‘আমিই একমাত্র কাজ করে চলেছি’

ডিউক ফকির একজন বিখ্যাত প্রবীণ বাংলাদেশি। তিনি অত্যন্ত বিখ্যাত একজন ব্যান্ডস্টার। তার সাক্ষাৎকার অনুবাদ করেছেন ওমর শাহেদ।
চারজন হাইস্কুলের বালক--ডিউক ফকির, লিভাই স্টাবস, রেনাল্ডো ‘ওবি’ বেনসন এবং লরেন্স পেইটন। তারা একত্রে গান করতে খুব ভালোবাসতেন। তাদের গানের ব্যান্ডদল ‘ফোর টপস’ জন্মভূমি ডেট্রয়েটে ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে টানা ১০ বছর সক্রিয় ছিল।
এরপর তাদের ব্যান্ডদল ব্যারি গোডির মোটাউন লেভেলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ১৯৬৩ সালে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এরপর থেকে তাদের হিট গান আসতে শুরু করল স্রোতের মতো। খুব হিট করেছে ‘আই ক্যান্ট হেল্প মাইসেলফ’, ‘রিচ আউট আই উইল বি দেয়ার’, ‘ইটস দ্য সেম ওল্ড সং’। তাদের এমন গানের তালিকা আরও আছে। ফকির ডিউক আবার ফিরে এলেন ডেট্রয়েটে। তিনি ‘ফোর টপস’ গড়লেন নতুন করে।
এখনো গান করে চলেছে সক্রিয় এই ব্যান্ডদল। তাদের শুরুর দলটির একমাত্র গায়ক ও ব্যান্ড লিডার ‘ডিউক ফকির’। তার জন্য একটি অনন্য উত্তরাধিকারও। তার বয়স এই ২০২২ সালে ৮৬ বছর। তিনি এখনো সুস্থ আছেন। তার চারপাশে সত্যিকারের গায়কদের জড়ো করেছেন। তাদের ফোর টপস আসল পরিবারের সদস্যদের মধ্যে লরেন্স পেইটনের ছেলে লরেন্স পেইটন জুনিয়র আছেন। তিনি গান করেন ও বেস গিটার বাজান। এ সাক্ষাৎকারে তাদের গানের দলটি নিয়ে বলেছেন ডিউক ফকির।
কীভাবে আপনি আপনার এই ব্যান্ডমেটদের জড়ো করেছেন?
ডিউক ফকির: এই কাজটি আমার জন্য খুব সহজ ছিল। কেন না তারা সবাই আমাদের খুব ঘনিষ্ট ছিল। আমাদের সঙ্গে আছে লরেন্সের ছেলে। আছে গানের সহ-লেখক ও রেনাল্ডোর অত্যন্ত ঘনিষ্ট বন্ধু রনি মেকনেয়ার, আমাদের সঙ্গে ১২ বছর ধরে আছেন। তিনি আমাদের ৩০/৪০ বছর ধরে অত্যন্ত কাছের বন্ধু। আমাদের আজকের ব্যান্ডদলের তৃতীয় ব্যক্তিটি হলেন হ্যারল্ড বোনহার্ট। যে লিভাইয়ের মতো বাজাতে পারে। তিনি আজ কিংবদন্তি , তবে আমি তাকে আট বছর ধরে চিনি। আমাদের দলে কয়েক বছর ধরে আছেন। তিনি তৈরি আছেন। আমাদের সংগীতসুধা ভালো হচ্ছে। আমার কখনো সেখানে কোনোকিছু যুক্ত করতে হয়নি। আমরা সবাই খুব ঘনিষ্ট। আমাদের পরিবারে একজন তখন হাঁটেন, যখন সেটি সঠিক সময় হয়।
এখন যে লাইন আপ আছে, সেটি ক্ল্যাসিক লাইনআপের কতটা কাছাকাছি?
