কানাডার নির্বাচন ২৮ এপ্রিল, ক্ষমতা যাবে কার হাতে?

ছবিঃ সংগৃহীত
কানাডার প্রধানমন্ত্রী ও লিবারেল পার্টির নেতা মার্ক কার্নি আগামী ২৮ এপ্রিল ফেডারেল নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন। এই নির্বাচনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর অনুপস্থিতিতে কানাডার দুটি প্রধান দল কনজারভেটিভ ও লিবারেল পার্টি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে। কানাডাবাসী সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করেন না; যে দল সংসদে সর্বাধিক আসন পায়, তাদের নেতাই প্রধানমন্ত্রী হন। এবারের ফেডারেল নির্বাচনে মোট চারজন প্রার্থী রয়েছেন। চলুন, তাঁদের সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক।
লিবারেল পার্টির নেতা মার্ক কার্নি
৫৯ বছর বয়সী মার্ক কার্নি বর্তমানে কানাডার প্রধানমন্ত্রী, তবে তিনি মাত্র কয়েক দিন আগে এ দায়িত্ব পেয়েছেন। জাস্টিন ট্রুডোর পদত্যাগের পর লিবারেল পার্টির নেতা হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। কার্নি কানাডা ও যুক্তরাজ্যে পরিচিত মুখ, কারণ তিনি কানাডা ও ইংল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
মার্ক কার্নি উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের ফোর্ট স্মিথে জন্মগ্রহণ করেন, যা তাঁকে কানাডার প্রথম উত্তরাঞ্চলীয় প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছে। তিনি হার্ভার্ড ও অক্সফোর্ডে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং আর্থিক দক্ষতার জন্য প্রশংসিত হন। তবে তিনি রাজনৈতিকভাবে অনভিজ্ঞ এবং তাঁর ফরাসি ভাষার দক্ষতা দুর্বল, যা কুইবেক প্রদেশের ভোটারদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে পোয়েলিয়েভ্রে
৪৫ বছর বয়সী পিয়েরে পোয়েলিয়েভ্রে কানাডীয় রাজনীতিতে দুই দশক ধরে সক্রিয়। তিনি কম কর ও ছোট সরকারের পক্ষে অবস্থান নেন এবং লিবারেল পার্টি ও ট্রুডোর নীতির তীব্র সমালোচক। পোয়েলিয়েভ্রে কানাডার আবাসনসংকট, মজুরি স্থবিরতা ও উচ্চ জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে উদ্বিগ্ন ভোটারদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। তবে তাঁর পপুলিস্ট রাজনৈতিক স্টাইল ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তুলনা তাঁকে সমালোচনার মুখে ফেলেছে। পোয়েলিয়েভ্রে ট্রাম্পের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে ‘কানাডাকে প্রথম’ রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ব্লক কুইবেকোয়ার নেতা ইভেস-ফ্রাঁসোয়া ব্লাঞ্চে
ব্লক কুইবেকোয়া একটি কুইবেক জাতীয়তাবাদী দল, যা শুধুমাত্র ফরাসি ভাষাভাষী কুইবেক প্রদেশে প্রার্থী দাঁড় করায়। ইভেস-ফ্রাঁসোয়া ব্লাঞ্চে ২০১৯ সাল থেকে এই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি ট্রাম্পের ৫১তম রাজ্য হওয়া প্রসঙ্গকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং কুইবেকের বাণিজ্যিক অংশীদারত্ব বৈচিত্র্যময় করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা জগমিত সিং
৪৬ বছর বয়সী জগমিত সিং এনডিপির নেতা, যা একটি বামপন্থী দল এবং ঐতিহ্যগতভাবে শ্রমিক ও শ্রম-সংক্রান্ত ইস্যুতে বেশি ফোকাস করে। তিনি ২০১৭ সালে কানাডার প্রথম জাতিগত সংখ্যালঘু ও শিখধর্মাবলম্বী হিসেবে একটি প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতা হন।
এনডিপি ২০২১ সাল থেকে ট্রুডোর লিবারেল সরকারকে সংসদে সমর্থন দিয়েছে, তবে ২০২৪ সালের শেষের দিকে এই সমর্থন প্রত্যাহার করা হয়। বর্তমানে এনডিপির জনসমর্থন কমে গেছে, এবং তাদের জন্য সংসদে আসনসংখ্যা বাড়ানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক ও চ্যালেঞ্জ
এবারের নির্বাচনে প্রধান লড়াই হবে লিবারেল ও কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যে। কার্নি রাজনৈতিকভাবে নতুন হলেও অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে, পোয়েলিয়েভ্রে অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ হলেও তাঁর কট্টরপন্থী অবস্থান ভোটারদের বিভক্ত করতে পারে।
কানাডার রাজনীতিতে কুইবেকের ভোট সবসময় গুরুত্বপূর্ণ। কার্নির ফরাসি ভাষায় দুর্বলতা তাঁর জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে, অন্যদিকে ব্লক কুইবেকোয়া দলের নেতা ব্লাঞ্চে শুধুমাত্র কুইবেকভিত্তিক ভোটারদের প্রতিনিধিত্ব করেন।
২৮ এপ্রিলের ভোটের গুরুত্ব
২৮ এপ্রিলের নির্বাচন কানাডার রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে। লিবারেল ও কনজারভেটিভ দুই দলই ক্ষমতার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, তবে এনডিপি ও ব্লক কুইবেকোয়া দলগুলোর ভূমিকা ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এখন দেখার বিষয়, কানাডার জনগণ কার হাতে ক্ষমতা তুলে দেবে।
