‘ভারতের গানের পাপিয়া’র ১১টি অজানা
গানে লতা মঙ্গেশকরের ৭০ বছরেরও বেশি সুদীর্ঘ ক্যারিয়ার ছিল। তাকে বিবেচনা করা হয় সবচেয়ে সেরা ভারতীয় প্লেব্যাক গায়িকা। ৯২ বছর বয়সে চলে গেলেও তার সুরেলা কন্ঠগুলোর মাধ্যমে বেঁচে থাকবেন। অমর একক ও চিরস্থায়ী ডুয়েটগুলো-মোহাম্মেদ রাফি, কিশোর কুমার ও মুকেশের সঙ্গে; আরো বিপুল প্রতিশ্রুতিশীল ভারতীয় গায়কদের নিয়ে; বহু হিন্দি ছবির সবচেয়ে স্মরণীয় গানগুলোতে ছড়িয়ে, ছিটিয়ে আছে।
১. তিনি পারফরমারদের একটি পরিবার থেকে এসেছেন। লতা মঙ্গেশকরের বাবা দীননাথ মঙ্গেশকর চালাতেন একটি থিয়েটার কম্পানি। ফলে তিনি বেড়ে উঠেছেন গানের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে। এই বোনরা (লতা মঙ্গেশকর ও আশা ভোঁসলে) যখন গানকে তুলে নিলেন কন্ঠে, তাদের জীবনের লক্ষ্য ছিল, গানের মাধ্যমে বাবার উত্তরাধিকারকে বয়ে চলা।
২. কেন গানকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন? উত্তরটি এভাবেই দিয়েছেন লতা, ‘এটি তাই ঘটে গেল একদিন, যেদিন আমার বাবা তার সগেরেদকে একটি রাগ অনুশীলন করতে বললেন, এরপর তিনি কিছু কাজ শেষ করতে গেলেন। আমি তখন আশপাশে খেলছিলাম। হঠাৎ সাগরেদের সঙ্গে রাগটির একটি নোট বিনিময় করলাম। এরপর তিনি কর্কশ কণ্ঠে যেটি গাইছিলেন, পরের মিনিটে সেটি শুদ্ধ করে দিলাম। আমার বাবা ফিরে এলেন। আমার রাগ অনুশীলন করা দেখে একজন সাগরেদকে নিজের মেয়ের মধ্যে দেখলেন।’ এভাবেই গানের ভুবনে চলে এলেন ভারতের সবচেয়ে বড় গায়িকা।
৩. লতা মঙ্গেশকর সুদীর্ঘ ফিল্ম জীবনের প্রথম গানটি রেকর্ড করেছিলেন ১৯৪২ সালে, মারাঠি সেই ছবিটির নাম-‘কিটি হাসাল’। গানটি ছিল ‘নাচু ইয়া গেড, খেলু সারি মানি হাউস ভারি।’ তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ছবির ফাইনাল কাটে গানটি মুছে ফেলা হয়েছে।
৪. গানের রেকর্ডিংয়ের সময় তিনি একবারই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। ভারতের বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক নওশাদের সঙ্গে গানটি রেকর্ডিং করছিলেন। বলেছেন, 'আমরা গানটির রেকডিং করছিলাম একটি দীর্ঘ, গরমের দুপুরে। আপনারা সবাই জানেন, গরমে মুম্বাইয়ের কেমন অবস্থা হয়। সেই দিনগুলোতে, তখন কোনো এয়ার কন্ডিশনিং ব্যবস্থা ছিল না মুম্বাইয়ের সিনেমার রেকর্ডিং স্টুডিওগুলোতে। ফাইনাল বা চূড়ান্ত রেকর্ডিংয়ের সময় সিলিং ফ্যান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ব্যাস, গরমে বেহুঁশ হয়ে গিয়েছি আমি।’
৫. একবার বলিউড হাঙ্গামাকে বলেছেন, তিনি তার নিজের গানগুলো শোনেন না। ভয় পান-তাহলে শত, শত ভুল পেতে পারেন নিজের গানে।
৬. তার ভাষায়, সেরা সঙ্গীত পরিচালক যার সঙ্গে কাজ করেছেন এবং যার সঙ্গে তার একটি বিশেষ বন্ধন ছিল; তিনি মদন মোহন। কথাগুলো বলেছেন লতা ২০১১ সালে সংগ্রাহকদের জন্য প্রকাশিত তার একটি বিশেষ অ্যালবাম- 'তেরি সুর আউর মেরি গীত’র প্রকাশনা উৎসবে। আরো বলেছেন, ‘আমি একটি বিশেষ সম্পর্ক ভাগ করে নিয়েছি মদন মোহনের সঙ্গে। এটি ছিল একজন শিল্পী ও একজন সঙ্গীত পরিচালকের ভাগ করে নেওয়া সম্পর্কের চেয়ে অনেক বেশি। ছিল একজন ভাই ও বোনের মতো।’ ১৯৬৪ সালে বেরুনো ‘জাহান আরা’ ছবিতে তাদের কাজ ‘ওহ চুপ রাহো’ গানটি তার প্রিয়।
৭. ভারতের সংসদের সদস্য ছিলেন অনেকগুলো বছর-১৯৯৯ থেকে ২০০৫ সাল। রাজ্যসভায় (উচ্চ কক্ষ) তিনি অসুখী মেয়াদকাল কাটিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। দাবী করেছেন, পরের বার নির্বাচিত হতে অনিচ্ছুক ছিলেন।
৮. কেবল ভারতীয় গানের কিংবদন্তী ছিলেন না লতা মঙ্গেশকর। পুরো বিশ্বজুড়ে তার সুরেলা কন্ঠ, মেলোডির জাদুকে ভালোবাসা মানুষদের পাওয়া যায়। লন্ডনের মর্যাদাপূণ অ্যালবার্ট হলে সঙ্গীত পরিবেশন করা ইতিহাসের প্রথম ভারতীয় তিনি।
৯. ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত গিনেজ বুক অব ওয়াল্ড রেকর্ডস লতা মঙ্গেশকরকে সবচেয়ে বেশি রেকর্ড করে ফেলা শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। তবে দাবীটিকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন মোহাম্মেদ রাফি। ফলে বিশ্বরেকর্ডের বইটি লতার নামটি তাদের পরের সংস্করণগুলোতে রেখেছে, মোহাম্মেদ রাফির নামও উল্লেখ করেছে। রেকর্ডটি তারা ১৯৯১ সাল পযন্ত টানা উল্লেখ করে বাদ দিয়েছে। ২০১১ সালে লতাই আপন বোন আশা ভোঁসলেকে বিশ্বের সবচেয়ে রেকর্ড করা শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে গিনেজ। এখন সম্মানটি পুলাপাকা সুশিলা বহন করছেন। তিনি দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার প্রখ্যাত গায়িকা।
১০. সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে লতা মঙ্গেশকর ভারতের মহত্তম গীতিকার ও সঙ্গীত পরিচালকদের সবার সঙ্গে কাজ করেছেন। তবে কখনো ওপ নাইয়ারের সঙ্গে কোনোদিন কাজ করেননি।
১১. জীবনের শেষ গানটি রেকর্ড করেছেন ২০১৯ সালে। জাতি ও ভারতের সেনাবাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা, কম্পোজার ছিলেন ময়ুরেশ পাই। প্রথম কলি হলো-'সওগান্ধ মুজে এজ মেট্টি কী’। সে বছরের ৩০ মার্চ প্রকাশিত হয়েছে শেষবারের মতো লতা মঙ্গেশকরের কন্ঠ।
(ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে)