কিংবদন্তি আলোকচিত্রী চঞ্চল মাহমুদ
টাকার অভাবে থেমে আছে চিকিৎসা, দু’মুঠো ভাতের জন্য আর্তনাদ

একটা সময় কী ছিল না তার? কে ছিল না তার পাশে? আজ সময়ের ব্যবধানে কিছুই নেই, পাশেও কেউ নেই। খ্যাতি, যশ ও জৌলুস সব ম্লান হয়ে গেছে। শখের গাড়ি, বসবাসের জন্য প্রিয় ফ্ল্যাট, অফিস, ক্যামেরা, চেয়ার-টেবিল সব বিক্রি করে দিতে হয়েছে বাধ্য হয়ে। সব হারিয়ে নিঃস্ব তিনি। অসুস্থ অবস্থায় ধুকে ধুকে বেঁচে থাকলেও মরণের দিন গুণছেন প্রতিনিয়ত। কারণ, বেঁচে থাকার জন্য সুস্থতার পাশাপাশি মৌলিক চাহিদা পূরণের সক্ষমতা নেই তার। দরিদ্রের চেয়েও হতদরিদ্র হয়ে নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করছেন তিনি। বলছি অসংখ্য তারকা বানানোর কারিগর কিংবদন্তি আলোকচিত্রী চঞ্চল মাহমুদের কথা।
পাঁচবার হার্ট অ্যাটাক হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে কোনো রকম বেঁচে ফিরলেও জীবন তাকে নিয়ে তামাশা করছে প্রতিনিয়ত। টাকার অভাবে আর স্বাভাবিক চিকিৎসা করাতে পারছেন না তিনি। এদিকে চঞ্চল মাহমুদের স্ত্রী রায়না মাহমুদও মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত। দুজনের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। যেখানে দিনে ঠিক ভাবে খেয়ে-পরে বাঁচতে পারছেন না, তারা কীভাবে চিকিৎসার জন্য এত টাকা যোগাড় করবেন। এত খ্যাতিমান একজন মানুষের জীবন এমন দুর্বিষহ হবে চোখে না দেখলে কেউ কল্পনাও করতে পারবে না।
প্রয়াত চিত্রনায়ক সালমান শাহ থেকে শুরু, চিত্রনায়িকা মৌসুমী, সাদিয়া ইসলাম মৌ, শমী কায়সার, নোবেল, আফসানা মিমিসহ কত কত শিল্পীদের তারকা হবার পেছনে অবদান রয়েছে এ চঞ্চল মাহমুদের। অথচ, আজ এ মানুষের কী নির্মম পরিণতি!
এ সম্পর্কে চঞ্চল মাহমুদ ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘এক সময় কতো কতো মানুষ ছিল আমার আশেপাশে। আজ কেউ নেই। কতো তারকাদের জীবন পাল্টে গেছে আমার হাত ধরে, অথচ আজ কেউ আমার খবর রাখে না। দুয়েক জন কাছের মানুষ এখনও আমাকে সহোযোগিতা করছে, কিন্তু যাদের কাছে আমার ভরসা ছিল তারা কেউ আমার খোঁজ রাখেনি। সবাই ভুলে গেছে আমার কথা।’
দেশে অসংখ্য পুরস্কারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পুরস্কার রয়েছে চঞ্চল মাহমুদের ঝুঁলিতে। কিন্তু খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার জন্য আজ তাকেই হাত পাততে হচ্ছে মানুষের কাছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুইবার সবমিলিয়ে চঞ্চল মাহমুদের চিকিৎসার জন্য ১৫ লাখ টাকা সাহায্য করেছেন। কিন্তু চঞ্চল মাহমুদ ও তার স্ত্রী রায়না মাহমুদের চিকিৎসার জন্য ইতিমধ্যেই ৮১ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থ, গাড়ি ও বসবাসের জন্য যে ফ্ল্যাটটি ছিল তা বিক্রি করতে হয়েছে বেঁচে থাকার তাগিদে।
তাই চক্ষুলজ্জার কথা চিন্তা না করে দুমুঠো ভাত ও চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি সবার কাছে সাহায্য চাইলেন চঞ্চল মাহমুদ ও রায়না মাহমুদ দম্পতি।
কান্নাভেজা কণ্ঠে চঞ্চল মাহমুদ বললেন, ‘আমরা বাঁচতে চাই।’
রায়না মাহমুদও একই সুরে বললেন, ‘আমরা বাঁচতে চাই। আমাদের চিকিৎসার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চাই। এ ছাড়া কাছে দূরে সবার কাছেই সাহায্য চাই। আমরা খুব অসহায় হয়ে পড়েছি। সবাই আমাদের পাশে দাঁড়ান।’
এএম/এসএন
