ভিজ্যুয়াল ইফেক্টসের অস্কার পেল ‘অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’
এ বছরের অস্কারে ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস বিভাগে সেরা পুরস্কারটি নিয়ে ফিরেছে ‘অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’। আগের অ্যাভাটার’র ম্পেশাল ইফেক্টসগুলোর সাফল্যের পর প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত উন্নয়নগুলো নির্মাণ করতে অ্যাভাটার সিরিজের এই দ্বিতীয় ছবিটির ছয় বার মুক্তি দেওয়ার তারিখ পেছানো হয়েছিল।
এই ছবির কল্যাণে ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস আর্টিস্ট জো লেটারি তার পঞ্চম অস্কারটি নিয়ে ঘরে ফিরলেন। তার সঙ্গে যৌথভাবে অস্কারটি আরেকজন প্রধান হিসেবে ভাগ করেছেন এই ছবির দৌলতে এরিক সেইনডন। তাদের দলে আরো আছেন অনেকে। এরিক ‘লর্ড অব দ্য রিংস’ ছবির ‘গ্রাহাম’ চরিত্রটি তৈরি করতে সাহায্য করেছেন।
জো বলেছেন, ‘আমি কেবল গল্পটি, চরিত্রগুলো এবং এখানে সংশ্লিষ্ট সবকিছুকে ভালোবেসেছি।’ তিনি এবং এরিক চরিত্রগুলোর অনুভূতিগত গভীরতাগুলো বিবেচনা করেছেন এই ছবিটি বানানোর ক্ষেত্রে এবং অ্যাভাটারের নতুন কাহিনীটির ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে দর্শকদের যোগাযোগ করাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূণ দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে দেখে কাজ করেছেন ।
এই জুটি ‘দ্য ওয়েটা এফএক্স ভিজ্যুয়াল টিম’র অংশ এবং এই দলটিই ছবিটির ৯৮ শতাংশ শুটে কাজ করেছে।
পারফরমেন্স ক্যাপচার টেকনোলজির পাশাপাশি ওয়েটা এফএক্স টিম একটি প্রাকৃতিক নেওটওয়ার্কনির্ভর চেহারাগত ব্যবস্থা তৈরি করেছে ছবিটিতে। এ ছাড়া, সিনেমার চরিত্রগুলোকে পর্দায় আসল চরিত্রের মধ্যে দেখাতে সেভাবে মানসম্পন্ন করে তারা তৈরি করতে সাহায্য করেছেন।
এই ব্যবস্থায় তারা মানচিত্র ব্যবহার করে তাতে কালো বিন্দুর একটি সিরিজ ব্যবহার করেছেন পাত্র-পাত্রীদের চেহারাগুলো যাতে তাদের চেহারাগুলোর নানা ধরনের ফিচার করতে পারেন ও মাংসপেশীগুলোকে কম্পিউটারনির্ভর মানচিত্রের মাধ্যমে আনতে পারেন।
সব কাজের জন্যই অ্যানিমেটররা তাদের মেধার পাশাপাশি পুরোপুরি কম্পিউটার প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েছেন। ছবিটিতে অনেকগুলো পানির নীচের শুট ছিল। তখন তারা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের শরীরে ক্যামেরা বেঁধে দিয়েছেন যাতে তাদের পরম্পরের অভিনয়কালে তাদের মাধ্যমেই চেহারাগুলোর অভিনয় রেকর্ড করা যায়। তাদের শরীরের দৃশ্যগুলো ধারণের জন্য তারা দ্বিতীয় ক্যামেরাগুলোর ব্যবহার করেছেন।
দ্য ওয়েটা এফএক্স কর্মীরা গভীর কম্পোজিশনে গিয়েছেন, যাতে জিজি চরিত্র (কম্পিউটারে অ্যানিমেশনের মাধ্যমে তৈরি করা ডিজিটাল চরিত্র) করতে পারেন। তারা জিজি ভিজ্যুয়ালাইজেশন ব্যবহার করেছেন। লাইভ অ্যাকশন অবজেক্টগুলো ব্যবহার করেছেন।
এ ছাড়া, চরিত্রগুলোকে সেটে একত্র করে কাজ করেছেন। অ্যালগরিদমের সাহায্য নিয়েছেন। সেটগুলো ক্যামেরা ও কম্পিউটারে স্ক্যান করেছেন, সেভাবে পাত্র-পাত্রী এবং তাদের কস্টিউমগুলোকেও এই দুই প্রযুক্তিতে ও কম্পিউটারে স্ক্যান করেছেন।
‘এই বিষয়গুলো আমাদের প্রথম ছবিটি থেকে আশাবাদী করেছে এবং আমরা এই কাজগুলোকে চূড়ান্তভাবে সিনেমাটিতে কাজ করাতে পেরেছি’, বলেছেন জো।
এরিক বলেছেন ‘বড় বাজেটের ছবিগুলোতে এই খাতে অনেক টাকা থাকে এবং অমাদের দলগত কাজের মাধ্যমে আপনারা ভুলে গিয়েছেন তারা জিজি চরিত্র এবং আপনাদের তাদের জন্য অনুভূতি তৈরি হয়েছে।’
