর্থনীতির ব্যাপক পরিবর্তন আসতো। যদিও আমরা যা ভাবছিলাম সেটা করা সহজ ছিলো না। তবে আমরা এমনটাই আশা করছিলাম। আর এমন কথা যখন প্রচার পেয়েছিলো তখনই চাচা জ্যাং সং-থায়েককে চরম পরিণতি ভোগ করতে হলো। দলের ঐক্যে ফাঁটল ধরিয়েছেন জ্যাং সং-থায়েক, এমন অভিযোগ এনে কিম ফাঁসিকে ঝুলিয়ে হত্যা করলেন চাচাকে।

কিমের নৃশংস হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে চীন সীমান্ত দিয়ে হাজার হাজার মানুষ পালিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া যেতে চেষ্টা করে। তারা শরনার্থী হয়ে সেখানে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করে। সেটা ঠেকাতে সীমান্তে পাহারা আরও জোরদার করে কিম। কাঁটা তারের বেড়া দেওয়া হয় সীমান্ত এলাকা ঘিরে। হা জিন-উ, তিনি একজন দালাল, উত্তর কোরিয়া থেকে ১০০ জনকে পালাতে সাহায্য করেছিলেন। তিনি বলেন,'সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো, যাকেই সীমান্ত পেরুতে দেখবে,দেখামাত্র গুলি করবে। তাদেরকে এ কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হবে না। আমি প্রথম যখন এ কাজ শুরু করি তখন আমি খুব ভয় পাচ্ছিলাম। তবে আমি দায়িত্ব মনে করে আমার কাজটি করেছি, বলেন হা জিন-উ। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমার মনে কেবলই প্রশ্ন আসতো আমি কেন এদেশে জন্ম নিলাম। একটা প্রাণির যে স্বাধীনতা আছে আমার সে স্বাধীনতা নেই। তাই আমি এ ঝুঁকি নিলাম। তবে পরিণতিতে আমাকে দেশ ছাড়তে হলো। আমার মাকে আটক করা হলো। তাকে জেলখানায় এমন নির্যাতন করা হলো যে, তিনি পক্ষাঘাত গ্রস্ত হয়ে পড়লেন। এ ঘটনা তাকে এখনও কষ্ট দেয়।

ভিন্নমতাদর্শী হয়েও কিম জং উন তার বাবার চেয়েও আরও বেশি গ্রহণযোগ্য আরও বেশি আধুনিক এবং বন্ধুত্বপূর্ণ মানসিকতা প্রমাণ করতে চেষ্টা করছিলেন। কিম রি সোল-জু নামে এক গায়িকাকে বিয়ে করেন। স্ত্রীকে সাথে নিয়ে তিনি বিভিন্ন শহর ও গ্রাম ঘুরে বেড়ালেন, স্ত্রীকে আলিঙ্গন করা থেকে ঘোড়ায় চড়া, রোলার কোস্টরে উঠছেন, প্রসাধনী কারখার পরিদর্শন করছেন, এসব ছবি প্রচার করেছেন কিম নিজেকে আধুনিক মানুষ হিসেবে দেখাতে। তবে দেশের সাধারণ নাগরিকের জন্য এ সবই ছিলো নিষিদ্ধ। ইউন মি-সু নামে একজন বলেন, আমি আধুনিক জীবন যাপন করতে চাই। আমি ট্রেন্ড ফলো করতে চাই। তবে আমাদের জন্য নিষিদ্ধ ছিলো। আমি জিন্স পরতে চাইতাম। অলঙ্কারও পরতে চাই। আমি তাই করলাম। কিন্ত দেশের আইন না মানার জন্য আমাকে তিরস্কার করা হলো জনসম্মুখে। আমাকে দোষী সাব্যস্ত করা হলো।

হিউন-ইয়ং একজন গায়ক বলেন, তাকে গান গাইতে হবে কিমের প্রশংসা করে। সে অস্বীকৃতি জানালো, আর সে কারণে তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হলো। তিনি আরও বলেন, একজন শিল্পী হিসেবে আমি যা করতে চাই তা কখনও করতে পারিনি। অনেক নিয়ম, কঠোর বিধি। কোরিয়ার একজন গায়ক হিসেবে আমি অনেক বেশি ভুক্তভোগী। সব কিছুই সরকার নিয়ন্ত্রণ করে। সব কিছুতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ এটা প্রমাণ করে যে,তারা আত্মবিশ্বাসী নন। এমনকি তারা বিদেশী প্রভাবকেও ভয় পায়। শুধুমাত্র দক্ষিণ কোরিয়ার কে-পপ ভিডিও দেখার কারণে এই ১০ বছরে কমপক্ষে ১০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। আর বিদেশি কোন কিছুর প্রভাবে কিম 'দুষ্টু ক্যান্সার' নাম দিয়েছেন।

