জলবায়ু পরিবর্তন
পৃথিবীর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জাতিসংঘের রিপোর্টে ভয়াবহ পূর্বাভাস
করোনা ও ইউক্রেন সংকটের মাঝেই আবার দুঃসংবাদ পেল বিশ্বাবাসী। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মাত্রা এখনই না কমাতে পারলে অদূর ভবিষ্যতে মারাত্মক পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিলো জাতিসংঘের জলবায়ু সংগঠন।
সোমবার প্রকাশিত আইপিসিসি রিপোর্টে এমন ভয়াবহ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। হিসেব অনুযায়ী দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে পৃথিবীতে আরও খরা, বন্যা ও তাপ প্রবাহের মতো বিপর্যয় অনেক বেড়ে যাবে। রিপোর্টে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, যে এই মুহূর্তেই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হাতেনাতে টের পাওয়া যাচ্ছে৷ ২০ বছর আগের তুলনায় মানুষ ও প্রকৃতিকে আরও চরম আবহাওয়ার মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তাপমাত্রায় পরিবর্তন বা প্রবল বৃষ্টিপাতের মতো ঘটনা আরও ঘনঘন দেখা যাচ্ছে। প্রাণিজগত, কৃষিক্ষেত্র ও মানুষের মধ্যে আরও ঘনঘন মারাত্মর রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। এমন প্রবণতায় রাশ টানতে হলে স্বাস্থ্যকর ইকোসিস্টেম ও সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য নিশ্চিত করতে হবে বলে জাতিসংঘের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। এমনটা সম্ভব হলে মানুষের কল্যাণ ও উপার্জনের পথও খোলা থাকবে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, তিনি জলবায়ু সংক্রান্ত অনেক রিপোর্ট দেখেছেন। কিন্তু আইপিসি-র সাম্প্রতিকতম রিপোর্ট যেভাবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার ক্ষেত্রে নেতৃত্বের ব্যর্থতা তুলে ধরেছে, এমন ভয়াবহ চিত্র এর আগে কখনো তিনি দেখেননি। তার মতে, বিশ্বের সর্বত্র তারই মতো মানুষ উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ। গুতেরেস জলবায়ু সংরক্ষণের জন্য চাপ বাড়াতে সেই ক্ষোভ উগরে দেবার ডাক দিয়েছেন। হাতে গোনা কয়েকটি দেশ ও বড় কোম্পানি যেভাবে বিশ্বের বাকি অংশের অধিকার খর্ব করছে, সে বিষয়েও চরম বিরক্তি প্রকাশ করেন জাতিসংঘের মহাসচিব। সরকারগুলি দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে, যা অপরাধের সমান বলে মনে করেন গুতেরেস। তবে বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানীরা পৃথিবী যতা সম্ভব বাঁচানোর কর্মসূচি বাতলে দিচ্ছেন। এবার দ্রুত ও বড় আকারে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার উপর জোর দেন তিনি।
আইপিসিসি-র যুগ্ম প্রধান হান্স-অটো প্যোর্টনার বলেন, পৃথিবীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক দশক শুরু হচ্ছে। তবে কার্যকর পদক্ষেপ নেবার জন্য হাতে সময় খুব কম৷ তার মতে, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের মাত্রা আরও অনেক কমানো সবচেয়ে জরুরি। সেইসঙ্গে পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে হতাহতের সংখ্যা কমাতেও উদ্যোগ নিতে হবে বলে প্যোর্টনার মনে করেন।
আইপিসি রিপোর্টে মানুষের জীবনযাত্রার আমূল পরিবর্তনের উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে। যেমন মাংস খাওয়া অনেক কমাতে হবে, কারণ পশু পালনের জন্য প্রয়োজনীয় কৃষিজমির চাহিদার কারণে বনজঙ্গল ধ্বংস করে কার্বন নির্গমন আরও বাড়ানো হচ্ছে। সেইসঙ্গে ঘরবাড়ি গরম রাখা ও পরিবহণের ক্ষেত্রেও কার্বন নির্গমন কমানো প্রয়োজন বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে৷ উল্লেখ্য, আইপিসিসি-র মোট চারটি রিপোর্টের মধ্যে এটি দ্বিতীয় রিপোর্ট৷ প্রথমটি গত বছরের আগস্ট মাসে প্রকাশিত হয়েছিল।