রূপালি গিটার ছেড়ে চার বছর
রূপালি গিটারের তারে আঙুলের স্পর্শে আর উঠে না সুর। রাত-বিরাতে কিংবা দিনের আলোয় গিটারের অনন্য জ্যামিংয়ে কেউ আর মুগ্ধ হয় না। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের ভেতর সুরের চাষ করে মুগ্ধতার যে ফলন তিনি ফলিয়ে গেছেন তা আর কেউ পারেনি। তিনি বাংলা ব্যান্ড সংগীতের বিস্ময়কর রাজপুত্র আইয়ুব বাচ্চু।
কিংবদন্তি গায়ক, গীতিকার, সুরকার ও গিটারবাদক আইয়ুব বাচ্চুর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী মঙ্গলবার (১৮ অক্টোরব)। ২০১৮ সালের এই দিনে রুপালি গিটার ছেড়ে চলে গেছেন বহুদূরে।
তার চলে যাওয়ার চার বছরে এখনো ভক্তরা কাঁদেন তার গান, সুর ও গিটারের যাদুতে।
খ্যাতিমান এই শিল্পী ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার খরনা ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ইসহাক চৌধুরী ও মায়ের নাম নুরজাহান বেগম। বাচ্চুর শৈশব কাটে চট্টগ্রামেই। রক্ষণশীল পরিবারের সন্তান হওয়ায় সংগীতকে ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রহণ করতে অনেক সমস্যা পোহাতে হয়েছে।
তার প্রথম ব্যান্ডের নাম ‘সোলস’। আশির দশকের শুরুর দিকে মাত্র ১৬ বছর বয়সে ওই ব্যান্ডে যোগ দেন তিনি। ১৯৮৬ সালে তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘রক্তগোলাপ’ মুক্তি পায়। ১৯৮৯ সালে মুক্তি পায় দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘ময়না’।
১৯৯০ সালে যাত্রা শুরু হয় আইয়ুব বাচ্চুর নিজের ব্যান্ডদল। তবে শুরুতে এর নাম এলআরবি ছিল না। ইয়েলো রিভার ব্যান্ড (ওয়াইআরবি) ছিল। বাংলাদেশের প্রথম ডাবল অ্যালবাম ‘এলআরবি-১’ ও ‘এলআরবি-২’ মুক্তি পায় তারই হাত ধরে।
তার ব্যান্ড অ্যালবামের মধ্যে রয়েছে- এলআরবি, সুখ, তবুও, ঘুমন্ত শহরে, ফেরারী মন, স্বপ্ন, আমাদের বিস্ময়, মন চাইলে মন পাবে, অচেনা জীবন, মনে আছে নাকি নেই, স্পর্শ ও যুদ্ধ।
বেশ কিছু জনপ্রিয় একক অ্যালবামও উপহার দেন বাচ্চু। এর মধ্যে রক্তগোলাপ, ময়না, কষ্ট, সময়, একা, প্রেম তুমি কি! দুটি মন, কাফেলা, প্রেম প্রেমের মতো, পথের গান, ভাটির টানে মাটির গানে, জীবন, বলিনি কখনো, জীবনের গল্প উল্লেখযোগ্য।
চলচ্চিত্রের গানেও ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন খ্যাতিমান এই আইয়ুব বাচ্চু। বেশ কিছু সিনেমার গানে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তিনি।
মৃত্যুর আগে থেকেই নানা রকম অসুখে ভুগেছেন তিনি। ২০০৯ সালে হার্টে রিং পরানো হয়েছিল আইয়ুব বাচ্চুর। ফুসফুসে পানি জমায় ২০১২ সালের নভেম্বরে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। সুস্থ হয়ে সংগীত অঙ্গনে ফিরে এসে আবারও কাজ শুরু করেন।
২০১৮ সালের ১৬ অক্টোবর রংপুর জিলা স্কুলে ‘শেকড়ের সন্ধানে’ শিরোনামে একটি কনসার্টে অংশ নেন তিনি। সেখান থেকে ঢাকায় ফিরেই অসুস্থতা বোধ করেন। ১৮ অক্টোবর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে বাসা থেকে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বাংলা সংগীত জগতের উজ্জ্বল এই নক্ষত্র।
এএম/আরএ/