যে কারণে দুবাইয়ে এমন ভারী বৃষ্টিপাত ও ভয়াবহ বন্যা
বৃষ্টিতে ভাসছে দুবাই। ছবি: সংগৃহীত
প্রবল বৃষ্টিতে ভাসছে দুবাই। শহরের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত। ঝাঁ চকচকে শপিং মল থেকে হাইওয়ে, সর্বত্র পানি থইথই করছে। বিপর্যস্ত বিমানসহ সকল পরিবহন পরিষেবা। দুবাইয়ের পাশাপাশি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অন্যান্য এলাকাও তলিয়ে গেছে। ২৪ ঘণ্টার অস্বাভাবিক বৃষ্টিতে এমন রেকর্ড বন্যার পর কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি নামানো নিয়ে গুঞ্জন উঠেছে।
হঠাৎ এমন বৃষ্টিপাত আর বন্যার ব্যাপারে সংযুক্ত আরব আমিরাত আবহাওয়া বিভাগ বলছে, গত ৭৫ বছরে এত পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়নি। প্রশ্ন উঠেছে, মরুর দেশে হঠাৎ কেন এত বৃষ্টিপাত? এর জন্য ‘ক্লাউড সিডিং’কে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তবে এ দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবহাওয়া বিভাগ। তাদের দাবি, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে পড়েছে দুবাই।
মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, আকাশে ভেসে থাকা বৃষ্টির অনুপযোগী মেঘগুলো বৃষ্টি হয়ে মাটিতে ঝরে পড়ার জন্য পর্যাপ্ত ঘনীভবন প্রয়োজন হয়। স্বাভাবিকভাবে বৃষ্টি না হলে ড্রাই আইস অথবা সিলভার আয়োডাইড ব্যবহার করে মেঘের ঘনীভবন ঘটানো যায়।
ড্রাই আইসের তাপমাত্রা মাইনাস ৭৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে থাকে। ভেসে থাকা মেঘের ওপর এই ড্রাই আইসের গুড়া ছড়িয়ে দিলে সেটা ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টি হয়ে মাটিতে পড়ে। এই প্রক্রিয়াকেই ক্লাউড সিডিং বলা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলতি সপ্তাহে যে ব্যাপক বন্যার সৃষ্টি হয়েছে, এর মূল কারণ ক্লাউড সিডিং। পানির নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য ২০০২ সাল থেকে অর্থাৎ গত প্রায় ২২ বছর ধরে এই ক্লাউড সিডিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে দেশটির সরকার।
পরিবেশবিদদের মতে, ক্লাউড সিডিং পরিবেশের জন্য ভাল নয়। এর নানান ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। যেসব এলাকায় ক্লাউড সিডিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, সেখানে সাধারণত অতিরিক্ত বৃষ্টির জন্য পরিকাঠামো থাকে না। ফলে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
ওমানে ভারী বৃষ্টিপাতে ১৮ জনের মৃত্যু, আরব আমিরাতে বন্যা ওমানে ভারী বৃষ্টিপাতে ১৮ জনের মৃত্যু, আরব আমিরাতে বন্যা
সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবহাওয়া বিভাগ ন্যাশনাল সেন্টার অফ মেটিওরোলজির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এসরা আলনাকবি বলেন, ‘ভারী বর্ষণের ঘটনাটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। কারণ ৫৭ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ২৪ ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে ২৫৪ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।’
‘যদি ক্লাউড সিডিং করা হতো, তাহলে আপনারা বলতে পারতেন যে ক্লাউড সিডিংয়ের কারণে এটি হয়েছে। কারণ সাধারণত ক্লাউড সিডিং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু এবার বৃষ্টিপাত স্বাভাবিক হওয়ায় কোনো ক্লাউড সিডিং করা হয়নি। এপ্রিল মাসে এই ধরনের চরম আবহাওয়ার ঘটনা ঘটা স্বাভাবিক কারণ এই মাসে ঋতু পরিবর্তন হয়।’
যুক্তরাজ্যের ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের জলবায়ুবিজ্ঞানের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ফ্রেডেরিক ওটো বলেন, ‘ দুবাইয়ে যদি বৃষ্টি ঝরাতে ক্লাউড সিডিং পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েও থাকে, তবে আগে থেকেই মেঘ সৃষ্টির জন্য পানি বহন করার মতো পরিবেশ সেখানে বিরাজমান ছিল।’