দিদি পান খাবে? দেখলেই বাচ্চা ছেলের মতো বলতো রাশিদ: হৈমন্তী শুক্লা
ছবি: সংগৃহীত
বিনোদন জগতে আবারও নক্ষত্র পতন ৷ প্রয়াত হলেন উপমহাদেশের বিখ্যাত শাস্ত্রীয় সংগীতের অন্যতম গুণী শিল্পী ওস্তাদ রাশিদ খান ৷ কিংবদন্তি এ শিল্পীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে গোটা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। তার মুত্যুতে ভেঙ্গে পড়েছেন আরেক কিংবদন্তি শিল্পী হৈমন্তী শুক্লা।
মঙ্গলবার বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে দক্ষিণ কলকাতার একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি। মৃত্যুকালে ৫৬ বছরে পা রেখেছিলেন রাশিদ খান।
যাঁর কণ্ঠে মঞ্চ মাত হয়েছে বারংবার। শাস্ত্রীয় সংগীতের যে সম্ভার তিনি ভক্তদের উজাড় করে উপহার দিয়েছেন একাধিক গান। সেই সুর সম্রাট প্রতিবছর নিয়ম করে সংগীতশিল্পী হৈমন্তী শুক্লার কাছে ভাইফোঁটা নিতেন। এই দিনটা কিছুতেই মিস করতেন না তিনি। আদরের ছোট ভাই এই পৃথিবীতে আর নেই এটা ভাবতেই পারছেন না হৈমন্তী শুক্লা। কান্না ভেজা চোখে ভারতীয় বাংলা সংবাদ মাধ্যম এই সময়ের কাছে ছোট ভাইয়ের স্মৃতিচারণ করেছেন সংগীতশিল্পী হৈমন্তী শুক্লা।
সংগীতশিল্পী হৈমন্তী শুক্লা বলেন, ‘আমার সঙ্গে ভীষণ হৃদয়ের সম্পর্ক ছিল। ও অত বড় পণ্ডিত মানুষ, আমিও কখনও ভাবতাম না, ও কখনও বলেনি। আমি যতটুকুই গান গাইতাম, ও প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছে বারবার। খুব ভালোবাসত আমার গান শুনতে। অনেক বাংলা গান শুনেছে। আমার বাবার যে ক্লাসিক্যাল শিক্ষা ছিল, সেটা ওঁকে নাড়া দিয়েছে। খুব পছন্দ করতেন সবসময়। কোথাও দেখা হলে বা এক গাড়িতে কোথাও গেলে কত গল্প হত। আজ আর কিছুই বলতে ভালোলাগছে না। ও পান খেতে খুব ভালোবাসত। আমায় দেখলেই পান বানাতে শুরু করত। সব মনে পড়ছে।’
তিনি বলেন দুই ভাইবোন এক জায়গায় হলেই নানা ধরনের গল্প জমে উঠত। কত গান, কত মনের কোণে জমে থাকা আলোচনা। সে যেন আর ফুরায় না। আমি কেনা জর্দা খেলে বারণ করত। বলত, দিদি তুমি এগুলো খাবে না। অন্য একটা এনে দিচ্ছি সেটা খাও। চতুর্দিক থেকেই খুব খারাপ একটা সময়। শেষ বছর ভাইফোঁটা আর দিতে পারিনি। দুই বছর আগে সেই শেষ...। বাচ্চা ছেলের মতো আমার কাছে এলে কত কী বলত। আমি কপালে চুমু খেতাম। কত আদর করতাম। যেখানেই থাকুক ও সুরলোকে থাকুক। এর থেকে বেশি আর কী-ই বা বলতে পারি!
বেশ কিছু দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ওস্তাদ রাশিদ খান। গত কয়েক বছর ধরে শিল্পী প্রস্টেট ক্যানসারে ভুগছিলেন তিনি। এর মধ্যে সম্প্রতি তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (স্ট্রোক) হয়। সেখান থেকেই অবস্থার অবনতি শুরু। অবশেষে মঙ্গলবার বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে দক্ষিণ কলকাতার একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি।
১৯৬৮ সালের ১ জুলাই উত্তরপ্রদেশের বদায়ূঁতে জন্ম রাশিদের। তিনি রামপুর-সাসওয়ান ঘরানার শিল্পী। যে ঘরানার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইনায়েত হুসেন খাঁ-সাহিব। রাশিদ তালিম নিয়েছেন এই ঘরানারই আর এক দিকপাল উস্তাদ নিসার হুসেন খাঁ-সাহিবের কাছ থেকে। যিনি ছিলেন রাশিদের দাদু। রাশিদের মামা গোয়ালিয়র ঘরানার ওস্তাদ গুলাম মুস্তাফা খাঁ-সাহিবের থেকেও তালিম নিয়েছেন রাশিদ। মূলত শাস্ত্রীয় সঙ্গীত গাইলেও ফিউশন বা বলিউড এবং টলিউডের ছবিতে বহু জনপ্রিয় গানও গেয়েছেন শিল্পী।
পাশাপাশি বলিউডের একাধিক জনপ্রিয় সিনেমাতেও রয়েছে তার গান। যে তালিকায় আছে ‘যাব উই মিট’, ‘কিসনা’, ‘হাম দিল দে চুকে সনম’, ‘মাই নেম ইজ খান’, ‘রাজ ৩’-র মতো সিনেমা। এছাড়া বাংলাদেশেও একাধিকবার সংগীত পরিবেশন করেছেন এই শিল্পী।
১০-১১ বছর বয়সে কলকাতা চলে আসেন রাশিদ। সঙ্গীত রিসার্চ অ্যাকাডেমির স্কলারশিপ নিয়ে দাদু নিসার হুসেনের কাছে গান শেখা শুরু। তার পর থেকে গিয়েছেন কলকাতাতেই। ২০০৬ সালে পদ্মশ্রী ও ২০২২ সালে পদ্মভূষণ সম্মান লাভ করেন ওস্তাদ রশিদ খান। বাংলা থেকেও পেয়েছেন বঙ্গবিভূষণ সম্মান।