গান গাইতে গাইতেই মারা যেতে চান আশা ভোঁসলে

জীবন্ত কিংবদন্তি আশা ভোঁসলে। ছবি: সংগৃহীত
ভারতীয় সংগীতজগতের এক জীবন্ত কিংবদন্তি আশা ভোঁসলে। আট দশকেরও বেশি সময় ধরে সুরের জাদুতে মোহিত করেছেন অগণিত শ্রোতাকে। ৯০-এর গণ্ডি পেরিয়ে ৯১-তে পা দিলেও, কণ্ঠে আজও অটুট সেই সুরের জাদু।
তিনি মঞ্চে উঠলেই সৃষ্টি হয় এক অন্য জগৎ—যেখানে শুধুই সুর, তাল আর আবেগ। হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সম্প্রতি ‘কাপল অফ থিংস উইথ আরজে আনমোল এবং অমৃতা রাও’ -এর একটি পডকাস্টে এসে সংগীতজীবন ও ব্যক্তিগত জীবনের নানা অজানা গল্প ভাগ করে নিয়েছেন আশা ভোঁসলে।
সেই সোনালি দিনের কথা বলতে গিয়ে আশা তার প্রয়াত স্বামী কিংবদন্তি সুরকার আরডি বর্মণের বিনয়ী স্বভাবের কথা স্মরণ করে বলেন, এত বড় সংগীত পরিচালক হয়েও আর ডি বর্মণ কখনো অহংকার করেননি। টাকা-পয়সা কিংবা গয়না তাকে কিছুই আকৃষ্ট করতে পারে নি, বরং নতুন গান রেকর্ড করাই ছিল তার আসল আনন্দ।
এই পডকাস্টে আশা ভোঁসলে তাদের স্নেহের ডাকনাম নিয়েও কথা বলেন। জানান শুরুতে তিনি স্বামীকে ‘পঞ্চম’ বলে ডাকতেন। পরবর্তী সে একটা গান গেয়েছিল ‘বাবুয়া’ তারপর থেকে আর ডি বর্মণ তাকে ‘বাবুয়া’ বলে ডাকতেন, যা পরে আরও ছোট হয়ে ‘বাব’ হয়ে যায়। তবে লোকজনের সামনে সবসময় ‘আশা’ নামেই ডাকতেন।
মঞ্চে গান গাওয়ার সময় মানসিক চাপের কথাও তুলে ধরেছেন আশা এ পডকাস্টে।
তার মতে, ‘স্টুডিওতে একজন সঙ্গীত পরিচালক উপস্থিত থাকলে, সবকিছু সহজে হয়ে যায়। তবে মঞ্চে তিনি থাকেন না। মঞ্চে, আবেগ পুরো বিষয়টা দখল করে রাখে। গলা আটকে যায়, কণ্ঠস্বর কাঁপে। স্মৃতিগুলো ভেসে আসে - সেই রাতগুলো, সেই চিঠিগুলো, বালিশের কাছে রাখা সেই গোলাপগুলো। শ্রোতারাও তখন তাদের নিজস্ব অতীতকে পুনরুজ্জীবিত করে, তাদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে।’
৯১ বছর বয়সী, আশা তার সবচেয়ে বড় ইচ্ছের কথাও ভক্তদের সঙ্গে ভাগ করে নেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে তার এখন একমাত্র ইচ্ছা হল শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত গান গাওয়া। তার কথায়, ‘একজন মায়ের ইচ্ছা যেমন তার সন্তানরা ভালো থাকুক, একজন ঠাকুমার ইচ্ছা যেমন তার নাতি-নাতনিরা সুখে থাকুক। আর আমার একমাত্র ইচ্ছা হল, আমি যেন গান গাইতে গাইতেই মারা যাই।
আমার শেখার মতো আর কিছুই বাকি নেই। আমি আমার পুরো জীবন গেয়েছি। আমি মাত্র তিন বছর বয়স থেকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শেখা শুরু করি। প্লেব্যাক গান করছি ৮২ বছর হয়ে গেছে। অর এখন ইচ্ছে হল আমি গাইতে গাইতে মরতে চাই।এটাই আমাকে সবচেয়ে সুখী করবে।'
শেষে হাসিমুখে এই কিংবদন্তি শিল্পী বলেন, ‘আমি গান ছাড়া বাঁচিনা।