প্রতিটি ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষা আন্তর্জাতিক শিরোনাম হয়েছে। তবে দেশের মধ্যে গৌরব ধরে রাখতে পরেনি কিম। জনগণ বলে,তাদের রক্ত আর ঘাম শুষে এই পারমানবিক অস্ত্র বানানো হচ্ছে। এমনটাই বললেন উত্তর কোরিয়া থেকে দক্ষিণ কোরিয়া চলে যাওয়া এক ব্যক্তি।

উত্তর কোরিয়া থেকে দক্ষিণ কোরিয়া চলে যাওয়া অপর এক ব্যক্তি বলেন,আমরা এটাকে বিজয় বলছি না। আমরা যা আয় করছি সেটা আমরা মিসাইল পরীক্ষায় ব্যায় করছি। তাই এ কাজকে 'ওয়াও' বলে বাহবা দিতে পারি না।

২০১৬ সালের দিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রাষ্ট্রদূত রাইউকে নতুন নির্দেশ দেয়া হয়। তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়ার কেন পারমানবিক অস্ত্র দরকার সে বিষয়ে ব্যাখা করতে এবং এটা এটাকে বৈধতা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়। আশাকরা হয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কোরিয়ার পারমানবিক পরীক্ষাকে স্বাভাবিকভাবে নিতে শুরু করতে। তবে যা ধারণা করা হয়েছিল, সে মতো কোন কিছুই হয়নি। উত্তর কোরিয়ার পারমানকিব পরীক্ষা নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের শেষ হয় কিম আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যকার বৈঠকের মধ্য দিয়ে বলে ধারণা করা হচ্ছি। এ বৈঠক ছিল একটি প্রদর্শনী মাত্র। সিঙ্গাপুরে বৈঠকে বসা দুই নেতার হ্যান্ডশেক করা ছবি ব্যাপক সাড়া ফেলে। গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পায়। তবে পারমানবিক অস্ত্র বৃদ্ধির যে পরিকল্পনা সেখানে কিম খুব সামান্যই সরে আসেন। ফলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় কোরিয়ার ওপর।

উত্তর কোরিয়ার ব্যবসায়ী চোই না-রায়ে বলেন,ট্রাম্প আর কিমের ওই বৈঠক সম্পর্কে ব্যাখ্যার কিছু ছিলো না। ওই বৈঠক কিভাবে পরিস্থিতি উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাবে সে বিষয়ে কাল্পনিক কিছু ভাবা যেতে পারে আর কি। কোন চুক্তিই আর হলো না। উত্তর কোরিয়া কখনই পরমানু অস্ত্র সমৃদ্ধকরণ থেকে সরে আসবে না। উত্তর কোরিয়া মনে করে এ অঞ্চলে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পরমানু অস্ত্রে সমৃদ্ধ হতে হবে।

জু সিওং নামে উত্তর কোরিয়ার এক গাড়ি চালক জানান, ২০২০ সালে প্রতিবেশি চীনে যখন কোভিড হানা দিলো। তখন উত্তর কোরিয়া সীমান্ত বন্ধ করে দিলো। শুধু সীমান্ত নয় ব্যবসাও বন্ধ রাখা হলো। কোরিয়ার ৮০ শতাংশেরও বেশি পণ্য চীন সীমান্ত দিয়ে আসে। ফলে দেশটি চরম সঙ্কটে পড়লো। খাদ্য সঙ্কট দেখা দিলো। অর্থনীতি সঙ্কুচিত হলো, জিনিসপত্রের দাম বাড়লো। পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে খারাপ হতে থাকলো। কিম জং উন এ পরিস্থিতিকে 'চরম দুর্দশা' বলে বর্ণনা করলেন।

কিম সাং-হিউ নামে সাবেক এক চিকিৎসক বলেন, বেশিভাগ ওষুধ কালোবাজারে চলে গেলো। বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে অস্ত্রপচার করা কঠিন হয়ে পড়লো। চিকিৎসা সামগ্রীর চরম অভাব দেখা দিলো। কোভিড মোকাবেলায় প্রস্তুত ছিলো না উত্তর কোরিয়া। করোনায় জনস্বাস্থ্যের কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা অজানা,যোগ করেন তিনি।

বর্তমানে চলতে থাকা পরিস্থিতি বিবেচনায় দক্ষিণ কোরিয়ায় চলে যাওয়া কিছু মানুষ এত বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন যে তারা অভ্যুত্থান চান। আদূর ভবিষ্যতেও উত্তর কোরিয়ায় অভ্যুথানের কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।কিম যুগের আবসানের যত ভবিষ্যৎ বাণী সবই মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। কিমের পারিবারিক শাসন উল্লেখযোগ্যভাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। প্রায় ৭০ বছর ধরে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন উত্তর কোরিয়া। এই প্রতিবেদন তৈরির সময় যাদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে তাদের প্রত্যেকেরই একই আশা, উত্তর কোরিয়া সীমান্ত খুলে দেবে, জনগণ স্বাধীনভাবে চলতে শিখবে, কারও কারও শুধু এতটুকুই প্রত্যাশা, তারা যেন তাদের পরিবারের সঙ্গে আবার মিলিত হতে পারেন।

