ন্যাটোতে যোগ দেওয়া থেকে বিরত থাকছেন জেলেনস্কি
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য পদ পাওয়ার বিষয়টিতে আর জোর দিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। স্থানীয় সময় সোমবার (৭ মার্চ) রাতে জেলেনস্কি একজন দোভাষীর মাধ্যমে এবিসি নিউজকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে তিনি ন্যাটোর সদস্য পদ সম্পর্কে এসব কথা বলেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানায়।
ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্য পদ সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে জেলেনস্কি জানান, তিনি অনেক আগেই এ ব্যাপারে শান্ত হয়েছেন, যখন তারা বুঝতে পেরেছেন যে, ইউক্রেনকে গ্রহণ করতে ন্যাটো প্রস্তুত নয়। তাই তিনি এখন আর ন্যাটোর সদস্য পদ পাওয়ার বিষয়টিতে জোর দিচ্ছেন না।
ন্যাটো বিতর্কিত বিষয়গুলোকে ভয় পায় বলে মন্তব্য করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতের ব্যাপারেও ন্যাটো শঙ্কিত।
ন্যাটোর সদস্য পদ পাওয়া না পাওয়া সম্পর্কে জেলেনস্কি বলেন, তিনি এমন একটি দেশের প্রেসিডেন্ট হতে চান না, যে দেশটি হাঁটু গেড়ে কিছু ভিক্ষা করে।
ন্যাটোর সদস্য পদ বিষয়ে জেলেনস্কির এই অবস্থান মস্কোকে আপাতত শান্ত করার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রাশিয়া বলে আসছে, তারা কোনোভাবেই চায় না যে প্রতিবেশী ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিক। পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সম্প্রসারণকে একটি হুমকি হিসেবে দেখে থাকে রাশিয়া।
প্রতিবেশী ইউক্রেনে হামলার অজুহাত হিসেবে যেসব কারণের কথা রাশিয়া বলছে, তার মধ্যে অন্যতম কিয়েভের ন্যাটোর সদস্য পদ পাওয়ার চেষ্টা।
যুদ্ধ বন্ধের জন্য ইউক্রেনকে রাশিয়া যেসব শর্ত দিয়েছে, তার মধ্যে দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির বিষয়টি রয়েছে। পুতিন চান, এই দুটি এলাকাকে ইউক্রেন স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিক।
রাশিয়ার এই দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে জেলেনস্কি বলেন, দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের বিষয়ে খোলামনে ‘আপস’ করতে চান তিনি। এ নিয়ে তিনি খোলামেলা সংলাপ করতে চান বলেও জানিয়েছেন।
জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘আমি নিরাপত্তা গ্যারান্টির কথা বলছি।’ এই দুটি অঞ্চলকে রাশিয়া ছাড়া আর কেউ স্বীকৃতি দেয়নি। তবে তাঁরা এ বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন। এই অঞ্চল দুটি কীভাবে থাকবে, সে বিষয়ে সমঝোতার উপায় খুঁজতে পারেন।
প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গত আট বছরের লড়াইয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
তের দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। সাময়িক যুদ্ধবিরতি শেষে আজ চলছে যুদ্ধের ১৪তম দিন। রাজধানী কিয়েভ ঘিরে রেখেছে রুশ সেনারা। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/