বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের আবিস্কার
ডায়াবেটিসের আরও একটি কারণ জানা গেল
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আরও একটি কারণ জানা গেল। নতুন কারণ খুঁজে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের একদল বিজ্ঞানী। তারা জানিয়েছেন, ক্ষুদ্রান্ত্রের উপরের অংশে থাকা গুরুত্বপূর্ণ একটি জারক রস কমে গেলে এ রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই জারক রস চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ইন্টেস্টাইনাল অ্যালকেলাইন ফসফেটাস (আইএপি)।
গবেষণার তথ্য অনুসারে, যাদের শরীরে আইএপি এর পরিমাণ কমে যায়, তাদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ১৩ দশমিক ৮ গুণ বেড়ে যায়।
এ গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বারডেম হাসপাতালের ভিজিটিং অধ্যাপক ডা. মধু এস মালো । ডা. মধু এস মালো যুক্তরাষ্ট্রের হাভার্ড মেডিকেল স্কুলের সাবেক সহকারী অধ্যাপক। তিনি বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সোসাইটির উপদেষ্টাও। অধ্যাপক মালো ও তার সহকর্মীরা ডায়াবেটিসের সঙ্গে আইএপির সম্পর্ক নিয়ে কাজ করছেন ১৫ বছর ধরে।
বুধবার (২৩ মার্চ) ঢাকার বারডেমে এক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরেন তারা।
তারা জানান, ‘ইন্টেস্টাইনাল অ্যালকেলাইন ফসফেটাস ডেফিসিয়েন্সি ইনক্রিজেস দ্য রিস্ক অব ডায়াবেটিস’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রবন্ধ সম্প্রতি ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল ‘দ্য বিএমজে ওপেন ডায়াবেটিস রিসার্চ অ্যান্ড কেয়ার’ এ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়, ডায়াবেটিসের নতুন এই কারণ খুঁজে পাওয়ায় তা ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে বলে তারা আশা করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক মালো বলেন, শরীরে আইএপির পরিমাণ জানতে পারলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি আছে কি না, তা জানা সহজ হয়ে যাবে। আর মানুষের মল পরীক্ষার মাধ্যমেই সেটা জানা সম্ভব। স্টুল পরীক্ষার জন্য আমরা একটি কিটও বানিয়েছি। এছাড়া যে কোনো ল্যাবেও এ পরীক্ষা করানো যায়।
অধ্যাপক মালো জানান, গত ৫ বছরে ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী ৫৭৪ জন সুস্থ্য মানুষের ওপর গবেষণা করে ডায়াবেটিসের এ নতুন কারণ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, বংশগত কারণ এবং অন্যান্য পারিপার্শ্বিক কারণে ডায়াবেটিস হচ্ছে। বংশগত কারণ ঠেকানো না গেলেও অন্যান্য কারণগুলো জানা গেলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধের চেষ্টা করা যায়। অন্য ফ্যাক্টরগুলোর মধ্যে আমরা গুরুত্বপূর্ণ একটা ফ্যাক্টর চিহ্নিত করেছি। যাদের আইএপি কমে যায়, তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বেশি- এটা একটা যুগান্তকারী আবিষ্কার। এ আবিষ্কার থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরাও বড় কাজ করতে সক্ষম।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড রিসার্চ কাউন্সিল এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ গবেষণায় অর্থায়ন করেছে।
বারডেম হাসপাতাল, ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক যুক্ত ছিলেন এ গবেষণায়।
এপি/