ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন রাজধানী, জানুয়ারিতেই তীব্র শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা
ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন রাজধানী। ছবি: সংগৃহীত
পৌষের প্রথমার্ধ পেরিয়ে গেছে। এতদিন শীতের তীব্রতা দেশের বিভিন্ন জেলায় অনুভূত হয়েছে। তবে গতকাল নতুন বছরের প্রথমদিনে কুয়াশা মোড়া শীত হানা দিয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ প্রায় সারাদেশে। বহু জেলায় সূর্যের আলোকোজ্জ্বল মুখ প্রকটিত হয়নি। উত্তরবঙ্গের কোনো কোনো জেলায় শীত আর হিমেল বাতাসে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) সকাল থেকে কুয়াশার চাদরে ঢাকা রাজধানী। বইছে হিমেল বাতাস। জেঁকে বসেছে পৌষের শীত। আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা করছেন, ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের ওপরে এমন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়ার ত্রৈমাসিক পূর্বাভাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এই জানুয়ারিতে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে পারে। জানুয়ারিতে দেশে তিন থেকে আটটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তখন তাপমাত্রা নামতে পারে ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। এরমধ্যে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তখন তাপমাত্রা নামতে পারে ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তবে এরমধ্যে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তরপূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে তিন থেকে চারটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহে রূপ নিতে পারে। তখন তাপমাত্রা ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি পর্যন্ত নামতে পারে।
এছাড়া দুই মাস জুড়েই শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল ও নদনদী অববাহিকায় মাঝারি-ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা,মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। তবে কখনো কখনো উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরপূর্বাঞ্চলে কুয়াশা দুপুর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে এবং শীতের অনুভূতি বৃদ্ধি পেতে পারে। আর ফেব্রুয়ারি মাসের শেষার্ধে দেশের কোথাও কোথাও এক থেকে দুই দিন শিলাবৃষ্টিসহ বজ্রঝড় হতে পারে। আগামী পাঁচ দিনের আবহাওয়ার অবস্থা বলছে এ সময়ের শেষের দিকে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।
আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, জানুয়ারিতে একটি থেকে তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি এবং একটি থেকে দুটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ থাকতে পারে। গতকাল রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, সিলেট বিভাগে শীতের অনুভূতি বেড়েছে। ধীরে ধীরে মধ্যাঞ্চল হয়ে দেশের পূর্বাঞ্চল পর্যন্ত এর বিস্তার হতে পারে। দেশের পশ্চিমাঞ্চলে বিচ্ছিন্নভাবে শৈত্যপ্রবাহ থাকবে। প্রাথমিকভাবে এটি শুক্রবার পর্যন্ত থাকতে পারে। আগামী কয়েক দিন কুয়াশার পরিমাণও বেড়ে যাবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনের তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। সারা দেশে যে ঘন কুয়াশা পড়ছে সেটি কাটতেও সময় লাগবে। এছাড়া দেশ জুড়ে শৈত্যপ্রবাহের কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে অনুভূত তাপমাত্রা কম থাকবে।
তিনি আরও বলেন, পৌষ মাস বাংলাদেশের শীতকালীন মাস হিসেবে পরিচিত। এ সময়ে হিমেল বাতাস বা ঠান্ডা বাতাস অনুভূত হয়, যার জন্য কয়েকটি ভৌগোলিক এবং আবহাওয়াগত কারণ রয়েছে। এ সময় উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত হয়। এই ঠান্ডা বাতাস হিমালয় অঞ্চল এবং উত্তর পশ্চিম এশিয়া থেকে আসে। যা শীতকালে তীব্র শীতের কারণ হয়। যখন এই বাতাস বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তখন এগুলোর তাপমাত্রা অনেক কম থাকে, ফলে ঠান্ডা অনুভূত হয়। একই সঙ্গে আর্দ্রতা ও বৃষ্টিপাতের অভাব এবং জলীয় বাষ্পের কমে যাওয়ার ফলেও হিমেল বাতাসের অনুভূতি সৃষ্টি করে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নদী পরিবহণ এবং সড়ক যোগাযোগ সাময়িক ব্যাহত হতে পারে। গতকাল কুয়াশার কারণে সৈয়দপুরে বিমান ওঠা-নামা বন্ধ ছিল ৬ ঘণ্টা।
আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা জানিয়েছেন, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, এর বর্ধিতাংশ উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এ সময়ে ক্রমেই তাপমাত্রা কমতে থাকবে। আবার বাড়বে। পুরো শীতকালটা এমনই থাকবে। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় দেশের উত্তরের জনপদ দিনাজপুরে ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।