আপনি যতটা মনে করেন। এই ব্যান্ডটিই সবচেয়ে সেরা সাউন্ড ব্যান্ড যখন থেকে লিভাই গান করা থামিয়ে দিল। যখন থেকে ফোর টপসে ওবি এবং লরেন্স আর আমাদের সঙ্গে নেই। আমরা অত্যন্ত ঘনিষ্ট ছিলাম। দলের সঙ্গে থাকলে অবশ্যই আপনি সবার এ-গেম লাভ করবেন। আমাদের দলটি খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ। আমাদের ব্যান্ডদলগুলো যখন স্টেজে থাকে, তখন প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। আমাদের সেরা সময়ে থাকতে হয়, নচেৎ ড্রেসিংরুমে আলাপের বিষয় হয়ে যেতে পারি। আমাদের নিয়ে হাসি, ঠাট্টা হতে পারে। গানে আমরা একে, অন্যের সঙ্গে খেলি, সেটি আমাদের নিজেদের পায়ে দাঁড় করিয়ে রাখে।
মোটাউন লস অ্যাঞ্জেলসের চলে গেল ১৯৭২ সালে আলাদা ব্যান্ডদল হয়ে। তবে আপনি এখানে থেকে গেলেন?
আমরা ঘরের ছেলে ছিলাম। আমি একজন ডেট্রয়েট মানুষ। আমি তাকে ভালোবাসি। এটি গুরুত্বপূর্ণ এবং আনন্দিত যে, আমি লস অ্যাঞ্জেলসে বেরিয়ে পড়িনি। আমরা যেকোনো সময় সেখানে চলে যাবার একটি সুযোগ লাভ করেছিলাম। আমরা সেখানে সামান্য সময় কাজ করেছি। তবে আমার বাড়ি হলো ডেট্রয়েট। আমি তাকে ভালোবাসি। আমি এখানে আমার অবসর নেওয়া সব বন্ধুদের সঙ্গে গলফ খেলি। আমি তাদের সঙ্গে বেড়ে উঠেছি। তাদের মধ্যে আমিই একমাত্র যে এখনো কাজ করে চলেছি।
ফোর টপসের বিষয়ে অনেক লেখা হয়েছে। মানুষ জানে না এমন কোনো কিছু আমাদের বলুন...।
মানুষজন বুঝতে পারে না যে, যখন তারা একত্রে কাজ করে, একসঙ্গে থাকে ও কিছু কাজ করে সেটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সবার একটিই লক্ষ্য ছিল। আমরা ছোটবেলা থেকে সেটি নিয়ে থেকেছি। একমাত্র মৃত্যুই আমাদের আলাদা করতে পারবে-এমনটিই ভেবেছি। ফলে সেই কাজগুলো করা আমাদের জন্য সহজ ছিল। সাফল্যের জন্য একজনের চেয়ে একত্রে থাকা শক্তিশালী। মানুষ আমাদের ব্যান্ডদলের এই বিষয়টি জানে না।
তারা আরও জানে না, আমরা গানের কত ধরন রেকর্ড করেছি এবং গাইতে কতটা আনন্দ লাভ করেছি। আমরা সব ধরনের গানই গেয়েছি শুরু থেকে, কেবল আর অ্যান্ড বি নয়। আমরা গাইতে শুরু করেছি জ্যাজ,পপ, হিট প্যারেডি, কান্ট্রি, ওয়েস্টান, ব্লুজ, সবকিছুই আমরা গেয়েছি। হিপ হপে খুব ভালো করেছি। আমাদের কিছু কর্মী ছিলেন অ্যালবামের জন্য। তারা খুবই আশ্চর্য হতেন যে ফোর টপস এমন। আমি অমাদের নিজেদের রেডিও স্টেশনে সিরিয়াস বিষয় নিয়ে আলাপ করেছি। আমাদের একশ’র বেশি গান সেখানে আছে, যেগুলো মানুষ শোনেনি।
আপনারা কান্ট্রি মিউজিক করেছেন?