এ ছাড়া, ছবিটিকে পারিবারিক ছবি হিসেবে বানানো হয়েছে। তাদের ভুবন প্যানডেরাতে দর্শকদের নিয়ে যাওয়ার ফলে ভিজ্যুায়াল ইফেক্টস ও কাহিনী দারুণভাবে কাজ করেছে এবং তাদের কাজ সহজ হয়েছে।
সিনেমাটিকে পানি নিভর করে বানানো হয়েছে। এই কাজ সহজে করতে তারা সাগরের সেটে গিয়েছেন। কেননা অন্য জায়গার পানি এত ভালো, স্বচ্ছ ও উন্নত হয় না। এজন্য আগের খসড়া কাজটি করেছে দ্য ওয়েটা এফএক্স টিম।
দ্য ওয়েটা এফএক্স টিমের সঙ্গে কাজ করেছেন বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিউজিল্যান্ডের ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলিংংটনের একদল বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক। তারা সিনেমাটির জন্য নতুন ধরনের কোরাল বা প্রবালগুলো তৈরিতে প্রধান ভূমিকা রেখেছেন।
দলটি সফটওয়্যার লিখেছে ও তৈরি করেছে যাতে প্রবালগুলোকে বাড়ছে দেখানো যায় এবং সেগুলো সত্যিকারভাবে নাড়াচাড়া করছে বলে দর্শকের মনে হয়। এ ছাড়া, পানির বিশ্বটিকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করতে তাদের তৈরি সফটওয়্যারগুলো কাজ করেছে।
একই রকম দেখতে নানা বিষয়কে যুক্ত করার ধারায় তারা কাজ করে ছবিটির অনেক পানির নীচের চরিত্র ও জীবনকে একত্রে এনেছেন।
‘আমরা তিমি, ডলফিন এবং অন্য বিভিন্ন ধরনের প্রাণীদের নিয়ে কাজ করেছি ও মোশন স্টুডিওগুলোতে কাজ করেছি। এ ছাড়া, তারা কীভাবে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেটিও আমরা একেবারে মনোযোগ দিয়ে খুব ভালোভাবে শিখেছি। এই অভিজ্ঞতা চরিত্রগুলোকে তাদের মান ও গুণ অনুসারে কার্যকর করতে মুহূর্তগুলোতেও সাহায্য করেছে’, বলেছেন এরিক।
জো যুক্ত করেছেন, ‘আমাদের প্রতিটি দিনই ছিল একটি বিদালয়ের দিন।’ এই ছবিতেই আইরিশ অ্যানিমেটর রিচার্ড বানেনহাম ও তার সহকর্মীরা তাদের সবচেয়ে বড় জয়টি ব্যক্তিগতভাবে লাভ করেছেন। এই নিয়ে দুইবারের অস্কারজয়ী বানেনহাম এবং তার দলটি ‘দ্য অস্কার ফর দ্য স্পেশাল ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট’ জয় করেছেন তাদের জেমস ক্যামেরনের ছবি ‘অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’র জন্য।
বানেনহামের জন্ম আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনের আঁকাবাঁকা ডাবলিন পর্বত প্রণালীর নিচে উপনগরী টেলাতে। তিনি ভিজ্যুয়াল ইফেক্টনিভর বিশ্বের সবচেয়ে বড় ছবি যেমন ‘দ্য লড অব দি রিংস ট্রিলজি’, ‘দ্য ক্রনিকলস অব নারনিয়া’ এবং ‘দ্য অ্যাভাটার’ তৈরির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন হাতে-কলমে। পড়েছেন তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসে, যেখানে আছে হলিউড, সেখানে যাবার আগে ব্যালিফারমেট কলেজে ট্রেড নিয়ে পড়ালেখা করেছেন।
তিনি ‘অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’ ছবির জন্য তাদের অস্কারটি জয়ের সময় মঞ্চের ভাষণে বলেছেন তার প্রাচীন আইরিশ ভাষার প্রবাদ টেনে-‘সত্যিকারভাবে ধন্যবাদটি জেমস ক্যামেরনকে যার ছবির প্রতিটি ফ্রেমে নিজের চিহ্নটি রয়ে গিয়েছে। আমরা একটি বিরাট কর্মীদলের পক্ষে এই পুরষ্কারগুলো গ্রহণ করছি। এই ইফেক্টগুলো আমাদের অভিনেতা-অভিনেত্রীকে কাঁধের ওপর দাঁড়িয়েছে, তাদের পারফরমেন্সগুলোই হলো সবকিছু।’
৪৯ বছরের এই অ্যানিমেটরই ছিলেন তাদের এই সিরিজের প্রথম ছবি ‘অ্যাভাটার’র অ্যানিমেশন বিভাগের সুপারভাইজর। সিনেমাটি ইতিহাসের সবচেয়ে সফল বাণিজ্যিক ছবির খ্যাতি লাভ করেছে। আর এই ছবিটিও ব্লকবাস্টার হয়েছে তাদের কল্যাণে।’
ওএফএস/