নাৎসি-পিটার্সবাগ আক্রমণকারীর ছেলে যুদ্ধবিরোধী ‘শোয়ার্জনেগার’
অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি) : হলিউডের অ্যাকশনের মেগা স্টার ‘আরনল্ড শোয়ার্জনেগার’। অষ্ট্রিয়ায় জন্ম নেওয়া আমেরিকান। ২০০৩ সাল থেকে ২০১১ পযন্ত টানা ৮ বছর ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেছেন। শুক্রবার রাশিয়ান জনগণকে উদ্দেশ্য করে তার একটি ভিডিও রাশিয়ান টুইটারে প্রচারিত হয়েছে ও বিদ্যুতের মতো মতামত এবং সমালোচনা তৈরি করেছে। আরনল্ড শোয়ার্জনেগারের যুদ্ধবিরোধী ভিডিওটি ঝড় তুলেছে রাশিয়ান সামাজিক যোগাযোগে।
তাতে শোয়ার্জনেগার নামের মার্কিন এই সুপারহিট অভিনেতা-তার ‘টানিনেটর’ সিরিজের জন্য সারা দুনিয়াতে খ্যাত নিজের কথাগুলো বলেছেন। তার এই সিরিজের প্রথম ছবি ‘দি টার্মিনেটর’ ১৯৮৪ সালে বেরিয়েছে, জেমস ক্যামেরনের পরিচালনায়। তিনিও তার মতোই হলিউডের খ্যাতিমান পরিচালক। ৬.৯ বিলিয়ন ডলারের ছবিটি আজ পর্যন্ত আয় করেছে ৭৮.৩ বিলিয়ন মাকিন ডলার। পরের ছবিটি বেরিয়েছে ৭ বছর পর। ক্যামেরনের এই ছবিটি বিপুল বাজেটের। ১শ ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। আয় করেছে এই পর্যন্ত ৫শ ২০. ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। নাম ‘টার্মিনেটর ২ : জাজমেন্ট ডে’। তারপরের ছবিটি ‘টার্মিনেটর ৩ : রাইজ অব মেশিনস’। ২০০৩ সালের। ১শ ৮৭.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের, আয় ৪শ ৩৩.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। পরের ছবিটি ‘টার্মিনেটর জেনেসিস’। ২০১৫ সালের, ১শ ৫৫ থেকে ১৫৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের; আয় করেছে ৪শ ৪০. ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। শেষ ছবিটি বেরিয়েছে ২০১৯ সালে। ‘টামিনেটর : ডার্ক ফেইট’। ১শ ৮৫ মিলিয়ন থেকে ১শ ৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ছবিটি এই পযন্ত ২শ ৬১. ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করতে পেরেছে। সিরিজটির দৌলতেই সাবেক ‘মিস্টার ইউরোপ’ আরনল্ড শোয়ার্জনেগারের সারা বিশ্বে খ্যাতি, ক্যামেরনেরও।
তার মতোই দেখতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। চলাফেরাও তেমনও। অনুল্লেখ্য, মাকিন সম্রাজ্যবাদ প্রচারের অন্যতম নিয়ামক তার ছবিগুলো। আজব ও অবিশ্বাস্য জনপ্রিয়তা এই মার্কিন তারকাটির। নিজের ভিডিও বার্তায় সাবেক নাজি পুলিশ অফিসারের ছেলে শোয়ার্জনেগার রাশিয়ানদের সতর্ক করে দিয়েছেন, তারা চরমভাবে হতাশাজনক ও বিরক্তিকর তথ্যগুলো লাভ করছেন তাদের দেশের ইউক্রেনে প্রচন্ড আক্রমনাত্নক হামলার বিষয়ে।
মার্কিন এই সুপারস্টার সরাসরি তাদের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বলেছেন-‘আপনি এই যুদ্ধটি শুরু করেছেন, আপনিই এটি থামাতে পারেন।’
