উত্তর প্রদেশে সম্রাট পৃথ্বিরাজের কর মওকুফ
ভারতের উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ তার অঙ্গরাজ্যের মন্ত্রীসভার সদস্যদের নিয়ে ঐতিহাসিক অ্যাকশন সিনেমা ‘সম্রাট পৃথ্বিরাজ’র একটি বিশেষ প্রদর্শনীতে প্রধান অতিথি হয়েছেন ও ছবিটি দেখার পর তার প্রদেশে প্রদর্শনীটির সরকারী কর মওকুফ করে দিয়েছেন।
ছবিটির প্রদর্শনী হয়েছে তার কার্যালয় লোক ভবনে। অতিথি দর্শকদের মধ্যে ছিলেন সম্রাট পৃথ্বিরাজের ভূমিকায় অভিনয় করা বলিউডের তারকা নায়ক অক্ষয় কুমার, তার প্রধান স্ত্রী সঙ্গীতার চরিত্রে অভিনয় করা ২০১৭ সালের বিশ্বসুন্দরী ও বলিউডের অভিনেত্রী মানসী চিল্লার এবং ছবিটির পরিচালক প্রকাশ দ্রিবেদী।
ছবিটি দেখার পর মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি ঘোষণা করছি যে, এই ছবিটির এই প্রদেশে কর মওকুফ করা হলো।’
তিনি এই প্রদর্শনীতে দেরী করে এসেছিলেন। এর কারণ হলো, উত্তর প্রদেশের কানপুর দিহাত জেলাটিতে
রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমন উপলক্ষে প্রস্তুতি কার্য দেখতে তিনি গতকাল জেলাটিতে গিয়েছিলেন।
সম্রাট পৃথ্বিরাজের প্রশংসা করে তিনি বলেছেন, ‘এই ছবিটি ইতিহাসের কথা বলে ও পুরোনো আনন্দচিত্র তুলে ধরে। ছবিটি পরিবার নিয়ে দেখার মতো। আমরা আগের সময়গুলোর ভুলগুলো থেকে শিক্ষাও নিতে পারি এবং ভারতের আগের ৭৫ বছরের ভুলগুলো সেখান থেকে সংশোধন করতে পারি। আগামী ২৫ বছর ভারতকে এগিয়ে নেবার লক্ষ্য নিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এগিয়ে চলেছেন।’
হিন্দু সাধু থেকে রাজনীতিবিদ হওয়া এই মুখ্যমন্ত্রী পরিচালক দ্রিবেদী ও অভিনেতা অক্ষয় এবং অভিনেত্রী মানসীর প্রশংসা করেছেন। তিনি তাদের অভিনয় ও পরিচালনাকে সাধুবাদ দিয়েছেন। যোগী আদিত্যনাথ আরো বলেছেন, ‘এই রাজ্যের অনেক জায়গাতে এই ছবিটি দেখানো হলে তারা আরো বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করবেন।’ ছবিটি গতকাল মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে বিশেষ দর্শক হিসেবে লোক ভবনে ছিলেন উপ-মুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মাওরিয়া, রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী দয়া শঙ্কর সিং, সমবায়মন্ত্রী জে.পি.এস রাথুর, শহর উন্নয়নমন্ত্রী এ. কে. শমা, শিল্প উন্নয়ন, রপ্তানি উন্নয়নমন্ত্রী নদ গোপাল গুপ্তসহ অন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।
এই ঘোষণার পর উত্তর প্রদেশভিত্তিক রাজনৈতিক দল সমাজবাদী পার্টির প্রধান ও প্রতিষ্ঠাতা মুলায়ম সিং যাদবের ছেলে, সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও তরুণ রাজনীতিবিদ অখিলেশ যাদব আদিত্যনাথের সরকারকে আক্রমণ করে বলেছেন, ‘রাজ্য সরকারের উচিত উত্তর প্রদেশের বর্তমান অবস্থার দিকেও নজর দেওয়া।’
