ফেমের আইরিন কারা মারা গেছেন
ফেমের আইরিন কারা সোমবার (২৮ নভেম্বর) ফ্লোরিডার লারগোর নিজ বাড়িতে মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।
জুডিথ মস তার মৃত্যুর খবর জানিয়ে বলেছেন টুইটারে, ‘আপনাদের ভাবনা ও আইরিনকে নিয়ে স্মৃতিগুলো দয়া করে শেয়ার করুন।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘আমি তাদের প্রত্যেকের লেখাগুলো পড়ব এবং জানব সে স্বর্গ থেকে হাসছে। আইরিন কারা তার ভক্তদের পূজা করতেন।’
আইরিন কারা’র ‘স্পার্কেল’ ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয়ের মাধ্যমে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তিনি স্পার্কেল উইলিয়ামস চরিত্রটি করেছেন। এই চরিত্রটিই তাকে খ্যাতি এনে দিতে শুরু করল। মুক্তি পেয়েছে ১৯৭৬ সালে। একটি মিউজিক্যাল সিনেমা। তবে সবচেয়ে বিখ্যাত হয়েছিলেন তার ‘কোকো হারনানদেজ’ চরিত্রটির জন্য। ১৯৮০ সালের ছবি। নাম ‘ফেম’। তাকে আরও বিখ্যাত করেছে সিনেমার মূল গান ‘ফেম’ গেয়েছেন বলে।
বিশ্বের কয়েকটি দেশে তার গানটি এক নম্বরে ছিল অনেক দিন। ১৯৮০ সালের ফেম ছিল নিউ ইয়র্ক হাই স্কুল ফর দি পারফমিং আর্টকে নিয়ে। এখানে তার আরেকটি উল্লেখযোগ্য কাজ হলো গীতিনাট্য-‘আউট হেয়ার অন মাই ওন’। এই কাজের জন্য তিনি সেবারের একটি গোল্ডেন গ্লোব এবং দুটি গ্র্যামিতে মনোনয়ন লাভ করেছেন।
তাকে পুরস্কার এসে দিয়েছে, ‘ফ্ল্যাশডান্স...হোয়াট অ্যা ফিলিংস’। একটি গান, আইরিন কারা ছিলেন সহ-গীতিকারও। তিনি গেয়েছেন তার অভিনয় করা ‘ফ্ল্যাশডান্স’ ছবিতে। এই গানটির জন্য তিনি অস্কার জয় করেছেন সেরা আসল গানের। একটি গ্র্যামিও জিতেছেন ‘সেরা নারী কন্ঠের পপ গান’, ১৯৮৪ সালে। গানটি রেডিওতে অসাধারণ জনপ্রিয় হয়েছে।
তার ভালো নাম আইরিন কারা স্কালেরা। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের ব্রুনস্কে জন্ম। তারা মোট পাঁচ ভাইবোন, তিনি সবার ছোট। খুব আদরে মানুষ। তার সঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসার শুরু বাবার কাছ থেকে। নাম তার গ্যাসপার কারা। তিনি একজন কারখানার শ্রমিক ছিলেন। আগে স্যাক্সোফোন বাজিয়েই সংসার চালাতেন। পুয়ের্তোরিকোর নাগরিক,বহু কষ্টে আমেরিকায় অভিবাসী। আইরিনের মা লুইজ এস্কালেরা আবার কিউবার মেয়ে।
তিনি ছিলেন একটি থিয়েটারের দারোয়ান। ফলে গান ও অভিনয়ের পোকা ব্যর্থ মা-বাবার কাছ থেকেই পেয়েছেন পুরোপুরি আইরিন। তারা যে স্বপ্নগুলো সফল করতে পারেননি, সেসব অর্জনের জন্য মেয়েকে গড়ে তুললেন মনের মতো করে। তিনিও হলেন দারুণ সফল।
মাত্র তিন বছরে আলো-আঁধারের ভুবনে আইরিনের প্রবেশ। অংশ নিলেন মা-বাবার সঙ্গে ‘লিটল মিস আমেরিকা’ প্রতিযোগিতায়। পাঁচ বছর বয়স থেকে নাচের ক্লাস করা শুরু করলেন আইরিন কারা।
শিশু শিল্পী হিসেবে লাতিনভাষীদের জন্য স্প্যানিশ ভাষায় রেকর্ড করেছেন তিনি। একটি ইংরেজি বড়দিনের অ্যালবাম করেছেন।
পড়ালেখার শুরু তার ম্যানহাটনের পেশাদার শিল্পীদের বিদ্যালয়ে। অভাবী আইরিনের কর্মজীবনের শুরুটি হয়েছে একটি বারে পিয়ানো বাদিকা হিসেবে। অভিনয় ও নাটক গুরুত্ব দিয়ে করতেন তখন থেকে।
তার টিভিতে পেশাজীবনের শুরু হলো একটি স্প্যানিশভাষী টেলিভিশনে গান ও নাচের মাধ্যমে।
প্রথম দিকে তিনি টিভিতে অংশগ্রহণ করেছেন ‘দি অরিজিনাল অ্যামেচার’ নামের একটি অনুষ্ঠানে স্প্যানিশ গান গেয়ে। আরেকটি উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান হলো জনি কারসেনের ‘দি টু-নাইট শো’।
১৯৭১-৭২ সালে তিনি আমেরিকার অলাভজনক ও বিনামূল্যের স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল দি পাবলিক ব্রডকাস্টিং সার্ভিস (পিভিএস)’র শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান ‘দি ইলেকট্রিক কম্পানি’-তে। সেখানে তিনি অনুষ্ঠানটির ব্যান্ডদল ‘দি শর্ট সার্কাস’র একজন সদস্য ছিলেন।
তিনি কনসার্টেও অনেক অংশগ্রহণ করছেন। উল্লেখযোগ্য হলো-ডিউক আর্লিংটনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গান। অ্যাপোনেমেস জ্যাজ গানের দলের তিনি প্রতিষ্ঠাতা ও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিখ্যাত মাকিন জ্যাজ শিল্পী কাজ করেছেন সেখানেই।
তার আরও কটি হিট পারফরমিং গানের মধ্যে আছে ‘হোয়াই মি’, ‘ব্রেক ডান্স’। ‘সিটি হিট’ ছবিতেও অভিনয় করে খ্যাতি লাভ করেছেন। আরেকটি নামকরা কাজ ‘ডি.সি. ক্লাব’। আইরিন কারা বিয়ে করেছেন স্টান্টম্যান ও চলচ্চিত্র পরিচালক কংরাদ পালমিজানোকে, লস অ্যাঞ্জেলসে ১৯৮৬ সালের এপ্রিলে। তাদের বিচ্ছেদ হয়েছে ১৯৯১ সালে।
ওএফএস/