সিনেমা ও পোস্টারে ধূমপানের দৃশ্যের বিরুদ্ধে ‘মানস’ এর বিবৃতি
নায়ক শাকিব খান তার নতুন সিনেমা ‘প্রিয়তমা’র ফার্স্টলুক পোস্টার প্রকাশ করেছেন বুধবার (১০ মে)। যেখানে দেখা গেছে শাকিব তার চুলে ঝুঁটি বেধে ঠোঁটে রেখেছেন জ্বলন্ত সিগারেট।
অন্যদিকে, একই দিন আফরান নিশো অভিনীত সিনেমা ‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমার ফার্স্টলুক প্রকাশ পেয়েছে। যেখানে দেখা গেছে একটি সুড়ঙ্গতে প্রবেশ করে তিনি সিগারেট ধরিয়েছেন।
দুই নায়কের এমন কাণ্ডে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন লঙ্ঘন হয়েছে বলে নিন্দা জানিয়ে লিখিত বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট।
‘আইন লঙ্ঘন করে ধূমপানে উৎসাহিত করছেন শাকিব ও নিশো!’- শিরোনামে ঢাকাপ্রকাশ-এ সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর লিখিত এই বিবৃতি দিয়েছেন তামাক বিরোধী জোটের পক্ষে সৈয়দা অনন্যা রহমান।
এবার তরুণদের বাঁচাতে নাটক, চলচ্চিত্রে ধূমপানের দৃশ্য বন্ধ করার দাবিতে লিখিত বিবৃতি দিয়েছে মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা (মানস) এর প্রকল্প কর্মকর্তা, মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা (মানস) মো. আবু রায়হান।
সোমবার (১৫ মে) লিখিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘টেলিভিশন, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ও বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত নাটক, চলচ্চিত্র, ওয়েবসিরিজে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলোকে দিয়ে ধূমপানের দৃশ্য প্রদর্শন আমাদের তরুণ প্রজন্মকে ধূমপানে প্ররোচিত করছে। এতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের লঙ্ঘণ হচ্ছে, যা প্রধানমন্ত্রী’র ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ ঘোষণার সাথে সাংঘর্ষিক। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তদেরকে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা (মানস) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী।’
ড. চৌধুরী বলেন, ‘সুস্থ বিনোদনের অন্যতম চলচ্চিত্র, নাটক, ওয়েবসিরিজে নেতিবাচক দৃশ্য প্রচার (বিশেষত: ধূমপানের দৃশ্য) পরিহার করা উচিৎ। কারণ, মানুষ এগুলো অনুসরণ করে এবং বিশেষ করে আমাদের তরুণ সমাজ এর দ্বারা প্রভাবিত হয়। সুতরাং, রাষ্ট্রীয় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে নির্মাতা, শিল্পী ও কলা-কূশলীদেরকে চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রচার করা অত্যন্ত জরুর। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন, বিধি লঙ্ঘণ করে ইতোপূর্বে নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, নাটক ও প্রামাণ্যচিত্র সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নতুন করে নির্মিত ছাড়পত্র না দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনীতিতে তামাকের আগ্রাসন রোধে ২০০৫ সালে দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও ২০০৬ সালে সংশ্লিষ্ট বিধি প্রণয়ন করা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। তার এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫’ (২০১৩ সালে সংশোধিত) ধারা-৫ (ঙ) অনুসারে, বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত বা লভ্য ও প্রচারিত, বিদেশে প্রস্তুতকৃত কোন সিনেমা, নাটক বা প্রামান্যচিত্রে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য টেলিভিশন, রেডিও, ইন্টারনেট, মঞ্চ অনুষ্ঠান বা অন্য কোন গণমাধ্যমে প্রচার, প্রদর্শন বা বর্ণনা করিবেন না বা করাইবেন না: মর্মে বলা হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আইনে নিষিদ্ধ থাকলেও সাম্প্রতিককালে নির্মিত ও প্রচারিত বিভিন্ন চলচ্চিত্র, নাটক, ওয়েবসিরিজে ধূমপানের দৃশ্য প্রদর্শন করা হচ্ছে। সম্প্রতি, ‘প্রিয়তমা’ ও ‘এক রাতের গল্প’ সিনেমার পোস্টারে এবং ‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমার টিজারে জনপ্রিয় অভিনেতাদের মাধ্যমে ধূমপানের দৃশ্য প্রদর্শন করা হয়েছে, যা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা ও বিধি তোয়াক্কা না করেই অনেক নির্মাতা চলচ্চিত্র/নাটক নির্মাণ ও সম্প্রচার করছেন, যা আমাদের তরুণ সমাজকে মাদকাসক্তির শিকার বানাচ্ছে। রীতিমতো এ বিষয়টি এখন চরম উদ্বেগের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
এএম/এমএমএ/