আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটুর শেষকৃত্য সম্পন্ন

দক্ষিণ আফ্রিকার আর্চবিশপ ও শান্তিতে নোবেলজয়ী ডেসমন্ড টুটুর শেষকৃত্য শনিবার রাজধানী কেপটাউনের শনিবার সেন্ট জর্জ ক্যাথেড্রালে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত ২৬ ডিসেম্বর ৯০ বছর বয়সে মারা যান ডেসমন্ড টুটু। এরপর থেকে তার মরদেহ সেন্ট জর্জ ক্যাথেড্রালে সর্বস্তরের শ্রদ্ধার জন্য রাখা হয়। শনিবার সেখানে শেষ বারের মতো শ্রদ্ধা জানান পরিবারের সদস্য, বন্ধু, যাজক ও রাজনৈতিক নেতারা। করোনা সংক্রমণের কারণে শেষকৃত্যে একশ জনের মতো উপস্থিত ছিলেন।
শেষকৃত্যে প্রশংসাপত্র পাঠের সময় দেশটির প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা, ডেসমন্ড টুটুকে নতুন প্রজন্মের আধ্যাত্বিক পিতা হিসেবে আখ্যা দেন। মৃত্যুর পর শেষকৃত্য যেন খুব সাদামাটাভাবে হয়. টুটুর এমন ইচ্ছার ফলে সবচেয়ে সস্তা কফিনেই রাখা হয় তাকে। বর্ণবৈষম্য প্রথা বিলুপ্ত করার সংগ্রামে ভূমিকা রাখায় ১৯৮৪ সালে টুটুকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়।
বিশ্ববিখ্যাত বর্ণবাদবিরোধী নেতা ও দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলার সমসাময়িক ছিলেন ডেসমন্ড টুটু। ১৯৪৮ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দেশটিতে যে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন চলেছে, তাতে অন্যতম চালকের আসনে ছিলেন তিনি। বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৮৪ সালে শান্তির নোবেল পুরস্কারও পান এই ধর্মযাজক।
চলতি বছরের অক্টোবর থেকেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে ডেসমন্ড টুটুর। তখন থেকেই হুইল চেয়ারে চলাচল শুরু করেন তিনি।
১৯৬০ সালে ধর্মযাজক হিসেবে স্বীকৃতি পান ডেসমন্ড টুটু। ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিবেশী দেশ লেসোথোর যাজক (বিশপ) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তারপর জোহানেসবার্গে ফিরে আসেন তিনি। ১৯৮৫ সালে উচ্চতর যাজক (আর্চবিশপ) পদ লাভ করেন ডেসমন্ড টুটু। তিনি ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আর্চবিশপ।
১৯৯৪ সালে নেলসন ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর দেশটিতে শেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে সুসম্পর্ক জোরদার করতে যে ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠন করেছিলেন, তার প্রধান ছিলেন ডেসমন্ড টুটু।
টুটুকে 'আইকনিক আধ্যাত্মিক নেতা, বর্ণবাদবিরোধী কর্মী ও বৈশ্বিক মানবাধিকার আন্দোলনের সৈনিক' অ্যাখ্যা দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট রামাফোসা বলেন, 'তিনি এমন এক দেশপ্রেমিক ছিলেন, যার সমতুল্য কেউ নন; ছিলেন নীতি ও বাস্তবিক পরিস্থিতির সমন্বয়কারী এক নেতা, যিনি বাইবেলের গূঢ়কথার অর্থ হাজির করেছিলেন এই বলে যে, কর্ম ছাড়া বিশ্বাস মৃত।'
প্রসঙ্গত, আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটুকে পরিবেশ বান্ধব উপায়ে সমাহিত করা হবে। বিশেষ পদ্মতিতে তার মরদেহ পানিতে মিলিয়ে দেওয়া হবে।
মরদেহ ছাইতে পরিণত করতে আগুন ব্যবহার করা হলেও টুটুর মরদেহ অ্যাকুয়ামেশন পদ্ধতিতে ছাইতে পরিণত করা হবে। অ্যাকুয়ামেশন পদ্ধতিতে মরদেহ ছাইতে পরিণত করতে পানি ব্যবহার করা হয়। টুটুর শেষকৃত্যে পরিবেশ বান্ধব উদাহরণ রাখা হচ্ছে। আগুনে পোড়ালো কার্বন নিঃস্বরণ হবে, তাই তার মরদেহ ছাইতে পরিনত করা হবে পানির মাধ্যমে যে পদ্মতিটিকে বলা হয় 'অ্যালকালাইন হাইড্রোলিসিস'।
অ্যালকালাইন হাইড্রোলিসিস পদ্মতিতে কার্বন নিঃস্বরণ ৯০ শতাংশ কম হয়। শরীর পানিতে পূর্ণ করা হয়। এরপর পটাশিয়াম হাইড্রোঅক্সাইডের সঙ্গে পানি মিলিয়ে ১৫৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৩০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে মরদেহ ছাইতে পরিণত করা হবে। আর ও প্রক্রিয়ায় সময় লাগবে ৯০ মিনিট।
এ প্রক্রিয়ায় শুধু শরীরের মাংস ছাইতে পরিণত হবে। পরে হাড়গুলোকে ১২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় শুকিয়ে মেশিনের সাহায্যে হাড়গুলো গুড়ো করে পাউডারে পরিণত করা হবে। হাড় গুঁড়ো করতে ক্রিমুলেটর মেশিন ব্যবহার করা হবে। এসব প্রক্রিয়া শেষে মৃত্যের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার দেহভষ্ম সমাহিত করা হবে।
কেএফ/
