আজকের বিজয় বিশ্বের বৃহত্তম জয়: নরেন্দ্র মোদি
তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের সাধারণ নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ'র বিজয় দাবি করেছেন বিজেপি শীর্ষ নেতা ও ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই তারা টানা তৃতীয় বারের মতো সরকার গঠন করবেন।
মঙ্গলবার (৪ জুন) সন্ধ্যায় দিল্লিতে বিজেপির প্রধান কার্যালয়ে দেয়া এক ভাষণে এসব কথা জানান তিনি।
মোদি বলেন, আজকে আমি ভীষণ, ভীষণ খুশি। আজকের এই বিজয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিজয়। নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটের বিজয়কে তিনি ‘ভারতীয়দের বিজয়’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। ভোট দিয়ে এনডিএ’র পাশে থাকার জন্য ভারতের জনগণকে ধন্যবাদ দিয়েছেন মোদি।
এছাড়া সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করার জন্য ভারতের নির্বাচন কমিশনকেও ধন্যবাদ দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, তারা খুবই দক্ষতার সাথে কাজটি করেছে।
নতুন সরকার গঠনের পর পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি ভারতে দুর্নীতি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। একই সাথে, ভারতকে পুরোপুরি দারিদ্রমুক্ত করতে তার সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ভারতের জাতীয় নির্বাচনে বিজেপি অথবা কংগ্রেস কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। কাজেই সরকার গঠন করতে হলে জোট সঙ্গীদের ওপর নির্ভর করতে হবে। এক্ষেত্রে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের সঙ্গীদের নিয়েই সরকার গঠন করবেন বলে জানিয়েছেন জোটের শীর্ষ নেতা মোদি।
তার জোট সরকার গঠন করলে জওহরলাল নেহেরুর পর দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসাবে টানা তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবেন নরেন্দ্র মোদি। ভারতের সাধারণ নির্বাচনে বিজেপি ও এনডিএ-র বিজয় দাবী করেছেন নরেন্দ্র মোদী।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার পরে নিউদিল্লির বিজেপি সদর দফতরে একটি সমাবেশে তিনি বিজয়ী করার জন্য দেশবাসী ও এনডিএ সমর্থকদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন,‘আজকের বিজয় ভারতের সংবিধানের ওপর অটুট বিশ্বাসের জয়।’
‘বিজয়ের এই মুহূর্তে আমি জনগণকে অভিনন্দন জানাই। সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাই। সেই সাথে এনডিএর সকল সঙ্গীকে ধন্যবাদ জানাই।’ নরেন্দ্র মোদী বলেন, ১৯৬২ সালের পর কোনো সরকার নিজেদের দুই দফা পূর্ণ করার পর তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফিরে আসলো। আজ তৃতীয়বার জনগণের যে আর্শীবাদ মিললো, আমি সেটার সামনে, বিনয়ের সাথে মস্তক অবনত করছি।’
তিনি দাবি করেন, যেখানেই বিধানসভার নির্বাচন হয়েছে, সেখানেই এনডিএ-র বিজয় মিলেছে। সেটা অরুণাচল, অন্ধ্রপ্রদেশ, উড়িষ্যা হোক অথবা সিকিম। এসব রাজ্যে কংগ্রেসের সুপরা সাফ হয়ে গেছে। আমার কাছে বিস্তারিত নেই, হয়তো তাদের জামানত বাঁচানো মুশকিল হয়ে গেছে।
এদিকে বিজেপি কিংবা কংগ্রেস, কেউই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় জোট সরকার গঠনের সম্ভাবনাকে নাকচ করছে না কংগ্রেস। ভারতের লোকসভায় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যমে সরকার গঠন করতে হলে একটি দলকে অন্তত ২৭২টি আসন পেতে হবে।
কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া ভোটের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, বিজেপি কিংবা কংগ্রেস কেউই এককভাবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসন পায়নি। কাজেই ক্ষমতার আসনে বসতে হলে তাদেরকে অন্যদলের সাথে জোট গঠন করতে হবে বলেই মনে হচ্ছে।
মোদির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট এখন পর্যন্ত মোট ২৯৪টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। অন্যদিকে, রাহুল গান্ধীর ইন্ডিয়া জোট এগিয়ে আছে ২৩২টি আসনে।
আপাতদৃষ্টিতে সরকার গঠনের দৌড়ে মোদি এগিয়ে রয়েছে মনে হলেও মুহুর্তেই দৃশ্যপট পাল্টে যেতে পারে যদি মিত্র দলগুলো জোট বদলের সিদ্ধান্ত নেয়। মোদীর নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ’র দলগুলোর মধ্যে বিজেপির পরে বেশি আসনে এগিয়ে রয়েছে জনতা দল (ইউনাইটেড) এবং তেলেগু দেশম পার্টি।
এই দু’টি দল অন্তত ৩০টি পেতে যাচ্ছে। কাজেই তারা এনডিএ থেকে বের হয়ে যদি রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটে যোগদান করে, তাহলে কংগ্রেসের ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
দল দু’টির কথা বলা হচ্ছে, কারণ তারা মোদীর জোট যাওয়ার আগে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধেছিলো। এখন পুনরায় তাদেরকে জোটে ফেরাতে কংগ্রেস কী জোরালো কোনো প্রচেষ্টা চালাবে?
মঙ্গলবারের বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে বকংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, আগামীকাল (বুধবার) আমাদের জোটের বৈঠক আছে। সেখানে আমরা জোটের শরীক দলগুলোর সাথে এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবো। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে, কংগ্রেস জোট সরকার গঠনের সম্ভাবনাকে একেবারেই নাকচ করছেন না। সূত্র: বিবিসি