তিনি যে রাশিয়ানরা এই যুদ্ধের বিরোধিতা করছেন তাদের প্রশংসা কীর্তন করেছেন। তবে রাশিয়ানরা বরাবরই বলে চলেছেন, রাশিয়ান ভাষায় কথা বলা ও এই দেশটির সঙ্গে যোগসূত্র থাকা ইউক্রেনিয়ানদের রক্ষা করতে এটি একটি ‘বিশেষ অপারেশন’। তবে শোয়ার্জনেগার তার এই ভিডিওতে বলেছেন, ‘রাশিয়ানদের কাছে তাদের রাজধানী ক্রেমলিনের কর্তারা ইউক্রেনকে নাৎসি মতাদর্শ থেকে মুক্ত বা বিচ্ছিন্ন করতে এই হামলাটি করা হচ্ছে এই কথাগুলোতে মিথ্যা বলছেন।’ আরো বলেছেন, ‘ইউক্রেন এই যুদ্ধটি শুরু করেনি, যারা ক্রেমলিনে ক্ষমতায় আছেন, তারা করেছেন।’
রাশিয়ানদের ক্রেমলিনের কর্মকর্তারা যেসব অ্যাকাউন্ট অনুসরণ করেন, সেগুলোর কয়েকটির মধ্যে আছে-শোয়ার্জনেগারের রাশিয়ান ভাষার টুইটার ও ইংরেজিতে তার নিজের অ্যাকাউন্টটি।
নয় মিনিটের ভিডিওটিতে প্রথমে শরীরচচা খেলোয়াড়, তারপর হলিউডের অভিনেতা ও পরে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া বিশ্বখ্যাত মানুষটি ইউক্রেনে ধ্বংসযজ্ঞের একটি ফুটেজ দিয়েছেন। তিনি প্রপাকান্ডা ও ভুল তথ্য সরররাহ করার প্রমাণাদি দিয়ে দেখতে বলেছেন। বলেছেন, ‘আমি আপনাদের সামনে আজ এই কারণে কথা বলছি, বিশ্বটিতে যে বিষয়গুলো ঘটে চলেছে, সেগুলো থেকে আপনাদের দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। এই ভয়ানক বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনাদের জানা উচিত।’
তিনি বলেছেন, ‘এই যুদ্ধটি ইউক্রেন শুরু করেনি, জাতীয়তাবাদীরা নয়, নাজিরাও করেনি।’ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেস্কিকে ‘ইহুদি’ উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘এটি রাশিয়ান জনগণের যুদ্ধ নয়।’
তার ছবি ‘রেড হার্ট’ প্রথম মার্কিন ছবি হিসেবে মস্কোকে দেখানো হয়েছে। তাও আবার রেড স্কয়ারে। ১৯৮৮ সালের ছবিটি সোভিয়েত ইউনিয়নের মৃত্যুঘন্টার শেষের দিকের।
ছবিটির কথা উল্লেখ করে সাতবারের ‘মিস্টার অলিম্পিয়া’ বলেছেন, তার রাশিয়ান মানুষদের প্রতি আগ্রহ আছে। তিনি শরীরচর্চার সবোচ্র্চ পর্যায় বডি বিল্ডিংয়ের অন্যতম সেরা তারকা। জানিয়েছেন, কিশোরকালে রাশিয়ান একজন অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন বলিবিল্ডার ইউরি ভ্লাসফের কাছ থেকেই তার এই বিষয়ের শুরু।
কেবল তাই নয়, তিনি তার বাবার কথাও বলেছেন। তার বাবা গুস্তাভ শোয়ার্জনেগার যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাজি সৈন্যদের সঙ্গে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবাগ আক্রমণ করেছেন উল্লেখ করেছেন ৭৪ বছরের অভিনেতা। পরে এই শহরটিই লেলিনগ্রাদ হয়েছে। তার ছেলে জানিয়েছেন, তিনি একজন ভেঙে যাওয়া মানুষ হিসেবে ফিরে এসেছেন বাড়ি। যার শরীর ও মন জুড়ে ব্যথা। এটি হলো তিনি ‘গুলিবিদ্ধ’ হয়েছেন। এই যুদ্ধে তাকে এভাবে আক্রান্ত হতে হয়েছে। সেটি সহ্য করে তিনি বাড়িতে এসেছিলেন। এর বাদেও তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণের অপরাধে আজীবন ভুগেছেন।
তবে শোয়ার্জনেগার বলেছেন, ‘রাশিয়ান মানুষদের শক্তি ও তাদের হৃদয়ের বিশালত্ব আমাকে সবসময় উৎসাহিত করেছে। এই কারণে আমি আশা করি, আপনারা ইউক্রেনে এই যুদ্ধের বিষয়ে আপনাদের সত্য কথাগুলো বলবেন।’
তিনি বলে গিয়েছেন, ‘এটি একটি অবৈধ যুদ্ধ। আপনাদের জীবনগুলো, হৃদয়গুলো, আপনাদের ভবিষ্যতগুলো উৎসগ করতে হচ্ছে অনথক একটি যুদ্ধে, যেটিকে অপরাধ বলছে সারা দুনিয়া।’
ওএস।