প্রায় ৪ লাখ ২২ হাজার মানুষ ইউক্রেন ছেড়েছে: জাতিসংঘ
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর হিসাব দিয়েছে এখন পর্যন্ত চার লাখ ২২ হাজার মানুষ ইউক্রেন থেকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে গেছে।
মুখপাত্র বলেছেন, ইউএনএইচসিআর "ইউক্রেন থেকে পালিয়ে আসা এই লোকদের শরণার্থী হিসাবে বিবেচনা করে"।
ছবি:ইউক্রেন-স্লোভাকিয়া সীমান্তের উযোরোড ক্রসিংয়ে ইউক্রেন থেকে পালানো লোকজনের ভিড়
এদিকে, এ পর্যন্ত পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছে কমপক্ষে দুই লাখ মানুষ৷ রাশিয়ার সৈন্য ফিরে না গেলে ইউক্রেন থেকে পালানো মানুষের সংখ্যা ৫০ লাখও ছাড়াতে পারে৷ তাদের গ্রহণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইইউ৷ তরে ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বিশেষ সভায় আলোচনা হয়েছে কতজনকে নেয়া সম্ভব? ইউক্রেনে অবস্থানরত আফ্রিকান শিক্ষার্থীদেরও একইভাবে গ্রহণ করা হবে তো?
সেখানে ইউক্রেন থেকে আসা শরণার্থীর সম্ভাব্য সংখ্যা প্রসঙ্গে ইইউর স্বরাষ্ট্র বিষয়ক কমিশনার ইলভা ইয়োগানসন বলেন, ‘‘কতজন আসবে তা আমি জানি না৷ আমার মনে হয় কয়েক মিলিয়ন মানুষের প্রস্তুতি নিতে হবে আমাদের৷''
জাতিসংঘ এবং শরণার্থী বিষয়ক বিভিন্ন সংগঠনের অনুমান, ইউক্রেন থেকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নেয়া মানুষের সংখ্যা ভবিষ্যতে ৪০ থেকে ৭০ লাখও হতে পারে৷ রাশিয়ার হামলা শুরুর প্রথম চারদিনে শুধু পোল্যান্ডেই এ পর্যন্ত আশ্রয় নিয়েছে প্রায় দুই লাখ মানুষ৷ রাশিয়া হামলা বন্ধ করে সৈন্য ফিরিয়ে নিলে এই দুই লাখসহ স্লোভাকিয়া ও অন্যান্য প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নেয়া সব ইউক্রেনীয়ই হয়ত নিজেদের দেশে ফিরে যাবে৷ কিন্তু ইইউ-র আশঙ্কা, রাশিয়া হামলা যতদিন চালিয়ে যাবে, ততই ভয়াবহ হবে সংঘাত আর তার পরিণামে তত বেশি মানুষ ইউক্রেন ছাড়বে৷
সামনে ‘শরণার্থীগ্রীষ্মের' চেয়েও খারাপ সময়?
২০১৫ সালে সিরিয়ার যুদ্ধ থেকে বাঁচতে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ জার্মানিসহ মধ্য ইউরোপের দেশগুলোতে আশ্রয় নেয়৷ ‘শরণার্থী গ্রীষ্ম' হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ওই সময়ে শরণার্থীদের জন্য সীমান্ত পুরোপুরি খুলে দিয়েছিল জার্মানির ম্যার্কেল সরকার৷ অন্যান্য দেশও প্রাথমিকভাবে শরণার্থী গ্রহণে উৎসাহ দেখিয়েছে৷ কিন্তু পরে ধীরে ধীরে বদলে যায় পরিস্থিতি৷ পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, অস্ট্রিয়ার মতো দেশগুলো এক পর্যায়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের গ্রহণে পুরোপুরি অস্বীকৃতি জানায়৷
রাশিয়ার সৈন্য খুব তাড়াতাড়ি ফিরে না গেলে ২০১৫ সালের চেয়ে অনেক বেশি শরণার্থী আসতে পারে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে৷ তবে জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেজার মনে করেন, ২০১৫ আর ২০২২-এর চলমান সময়ের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য, তাই ইইউ দেশগুলোর মধ্যে আগের মতো অনৈক্য দেখা না দেয়ার সম্ভাবনাই বেশি৷ তার মতে, ‘‘এবার তো ইউরোপেই যুদ্ধ বেঁধেছে৷ সুতরাং ইউরোপীয় দেশগুলো বিষয়টিকে ভিন্নভাবে দেখবে৷''
আফ্রিকান এবং অন্যদের কী হবে?
রাশিয়ার হামলা শুরুর পরই ইউক্রেন ছাড়তে শুরু করে অসংখ্য মানুষ৷ সব বিদেশির জন্য ইউক্রেন ত্যাগের সুযোগ অবারিত থাকলেও, ইউক্রেনের ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সি পুরুষদের জন্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করে জেলেনস্কি সরকার৷ ফলে এখন যে ইউক্রেনীয়রা দেশ ছাড়ছেন, তাদের সবাই নারী, শিশু এবং বৃদ্ধ৷ পোল্যান্ডের সীমান্তরক্ষীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই গ্রহণ করেছে তাদের৷ অথচ কয়েক সপ্তাহ আগে ইরাক ও আফগানিস্তান থেকে আসা শরণার্থীদের কঠোরভাবে বাধা দিয়েছিল তারা৷
এদিকে সাউথ আফ্রিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা টুইট করে জানান, ইউক্রেনে পড়তে যাওয়া আফ্রিকান শিক্ষার্থীদের পোল্যান্ডে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি৷ বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা চলছে৷
ইলভা ইয়োহানসন মনে করেন, ইউক্রেনে বসবাসরত বিদেশিদেরও প্রতিবেশী দেশগুলোতে প্রবেশ করতে দেয়া উচিত৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ বিষয়টি নিশ্চিত করার চেষ্টা করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷
সূত্র: বিবিসি ও ডয়চে ভেলে