তিনি হিন্দিতে তার টুইটার অ্যাকাউন্টে আরো টুইট করেছেন, ‘এই ঐতিহাসিক ছবিটি দেখার পর মন্ত্রীসভাকে আমি অনুরোধ করি উত্তর প্রদেশের বর্তমান অবস্থাকেও দেখা।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘আগের ময়দার পিন্ড বতমানের দাঙ্গা তৈরিরর জন্য ব্যবহার করা যাবে না।’
এর আগে এই ছবিটি নিয়ে রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মাওরিয়া বলেছিলেন, ‘আমাদের ছবিগুলো মোঘলদের ওপর বানানো হয়েছিল। তবে এখন এমন মহান ব্যক্তিত্বদের নিয়ে ছবি তৈরি হয়েছে।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘আগে ইতিহাসে সত্যকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টাগুলো হয়েছে, তবে অতীতকে জানা প্রয়োজন।’
গতকাল থেকে বিশাল ভারতের সব সিনেমা হলে একসঙ্গে দেখানো শুরু হয়েছে ‘সম্রাট পৃথ্বিরাজ’। ছবিটি কিংবদন্তী যৌদ্ধা রাজা পৃথ্বিরাজ চৌহানের জীবনের গল্প। এই ছবিতে অক্ষয় কুমার তার চরিত্রে আর রাজকুমারী সঙ্গীতার চরিত্রে আছেন মানসী চিল্লার।
অক্ষয় কুমার এই বিপুল বাজেটের ছবি নিয়ে একটি বিবৃতিতে বলেছেন, ‘প্রবল সাহসী শেষ হিন্দু রাজা সম্রাট পৃথ্বিরাজ চৌহানের জীবনের ওপর ভিত্তি করে ছবিটি বানানো। যিনি তার শরীরের প্রতিটি রক্তবিন্দু ভারতমাতাকে রক্ষা করতে ঝরিয়েছেন।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘আমাদের ছবিটি এই ক্ষমতা ও শক্তিমান রাজার সাহস ও বীরত্ব এবং নির্ভীকতাকে সম্মান প্রদর্শন করছে। আমরা আশা করছি, আমাদের দেশের মানুষরা তার যেকোনোভাবে মাতৃভূমিকে রক্ষা করার নির্ভীকতার মাধ্যমে উৎসাহিত হবেন।’
এর আগে বৃহস্পতিবার এই দলটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের জন্য একটি বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে।
সম্রাট পৃথ্বিরাজ তার রাজ্য চৌহানের রাজা ছিলেন। এখন সেটি রাজস্থানের অংশ। তিনি রাজপুত রাজাদের প্রধান ছিলেন ও মোহাম্মদ ঘোরিকে পরাজিত করেছেন। মোটে ২৫ থেকে ২৬ বছর বয়সে তিনি আজমীরে মোহাম্মদ ঘোরির বাহিনীর হাতে পরাজিত হয়ে মারা গিয়েছেন। ভারতের ব্রাজ ভাষাতে তার ওপর লেখা মহাকাব্য ‘পৃথ্বিরাজ রাসো’ই সবচেয়ে বিখ্যাত কর্ম।
সম্রাট পৃথ্বিরাজ ছবিতে পৃথ্বিরাজের মামা কাকা কানহা’র চরিত্রে অভিনয় করেছেন বলিউডের সুপারস্টার ও অনেকগুলো ছবির প্রাণ সঞ্জয় দত্ত। কাকা কানহা অত্যন্ত বীর রাজপুত যোদ্ধা ও সেনাপতি ছিলেন।
সম্রাট পৃথ্বিরাজের নিয়ে যে মহাকাব্যটি লিখেছেন ‘চান্দ বারদাই’, তার চরিত্রে অভিনয় করেছেন সনু সুদ।
এই ছবি যশরাজ ফিল্মসের ব্যানারে তৈরি। তারাই প্রযোজক।
হিন্দি, তামিল ও তেলেগু ভাষায় তৈরি করে অক্ষয় ও সঞ্জয়ের ছবিটিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
ওএস।