মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ভারত, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া সহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি লক্ষ করা যাচ্ছে। ফলে নতুন, অধিক সংক্রামক ধরন ছড়িয়ে পড়তে পারে—এই আশঙ্কায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভারতে বর্তমানে কোভিড আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে এবং গত ২৪ ঘণ্টায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা এখনো তুলনামূলকভাবে কম, তবুও ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জনগণকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত পরীক্ষা করানো এবং জনসমাগমপূর্ণ স্থানে মাস্ক পরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশেও সংক্রমণের হালকা ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। রোববার চারজনের নমুনা পরীক্ষায় তিনজনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। একদিন পর সোমবার এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচজনে। এরই মধ্যে একজন কোভিডে মৃত্যুবরণ করেছেন।
থাইল্যান্ডে পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক। জুন মাসের শুরুতেই শত শত কোভিড রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং এখন পর্যন্ত অন্তত একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ। মাত্র দুই দিনেই সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ২৮ হাজার ৩০০ ছাড়িয়েছে, যাদের বেশিরভাগই রাজধানী ব্যাংককের বাসিন্দা। থাইল্যান্ডে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত কোভিডে মারা গেছেন অন্তত ৭০ জন, যার অধিকাংশই নগরবাসী।
ইন্দোনেশিয়ায়ও সংক্রমণ বাড়ছে। সে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সব হাসপাতালে বাড়তি নজরদারির নির্দেশ দিয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বুদি গুনাদি সাদিকিন জানান, “যদিও সংক্রমণ বাড়ছে, তবে নতুন ধরনগুলো তুলনামূলকভাবে কম প্রাণঘাতী।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, ওমিক্রনের উপধরন এলএফ.৭ এবং এনবি.১.৮.১ বর্তমানে এশিয়াজুড়ে সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য দায়ী হতে পারে। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনো এই ধরনগুলোকে ‘ভয়ের ধরন’ হিসেবে ঘোষণা করেনি, তবে সাম্প্রতিক সংক্রমণের পেছনে এগুলোরই ভূমিকা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, এনবি.১.৮.১ একটি পুনর্গঠিত ভাইরাস যা এর আগেও থাইল্যান্ড, চীন, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্ত হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরাসবিদ লারা হেরেরো জানিয়েছেন, এই ধরনটি মানবদেহের কোষে প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় এসিই-২ রিসেপ্টরের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি শক্তভাবে আবদ্ধ হতে পারে। ফলে এটি আগের চেয়ে বেশি সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম।
নতুন ধরনে আক্রান্তদের মধ্যে ক্লান্তি, গলা ব্যথা, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া ও হজমে অস্বস্তির উপসর্গ বেশি দেখা যাচ্ছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, বর্তমানের টিকাগুলো এই ধরনে আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম।
ভারতের সার্স-কোভ-২ জিনোমিক্স কনসোর্টিয়াম জানায়, নতুন সংক্রমণের অর্ধেকের বেশি এখনো পুরনো জেএন.১ ধরন থেকেই হচ্ছে। অধিকাংশ আক্রান্তের উপসর্গ হালকা এবং সাধারণ ওষুধ যেমন কাশির সিরাপ বা ব্যথানাশকে তা নিয়ন্ত্রণে আসছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, বয়স্ক বা অন্য রোগে আক্রান্ত ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে উপসর্গ দেখা দিলে হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। শ্বাসকষ্ট, তীব্র দুর্বলতা কিংবা অক্সিজেন মাত্রা ৯৫ শতাংশের নিচে নামলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এশিয়াজুড়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতি জনস্বাস্থ্যের জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মতুষ্টিতে না থেকে এখনই সজাগ ও সতর্ক হওয়ার সময়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, নিয়মিত টিকা গ্রহণ ও উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণই হতে পারে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি।