পপ সম্রাটের ৭২ তম জন্মদিন আজ

বাংলার পপ সম্রাট আজম খানের ৭২তম জন্মদিন আজ। ১৯৫০ সালের আজকের এই দিনে তিনি ঢাকার আজিমপুর সরকারি কলোনির ১০ নম্বর কোয়ার্টারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আফতাবউদ্দিন আহমেদ, মা জোবেদা খাতুন। পুরো নাম মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান হলেও তিনি আজম খান নামে সর্বাধিক পরিচিত।
তিনি একজন বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী, অভিনেতা, ক্রিকেটার ও বিজ্ঞাপনের মডেল ছিলেন। তার কর্মজীবনের শুরু ষাটের দশকের শুরুতে। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় তিনি ‘ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী’র সক্রিয় সদস্য ছিলেন। পাশাপাশি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণের বিরুদ্ধে গণসংগীত প্রচার করেন। সরাসরি মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নেন আজম খান। ১৯৭১ সালের পর লাকী আখন্দ, হ্যাপী আখন্দ, নিলু, মনসুর ও সাদেককে নিয়ে গড়ে তোলেন ব্যান্ডদল ‘উচ্চারণ’। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে বিটিভিতে আজম খানের ‘এত সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে’ ও ‘চার কালেমা সাক্ষী দেবে’ গান দুটি সরাসরি প্রচারিত হলে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
১৯৭৪ সালের তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে আরেকটি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ (রেললাইনের ঐ বস্তিতে) শিরোনামের গানটি গেয়ে হৈ-চৈ ফেলে দেন। বন্ধু ইশতিয়াকের পরামর্শে সৃষ্টি করেন একটি এসিড-রক ঘরানার গান ‘জীবনে কিছু পাব না’। বাংলা গানের ইতিহাসে এটিই প্রথম হার্ডরক সংগীত বলে বিবেচিত। ১৯৮২ সালে ‘এক যুগ’ নামে আজম খানের প্রথম অডিও অ্যালবাম বাজারে আসে। তার একক অ্যালবামের সংখ্যা ১৭ এবং দ্বৈত ও মিশ্র অ্যালবাম ২৫টির বেশি। তার উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে আলাল ও দুলাল, অনামিকা, হারিয়ে গেছেরো, বাংলাদেশ, ওরে সালেকা ওরে মালেকা, আসি আসি বলে, আমি যারে চাইরে, পাপড়ী, অভিমানি প্রভৃতি।
ব্যক্তিগত জীবনে সহজ সরল জীবন যাপন করতেন আজম খান। মাত্র ২১ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন আজম খান। ওই সময় প্রশিক্ষণ শিবিরে তার গাওয়া গানগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা জোগাতো। প্রশিক্ষণ শিবিরে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার পর তিনি কুমিল্লার সালদায় প্রথম সরাসরি যুদ্ধ করেন। যুদ্ধে দুই নম্বর সেক্টরের একটা সেকশনের ইনচার্জ ছিলেন তিনি। এসময় ঢাকা ও এর আশপাশে বেশ কয়েকটি গেরিলা আক্রমণেও অংশ নেন আজম খান। বিশেষত যাত্রাবাড়ী-গুলশান এলাকার গেরিলা অপারেশনগুলো পরিচালনার দায়িত্ব পান তিনি। তার নেতৃত্বে সংঘটিত হয় ‘অপারেশন তিতাস’।
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দুরারোগ্য ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে ২০১১ সালের ৫ জুন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাংলা পপ সঙ্গীতের এক পথপ্রদর্শক আজম খান। সঙ্গীতে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করেন।
এখনো নিজের গাওয়া গানের মাধ্যমে বেঁচে আছেন আজম খান। তার গাওয়া ‘বাংলাদেশ’, ‘রেল লাইনের ঐ বস্তিতে’, ‘ওরে সালেকা, ওরে মালেকা’, ‘আলাল ও দুলাল’, ‘অনামিকা’, ‘অভিমানী’, ‘আসি আসি বলে’ এর মতো অসংখ্য গান এখনো হৃদয়ে দোলা দিয়ে যায়।