কিম জং উনের শাসনকালে তারা কথা বলার অধিকার হারিয়েছে, গায়ক হায়ুন-হাঙ এমনটাই জানান। আমার নিজের জন্য গান করার অর্থ দাঁড়ায় আমি আমার জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছি। যারা উত্তর কোরিয়া যারা ছাড়ছেন, তারা তাদের মনকে কবর দিয়ে তবেই দেশ ছাড়ছেন।

শাসনামলের ১০ বছর পালন করতে চলেছেন কিম, তার কাছে কয়েক ডজন পারমানবিক অস্ত্র আছে, তবে তার দেশের মানুষ রয়েছে অনাহারে। কিম তার আঙ্গুলের এক ইশারায় একজন মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে দিতে পারেন। সে ক্ষমতা তার আছে। উত্তর কোরিয়ার ২৫ মিলিয়ন মানুষ বিশ্ব থেকে আগের চেয়েও বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করছে। আর এ অবস্থা থেকে মুক্তির কোন আশা আদূর ভবিষ্যত দেখা যাচ্ছে না। এখানে যারা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তাদের জীবন ঝুঁকির মুখে ছিলে, তারা দেশ ছেড়ে দক্ষিণ কোরিয়া বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

কেএফ/জেডএকে

Header Ad
Header Ad

বাংলাদেশ জটিল রাজনৈতিক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে : মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশ বর্তমানে এক জটিল রাজনৈতিক সময় পার করছে। এই সময়ে বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণে রাজনৈতিক কাঠামো এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে গণতন্ত্রের উপযোগী করতে হবে।

শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষি ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘ঐক্য, সংস্কার, নির্বাচন, জাতীয় সংলাপ ২০২৪’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, “গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠায় আমাদের বারবার বলতে হচ্ছে, ‘এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে।’ কারণ, গণতন্ত্র চর্চা ছাড়া গড়ে ওঠে না। ১৯৭১ সালের সংগ্রাম এবং পরবর্তী গণতান্ত্রিক লড়াইগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের এগোতে হবে।”

তিনি অভিযোগ করেন, “২০১২ সাল থেকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রামে বিএনপি সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। আমাদের হাজারো নেতাকর্মী মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হয়েছেন, গুম হয়েছেন এবং হত্যা করা হয়েছে। তবুও আমরা থেমে নেই। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আমরা এখনও সোচ্চার।”

সংস্কার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই সংস্কারের পক্ষে। আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয় যে ‘বিএনপি সংস্কার চায় না,’ তা সম্পূর্ণ ভুল। আমরা দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার চাই এবং একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চাই।”

তিনি আরও বলেন, “গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচনই হচ্ছে মূল দরজা। ১৯৯৬ সালের কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত তিনটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন তারই উদাহরণ।”

তৃণমূল থেকে রাজনীতিতে উঠে আসার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি কোনো রাজনৈতিক তাত্ত্বিক নই। আমি মাঠ পর্যায়ে কাজ করে তৃণমূলের মানুষের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করেছি। জনগণকে বাদ দিয়ে কোনো উন্নয়ন বা পরিবর্তন সম্ভব নয়।”

অতীতের সংগ্রামের গুরুত্ব তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং তারপরে গণতান্ত্রিক লড়াইগুলোর আত্মত্যাগের কথা ভুলে গেলে চলবে না। সেই ঐতিহাসিক আন্দোলনের চেতনা ধারণ করেই আমাদের ভবিষ্যতের পথ রচনা করতে হবে।”

তিনি জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, “গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের সঙ্গেই সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। জনগণই সব পরিবর্তনের মূল শক্তি।”

Header Ad
Header Ad

সংবিধান সংস্কারে রাজনৈতিক দলের সংকল্প জরুরি: অধ্যাপক আলী রীয়াজ

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। ছবি: সংগৃহীত

সংবিধান সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকার ও সংকল্প অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেছেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত ‘ঐক্য, সংস্কার, নির্বাচন’ শীর্ষক সংলাপে তিনি এ কথা বলেন।

আলী রীয়াজ বলেন, "বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে জনগণ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, নাগরিক অধিকার এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের দাবি মেনে ঐক্যমত তৈরি করতে হবে।"

তিনি আরও বলেন, "শুধু আইন বা নিয়ম-কানুন সংস্কার যথেষ্ট নয়। ভালো সংবিধান প্রণয়ন করলেই সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত হবে না। এজন্য রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে সংস্কারকাজ এগিয়ে নেয়ার দৃঢ় সংকল্প থাকতে হবে।"

