ভারত থেকে নেমে আসা পানির ঢলেই বাংলাদেশে বন্যা: জাতিসংঘ
বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফ করছেন জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক। ছবি: সংগৃহীত
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্রের কার্যালয়ের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রশ্নোত্তর পর্বের আগে বিশ্বের বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি পড়ে শোনান জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এসময় বাংলাদেশের বন্যার জন্য সরাসরি ভারতকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা পানির ঢলে বাংলাদেশে হঠাৎ বন্যা সৃষ্টি হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা উজানের ঢলে বাংলাদেশ আকস্মিক বন্যার কবলে পড়েছে। জাতিসংঘের দল দুর্গত এলাকায় আছে। তারা দুর্গত মানুষের মধ্যে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখার কিট ও খাবার বিতরণ করছে।
জাতিসংঘ আগেই জানিয়েছে, বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় ও মৌসুমি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য প্রথমবারের মতো মানবিক সহায়তা পরিকল্পনা গত মাসে চালু করেছে মানবিক কার্যক্রম পরিচালনাকারী সংস্থাগুলো। এর লক্ষ্য ১২ লাখ মানুষকে সহায়তা করা। এখন পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ মানুষের কাছে তারা সহায়তা পৌঁছাতে পেরেছে।
ব্রিফিংয়ে প্রশ্নোত্তর পর্বে এক সাংবাদিক বলেন, তিনি বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করবেন। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত দেড় সপ্তাহে বাংলাদেশে হাজারো মামলা, হত্যা মামলা, দুর্নীতির মামলা হয়েছে..। তখন জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, ‘দুঃখিত। আমি প্রশ্নটি বুঝতে পারিনি।’
প্রশ্নকারী আবার বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর প্রায় ৫০ লাখ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে হাজারের বেশি হত্যা ও দুর্নীতির মামলা করা হয়েছে। এসব মামলার আসামিদের মধ্যে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান আছেন। যিনি দেশের বাইরে আছেন। এ ছাড়া আসামিদের মধ্যে আছেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, ‘ঠিক আছে। কিন্তু প্রশ্নটা কী?’ প্রশ্নকারী বলেন, এই প্রক্রিয়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এভাবে মানবাধিকারের লঙ্ঘন হিসেবে ভিন্নমতের ব্যক্তিদের দমন করার কৌশলের ব্যবহার নিয়ে জাতিসংঘের কোনো উদ্বেগ আছে কি?
জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের কোনো সন্দেহ নেই যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী কর্তৃপক্ষ, যারা রাজনৈতিক ও মানবিক দিক দিয়ে দেশটির জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং একটি সময়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে, তারা আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতে যা যা করা যায়, তা করবে।’
আরেক প্রশ্নে ওই সাংবাদিক বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার দুই সপ্তাহ হলো। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা এখনো স্বস্তিতে দায়িত্বে ফিরতে পারেননি।
জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশে যা কিছু ঘটছে, তার প্রতিটি বিষয়ে, ঘণ্টায় ঘণ্টায় তিনি প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন না। তিনি মনে করেন, প্রশ্নকারীর প্রথম প্রশ্নে যে উত্তর তিনি দিয়েছেন, তা তাঁর দ্বিতীয় প্রশ্নের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
এবার প্রশ্নকারী বলেন, এবার প্রশ্ন বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে। মুখপাত্র ইতিমধ্যে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, হ্যাঁ, তিনি বন্যা নিয়ে বলেছেন। প্রশ্নকারী বলেন, বাংলাদেশ আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা পাঠানোর কোনো পরিকল্পনা জাতিসংঘের আছে কি?
জবাবে মুখপাত্র ডুজারিক বলেন, তিনি ইতিমধ্যে বলেছেন, জাতিসংঘের মানবিক কার্যক্রম বাংলাদেশে আছে। তারা ইতোমধ্যে সাত লাখ মানুষকে সহায়তা দিয়েছে।