মাঙ্কিপক্সের বিস্তার নিয়ন্ত্রণযোগ্য: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
বিশ্বজুড়ে মাঙ্কিপক্সে আরও মানুষ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও আফ্রিকার বাইরে যেসব দেশে এখনো মাঙ্কিপক্সে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়নি সেই সব দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
সোমবার (২৩ মে) সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএইচওর বিশেষজ্ঞ মারিয়া ভ্যান কারখভ বলেন, বর্তমান যে পরিস্থিতি তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তিনি বলেন, ‘মানুষ থেকে মানুষে যাতে এ ভাইরাস না ছড়ায়, এটা আমরা চাই। যেসব দেশে এ ভাইরাস এখনো ছড়ায়নি সেসব দেশে আমরা এমন পদক্ষেপ নিতে পারি।’ খবর বিবিসির।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপ, আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ায় মাঙ্কিপক্সে আক্রান্তের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আফ্রিকার বাইরে এ ভাইরাস ছড়িয়েছে ১৬টি দেশে। এ পরিস্থিতিতে ডব্লিউএইচওর পক্ষ থেকে এমন কথা বলা হলো। মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণে সাধারণত ফোস্কা হয় এবং জ্বর হয়।
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস জানায়, মাঙ্কিপক্সে সংক্রমিত বেশির ভাগ রোগীই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সেরে ওঠেন। তবে মাঙ্কিপক্স তেমন গুরুতর না হলেও হঠাৎ রোগটির প্রাদুর্ভাব বিজ্ঞানীদের উদ্বিগ্ন করেছে। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এ রোগে সংক্রমিত ব্যক্তিদের তিন সপ্তাহ স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
এর আগে ডব্লিউএইচও প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও মাঙ্কিপক্স নিয়ে ‘ভয়াবহ’ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে বিশ্ব। এসব বিষয়ে বিশ্বকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
মাঙ্কিপক্সের বিস্তার নিয়ন্ত্রণযোগ্য, এর পেছনে কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, যদিও রোগের এবারের প্রাদুর্ভাব খানিকটা অস্বাভাবিক। তারপরও বলা যায়, অন্যান্য ভাইরাসজনিত রোগ যেমন কোভিডের মতো এটি সহজে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না।
এটি ছড়াতে খুবই ঘনিষ্ঠ শারীরিক স্পর্শের প্রয়োজন হয়। সাধারণত আক্রান্ত একজনের চামড়ার সঙ্গে অন্যজনের চামড়ার সংস্পর্শ থেকে এ রোগ ছড়ায়।
এছাড়া এটা কোভিডের মতো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মৃদু বা উপসর্গহীন নয়। বরং মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হলে শরীর খারাপ করবে এবং শরীরে ফোস্কার মতো গোটা দেখা দেবে। তাই কেউ এ রোগে আক্রান্ত কি-না, সেটা জানতে পরীক্ষা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে, সরাসরি এই রোগের টিকা এখনও সহজলভ্য না হলেও গুটিবসন্তের টিকা দিয়ে এ ভাইরাস প্রায় ৮৫ শতাংশ প্রতিরোধ করা সম্ভব। কারণ দুই ভাইরাসের মধ্যে মিল রয়েছে।
এমনকি মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধের জন্য সবার টিকা নেওয়াও প্রয়োজন নেই বলেও মত ডব্লিউএইচও বিশেষজ্ঞদের।
টিকার বিষয়ে ডা. রোসামুন্ড লুইস বিবিসিকে বলেন, বিশ্ব থেকে গুটিবসন্ত বিলুপ্ত হয়েছে। ওই সময়ে কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে গুটিবসন্তের টিকা মাক্সিপক্সের বিরুদ্ধে প্রায় ৮৫ শতাংশ কার্যকর।
মাঙ্কিপক্সের টিকাও আছে। কিন্তু সেটা তুলনামূলক নতুন এবং সব জায়গায় পাওয়া যায় না। যদিও ডব্লিউএইচও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা টিকা আরও সহজলভ্য করতে কাজ করছেন।
তবে সবার জন্য টিকার প্রয়োজন নেই বলে মত ডব্লিউএইচও বিশেষজ্ঞ ডা. মারিয়া ভ্যান কারখভ। তিনি বলেন, এ রোগ শুধু ঘনিষ্ঠ শারীরিক সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়।
আরএ/