তেল নিষেধাজ্ঞায় গ্যাস না দেওয়ার হুমকি রাশিয়ার
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়া থেকে তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর বিপরীতে রাশিয়া জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘায়িত হলে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করবে তারা। বিশেষ করে জার্মানির সঙ্গে রাশিয়ার প্রধান পাইপলাইন বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে দেশটি।
রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সান্দার নোভাক বলেছেন, ‘রাশিয়া থেকে তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি অব্যাহত রাখলে, বৈশ্বিক বাজারে বিপর্যয় ঘটে যাবে। বিশেষ করে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৩০০ ডলার ছাড়িয়ে যাবে।’
ইইউভুক্ত প্রায় সবকটি দেশ রাশিয়ার ওপরে নিষেধাজ্ঞা দিলেও জার্মানি ও নেদারল্যান্ডস নিষেধাজ্ঞা থেকে দূরে রয়েছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রও ইইউর পথে হাঁটতে পারে।
ইউরোপের ৪০ শতাংশ গ্যাস ও ৩০ শতাংশ তেলের জোগান দিয়ে থাকে রাশিয়া। হঠাৎ নিষেধাজ্ঞার ধাক্কা যেমনটা রাশিয়াকে পোহাতে হচ্ছে, একইভাবে এর প্রভাব পড়ছে ইউরোপেও। সোমবার (৭ মার্চ) ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম ১৩ বছরের রেকর্ড পেরিয়ে ১৩৯ ডলারে উঠে যাওয়ায়, যুক্তরাজ্যে প্রতি লিটার পেট্রলের দাম দাঁড়িয়েছে ১৫৫ পাউন্ড।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলে নোভাক বলেন, ‘এখনই ইউরোপের হাতে কোনো বিকল্প নেই। রাশিয়ার বিকল্প খুঁজতে গেলে ইউরোপের বছর পেরিয়ে যাবে। আর রাশিয়া ছাড়া অন্য কোথাও থেকে তেল ও গ্যাস আমদানি করলে, সেটি হবে তাদের জন্য ব্যয়বহুল।’
গত মাসে জার্মানি রাশিয়া-জার্মানির নতুন গ্যাস পাইপলাইন নর্ড স্ট্রিম-২ বন্ধ করে দিলে নোভাক জানান, ‘ইউরোপ আমাদের সঙ্গে যে আচরণ করবে, একই আচারণ আমরা তাদের সঙ্গে করব। নিষেধাজ্ঞা চলতে থাকলে নর্ড স্ট্রিম-১ পাইপলাইন বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গত আট বছরের লড়াইয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
বারো দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। সাময়িক যুদ্ধবিরতি শেষে আজ চলছে যুদ্ধের ১৩তম দিন। রাজধানী কিয়েভ ঘিরে রেখেছে রুশ সেনারা। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/