‘শুধুমাত্র রস আস্বাদনের জন্য আমাদের নাটক নয়’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগে চার বছরের অনার্স ও এক বছরের মাস্টার্স কোস চালু আছে। মঞ্চ ও অভিনয় শেখার এই শ্রেণীকক্ষের ছাত্র, ছাত্রীদের ‘১৫তম বার্ষিক নাট্যোৎসব ২০১৯’ শুরু হয়েছে গতকাল ২১ মার্চ। চলবে ১ এপ্রিল পর্যন্ত। বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক আশিকুর রহমান লিয়ন বলেছেন, ‘আমাদের এবারের নাট্যোৎসবটি ১৫তম হলেও সবমিলিয়ে ১৮তম উৎসব। ফলে বাংলাদেশের অন্যতম নাটোৎসব। তার বাদেও ছাত্র, ছাত্রী এবং তাদের ক্লাসরুমের শিক্ষকদের মাধ্যমে উৎসব হয় বলে অনেক গুরুত্ব রয়েছে।’
‘নাটকগুলো বাছাই করা, আমাদের ক্লাসরুমের অনেক দিনের পাঠ্যও থাকে কোনো, কোনোটি। যেমন এবারের স্যামুয়েল বেকেটের ‘ওয়েটিং ফর গডো’। এত বছর ধরে আমাদের দেশে কোনো নাট্য দলেরও কোনো উৎসব টাকার অভাবে, নানা কারণে চলতে পারেনি। সেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক ছাত্র, ছাত্রীরা করে দেখাচ্ছে। উৎসবের আরেকটি বিশেষত্ব হলো, আমরাই এর আয়োজক, প্রস্তাব থেকে শুরু করে সব কাজ ও উৎসব আয়োজনের দায়িত্ব নিজেদের।’
‘উৎসবটি মূলত ছাত্র, ছাত্রীদের প্রযোজনা, তাদের শ্রমের ফসল। তারা অভিনয় ও নির্দেশনা করেন। শিক্ষকদের নাটকেও তারাই প্রাণ। আমাদের সারা বছরের কাজ এভাবে দর্শকের সামনে নিয়ে আসা হয়। অনাস ফাইনালের ছাত্র, ছাত্রীদের এখানে নাট্য নির্দেশনা থাকে, তাদের ব্যবহারিকের পরীক্ষা কেবল শিক্ষক নয়, টিএসসির অডিটোরিয়ামের দর্শকদের সামনেও ঘটে। এবার পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নাটমন্ডল-এই খোলা চত্বরে আয়োজন করছি। ২০১৯ সালে করার কথা থাকলেও এখন করতে হচ্ছে।’
‘ছাত্র, ছাত্রীদের আবিশ্যিক কোস আছে অনেক। সব পড়ে তারা। সেই জ্ঞান এখানে প্রকাশিত হয়। তাদের নির্দেশিত নাটকগুলোই উৎসবে প্রদর্শন করা হয় বলে এর আরেকটি গুরুত্ব আছে। আমাদের বিভাগের সব ছাত্র, ছাত্রীরা তাদের বার্ষিক নাট্য উৎসবে অভিনয় করে। এছাড়াও শিক্ষকদের পাশে তারা নির্দেশনায় নামে। এবারও শিক্ষকদের নাটক আছে। গতবারও নিয়মে ছিল। সাবেক সভাপতি ও অধ্যাপক ড. ইস্রাফীল শাহীন এবং সহকারী অধ্যাপক তানভীর নাহিদ খানের নাটক আছে।’
‘এবারে বাইরের কোনো নাটক আসতে পারেনি। দুঃখজনক হলেও এবারের বিশেষত্ব। কোনো, কোনো বছর আমাদের যোগাযোগ ও চেষ্টায় ভারত, ইতালির নাটক এবং নাটকের দল আসে। বাংলাদেশের অন্যান্য সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও আমাদের উৎসবে নাটক নিয়ে আসতে আমন্ত্রণ জানাই। এবার তারা আসতে পারেননি, দুঃখজনক। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের নাটক উৎসবটি সবার জন্য খোলা থাকে। আমাদের উৎসব জাতীয়ভাবে গুরুত্ব লাভ করে চলেছে।’
‘টিএসসিতে আমরা বাংলাদেশের গুণী ব্যক্তিত্বদের থিয়েটার অ্যান্ড পারফমেন্স স্টাডিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্মাননা প্রদান করে গর্বিত হই। এবার রামেন্দু মজুমদার পুরস্কারটি লাভ করবেন। তার সম্পর্কে বলার প্রয়োজন খুব বেশি কারোরই নেই।’
‘নিয়মে প্রতি ডিসেম্বরে আমাদের উৎসব হয়। তবে করোনাভাইরাসের আক্রমণে কোভিড ১৯ মহামারি রোগে এবার সময়টি আমরা পাইনি। তারপরও ২৪ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে আশা করে আমরা উৎসবের প্রাথমিক সময় ঠিক করেছিলাম কিন্তু তৃতীয় ঢেউ আবার থামিয়ে দিয়েছে। এরপর পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক হয়েছে। ফলে এই উৎসব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুনভাবে প্রাণ ফেরাবে বলে আমরা সবাই আশা করি।’
‘টিএসসি সারা বছরের মতো এবারও বুকড হয়ে আছে। যেটি আমাদের আশা ছিল না। তবে আমাদের দারুণ নাটকগুলো নাটমন্ডলে হচ্ছে বলে আশপাশের সবাই দেখতে পারছেন। এখানে ২শ থেকে ২শ ২০ জন দশক বসতে পারছেন। উৎসবের জন্য ছাত্র, ছাত্রীরা সবসময় শিক্ষকদের নিয়ে শেষ পর্যন্ত কাজ করে যাবেন বরাবরের মতো। শুরু হবে ড. শাহীনের ওয়েটিং ফর গডো দিয়ে, শেষ হবে নাহিদের রবীন্দ্রনাথের বিসর্জন-এ। তার নাটকটি ৩০, ৩১ ও ১ এপ্রিল তিনদিন টানা হবে। এর কারণ হলো, যাত্রাপালা রীতিতে নাটকের মঞ্চায়ন করছেন।’
‘আমাদের এখানে আর সাতটি নাটক হলো ছাত্র, ছাত্রীদের। তারা সবাই অনার্স ফাইনালের। এখন মাস্টার্স প্রথম সেমিস্টারে পড়ে। ১৫ জন নির্দেশক তারা থাকার কথা ছিল। ১৫ বছর হিসেবে। তবে আটজন চাকরিতে চলে গিয়েছে, অন্য বিষয় নিয়েছে মাস্টার্সে। তারপরও আমাদের সাতজন খুব ভালো। তারা চারটি বছর পড়ালেখা করেছে, নাটক ও অভিনয় শিখেছে। তাদের কাজগুলোতে পেশাদার ও সৃজনশীল আছে বলে আমরা বিশ্বাস করছি। তাদের মেধা, পেশাদার দৃষ্টিভঙ্গি, অভিনবত্ব, বিশ্লেষণ, আঙ্গিক, উপস্থাপনা-আমাদের গর্বিত করবে অভিনেতা, অভিনেত্রীদের মতোই।’
‘এই নাটকগুলোর মাধ্যমেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্র, ছাত্রীরা সমাজ, রাষ্ট্র, সম্পর্ক ও নিজেকে বরাবরের মতো বিশ্লেষণ করে যাবে। শুধুমাত্র রস আস্বাদনের জন্য আমাদের নাটক নয়।’