এই সংলাপে তিনি রাজনৈতিক ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বলেন, জনগণের চাহিদা অনুযায়ী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও সংস্কার সাধনে দলগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Header Ad
Header Ad

চলতি বছরের বিজিবি-বিএসএফ বৈঠক হচ্ছে না

ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও ভারতের বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকটি বাতিল হয়েছে। শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিএসএফের এক কর্মকর্তা ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

প্রতি বছর দুইবার করে স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, মাদক বিরোধীসহ অন্যান্য সংস্থার কর্মকর্তাদের নিয়ে দুই বাহিনীর প্রধান বৈঠক করেন। বিএসএফ এবং বিজিবি (তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস) এর ডিজিদের মধ্যে ১৯৭৫ সালের ২ ডিসেম্বর প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এর ১৯৯৩ সালে দিল্লি ও ঢাকায় দ্বিবার্ষিক বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এবারের বৈঠকটি হওয়ার কথা ছিল দিল্লিতে।

বাতিল করা বৈঠকটি একটি রুটিন বৈঠক হলেও এবার তা অধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কেননা, ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে চলে যাওয়ার পর বিজিবি-বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ে আর কোনও বৈঠক হয়নি।

নভেম্বরে এই বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে বাংলাদেশ এটি পিছিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানালে নতুন করে আর কোনও তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। ডিসেম্বরে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার আশা করা হচ্ছিলো। তবে এ মাসেও তা না হওয়ায় ২০২৪ সালে বৈঠক হওয়ার আর কোনও সম্ভাবনা নেই।

এ বিষয়ে বিএসএফের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘নতুন তারিখ এখনও ঠিক করা হয়নি। তাই চলতি বছর বৈঠকটি আর হচ্ছে না। গত মাসে বৈঠক স্থগিতের পর ডিসেম্বরে এর আয়োজন নিয়ে আলোচনা হলেও তা ফলপ্রসু হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফের সদস্যদের মধ্যে কিছু বিষয় নিয়ে সমস্যা রয়েছে। তবে সেগুলো ছোট বিষয়। যে বিষয়গুলোর সমাধান করা সম্ভব নয় সেগুলো দুই বাহিনীর প্রধানের বৈঠকে তোলা হবে। তবে এই মুহূর্তে তাদের বৈঠক না হওয়াটাকে আমরা বড় করে দেখছি না। কেননা, মধ্যম সারির কর্মকর্তাদের মধ্যে নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে।’

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

বাংলাদেশ জটিল রাজনৈতিক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে : মির্জা ফখরুল
সংবিধান সংস্কারে রাজনৈতিক দলের সংকল্প জরুরি: অধ্যাপক আলী রীয়াজ
চলতি বছরের বিজিবি-বিএসএফ বৈঠক হচ্ছে না
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে নিহত সবাই একই পরিবারের
ইউসুফ (আঃ)- এর সমাধিতে নিয়ে গেল ইসরায়েলি সেনারা
ইন্টারপোলের রেড নোটিশে ৬৩ বাংলাদেশি: অপরাধীদের ধরতে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজমীর বরখাস্তের আদেশ বাতিল
মাহফিলে আজহারী উঠবেন রাতে, দুপুরেই ভরে গেছে ময়দান
ইসরায়েলি হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলেন ডব্লিউএইচও প্রধান
থাইল্যান্ডে নিখোঁজ হওয়া বাংলাদেশিকে পাওয়া গেল থাই নারীর সঙ্গে হোটেলে  
হাসিনার দোসররা সচিবালয়ে পরিকল্পিতভাবে অগ্নিকাণ্ড করেছে: শাকিল উজ্জামান
ভারতে ইসকন মন্দিরে চিন্ময়ের আইনজীবীর বৈঠক
ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারিত হওয়া উচিত: ড. মুহাম্মদ ইউনূস  
নির্বাচনে অংশ নিতে খালেদা জিয়ার আইনগত কোনো বাধা নাই
বাসের ধাক্কায় দুমড়েমুচড়ে গেল প্রাইভেটকার, নিহত ৫  
পাঁচ সাংবাদিক বরখাস্তের জন্য সরকার দায়ী নয়: প্রেস সচিব শফিকুল আলম
জাহাজে ছেলে খুন, পুত্রশোকে বাবার মৃত্যু
ক্রীড়া উপদেষ্টা আপাতত ক্রীড়া পরিষদে অস্থায়ী অফিস করবেন
সংস্কারবিহীন নির্বাচন সম্ভব নয়: ড. মুহাম্মদ ইউনূস
পানির ট্যাংকে লুকিয়েও রক্ষা পেলেন না আ’লীগ নেত্রী