দৈনিক হাজারের বেশি ডায়রিয়া রোগী আইসিডিডিআর’বিতে ভর্তি
ঢাকার আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশে (আইসিডিডিআর’বি) গত আড়াইদিনে ডায়রিয়ায় সংক্রমিত হয়ে প্রায় ৫ হাজার ৪০৭ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। গত সাত দিন ধরে দৈনিক ১১শ থেকে ১২শ রোগী ভর্তি হচ্ছেন আইসিডিডিআর’বিতে।
বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) আইসিডিডিআর’বি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডায়রিয়ার এমন পরিস্থিতির কথা জানায়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত আটদিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আট হাজারের অধিক রোগী।
ঢাকা মহানগর ও এর আশপাশের এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ায় মহাখালীর আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে প্রতি ঘণ্টায় ৫০-৬০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন।
আইসিডিডিআরবি কর্তৃপক্ষ বলছে, গত এক সপ্তাহ ধরেই ডায়রিয়ার এই প্রকোপ চলছে। বুধবার (২৩ মার্চ) ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে মোট ১ হাজার ২৭২ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। সে হিসেবে প্রতি ঘণ্টায় ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৫৩ জন। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ৫০২ জন ভর্তি হয়েছেন।
ডিউটিরত চিকিৎসক ক্লিনিকাল ফেলো আলী আমীন নবীন বলেন, গত সাতদিন ধরে দৈনিক ১১শ-১২শ ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে থাকছেন। যাদের অধিকাংশ ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ অবস্থায় রোগী সামলাতে চিকিৎসক নার্সসহ অন্যান্য স্টাফদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
চিকিৎসক আলী আমীন নবীন আরও বলেন, ২০০৮ সালের পরে এই প্রথম প্রতিদিন এত সংখ্যক রোগী হাসপাতালে পাচ্ছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনসহ করোনাকালীন আমরা অতিবাহিত করছি, এর মধ্যে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসাতে এক সঙ্গে অনেক মানুষ বাইরে আসছেন। তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন না, মাস্ক ব্যবহারসহ আগের মতো হাত পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে খাবার খাচ্ছেন না। শুধু তাই নয় তারা বাইরের খোলা খাবারও খাচ্ছেন। সেই সঙ্গে হঠাৎ করে আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে সম্ভবত ডায়রিয়ায় মানুষ বেশি সংক্রমিত হচ্ছেন বলে তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, ডায়রিয়া থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে বাইরের খোলা খাবারসহ খাবারের আগে হাত ধুয়ে নেওয়া, টয়লেট ব্যবহারের পর হাত সাবান দিয়ে পরিস্কার করা। সেই সঙ্গে খাবার পানি ফুটিয়ে খাওয়া এবং স্বাভাবিক পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকলেই রোগটি থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব।
তিনি বলেন, সব জায়গা থেকেই রোগী পাচ্ছি। বেশিরভাগ রোগী রাজধানীর মোহম্মদপুর, মিরপুর, আদাবর, শেখেরটেক ,যাত্রাবাড়ি, নরসিংদী, সাভার, মানিকগঞ্জ থেকে আসছেন। দক্ষিণখান এলাকার রোগীর সংখ্যা একটু বেশি ছিল। আবার ঢাকার বাইরে নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, টঙ্গী, জয়দেবপুর এসব এলাকা থেকেও ডায়রিয়া আক্রান্ত মানুষ বেশি আসছেন।
ডায়রিয়াতে সংক্রমিতদের ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক না খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে চিকিৎসক নবীন আরও বলেন, চিকিৎসকের পরামর্শে ওষধ সেবন করাই ভালো। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের প্রয়োজন হয় না। বিশেষ করে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় না। ডায়রিয়ার লক্ষণ দেখা মাত্র খাবার স্যালাইন নিয়ম অনুযায়ী খেলে অনেক রোগীকে হাসপাতালেও আসতে হয় না। ঘরে নিজে স্যালাইন তৈরি করে খেতে পারেন। আদা লিটার পরিস্কার ফুটানো পানির মধ্যে এক প্যাকেট স্যালাইন পুরোটা ভালো করে গলিয়ে বড়দের জন্য প্রতিবার পায়খানার পরে একগ্লাস আর ছোটদের ক্ষেত্রে বাচ্চাদের ওজন কতোটুকু এবং শারীরিক অবস্থাসহ পানি শূন্যতা কেমন এক কথায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শিশুর চিকিৎসা দেওয়া উচিত। এছাড়াও কোনো কারণে প্যাকেটজাত স্যালাইন পাওয়া না গেলে সেই ক্ষেত্রে একমুঠো গুড় বা চিনি তিন চিমটি লবনে আধালিটার পানির মিশ্রণেও স্যালাইন তৈরি করে খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
চিকিৎসক আলী আমীন আরও বলেন, ডায়রিয়া চিকিৎসায় হাসপাতালে নিয়মিত ২১ জন চিকিৎসক কাজ করেন। বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে চিকিৎসক বাড়ানো হয়েছে।
একটি সূত্র জানায়, আইসিডিডিআর’বি হাসপাতালে গত সাত দিনে ৮ হাজার ১৫২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। ২০১৮ সালের এপ্রিলেও এরকম পরিস্থিতি হয়েছিল। তখন ডায়রিয়া মহামারি আকার ধারণ করেছিল, যা মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
কেএম/আরএ/