আমরা গেয়েছি। আমাদের কয়েকটি কান্ট্রি মিউজিক জনপ্রিয় হয়েছে। আমরা গান ভালোবাসি। আমরা এক ধরনের গান গেয়ে বড় হইনি। আমরা গান গাইতে গাইতে বড় হয়েছি। এমনকি যখন আমরা রেকডিং করতাম তখনো দেখতাম, কোনোকিছু সেখানে বাদ পড়ে গেল কি? আমরা কিছু কভার করেছি। ‘এলেনর রিগবি’, ‘মিশেল’, ‘ইউ নেম দেয়ার’।
তখন কি আপনারা বিটলসের ভক্ত ছিলেন?
অবশ্যই আমরা বিটলসের ভক্ত ছিলাম। তাদের ম্যানেজার ব্রায়ান অ্যাপস্টাইন আমাদের ফোর টপসকে একটি মার্কিন ট্যুরে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি আমাদের প্রোমোশনের জন্য কাজ করেছেন। আগের রাতে তিনি আমাদের প্রমোশনের জন্য কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘যদি তোমরা সেরা শো করতে পারো আজ রাতে, আমি তোমাদের গ্যারান্টি দিতে পারি তোমরা তোমাদের কনসার্ট ট্যুরের জন্য আসতে পারবে। প্রথম পাতায় খবর হবে। বছরের পর বছর তোমাদের মানুষ ভালোবাসবে। আমি তোমাদের এখানে বিটলসের মতো জনপ্রিয় করতে চলেছি।’ তিনি তাই করেছেন। যখন আমরা ফিরে এলাম, প্রথম পাতায় খবর হয়েছি। সব টিকিট বিক্রি হয়েছিল। একটি দারুণ ট্যুর করেছি। তিনি দি রোলিং স্টোন, দি বিটলস, স্মল ফেস এবং আরো কয়েকটি ব্যান্ড দলের সঙ্গে একটি পাটির আয়োজন করেছেন। আমি সেদিনের কথা কখনো ভুলতে পারি না। সবাই গান নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছি। এটি ছিল মহৎ কাজ। খুবই উত্তেজনাময়।
দিনের পর দিন এত হিট গান কীভাবে করেছেন?
আমি জন্ম থেকে একজন শিল্পী। আমার এই মানসিকতাটি আছে। আমরা যে গানগুলো করি, সেগুলো দর্শকরা যতদিন ভালোবাসেন, আমরা ততদিন কাজ করতে থাকি। এটি দেখতে পারা একটি আনন্দের বিষয় যে, আমাদের গান শুনে লোকে লাফ দিয়ে উঠছে, তারা উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছে। আমার জন্য এটি একটি থ্রিল। তারা আমাদের কাজের একটি অংশ হতে চায় এবং এ একটি বিষ্ময়কর বিষয়। এমন আর কোনো ভালোবাসা আপনি পেতে পারেন?
উল্লেখ্য. ডিউক ফকির নামের বিখ্যাত এই মানুষটির ভালো নাম আবদুল করিম ফকির। তিনি জন্মেছেন ১৯৩৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর। তিনি একজন আমেরিকান গায়ক। তিনি মোটাউন কোয়াটেট নামের ব্যান্ড দলের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। কোয়াটেট মানে হলো চতুষ্টয়। পরে তাদের ব্যান্ড দলের নাম বদলে হয় ফোর টপস। ১৯৫৩ সাল থেকে এই নামে আজ পযন্ত গাইছেন তারা। তাদের ব্যান্ডদলের তিনি একমাত্র কাজ করে যাওয়া সদস্য। তার দলে আছেন এখন রনি মেকনেয়ার, লরেন্স রোক্যাল পেইটেন জুনিয়র তিনি দলের আসল সদস্য লরেন্স পেইটেনের ছেলে এবং আলেকজান্ডার মরিস। ডিইক ফকিরের জন্ম আমেরিকার মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেট্রয়েট শহরে। তার বাবা বাংলাদেশ থেকে অভিবাসী ছিলেন।
ওএফএস/এমএমএ/
