অস্কারের মঞ্চে যে তারাগুলো আলো বিলিয়ে যাবে
ঠিক ১০ দিন পর বিশ্ব সিনেমার সবচেয়ে বড় আসর অস্কারটি বসবে হলিউডের ডলবি থিয়েটারে। ডলবির খবরটি আগেই সিনেমা ভক্তদের আগেই জানা। অস্কারের দিনটি-২৭ মার্চ, ক্যালেন্ডারের পাতায় রবিবার। উপস্থাপক হিসেবে থাকবেন তিনজন। দুজন কালো মেয়ে, আফ্রিকান-আমেরিকান। স্টান্ড-আপ কমেডিয়ান বা মঞ্চে দাঁড়িয়ে কৌতুকাভিনয় করে যাওয়া ওয়ান্ডা সাইকস ২০০৪ সালে এন্টারটেইনমেন্ট উইকলি’র বিচারে যুক্তরাষ্ট্রের সেরা ২৫ জনের অন্যতম হাস্যরসাত্নক ব্যক্তিত্ব। ১৯৯৯ সালের ‘প্রাইম টাইম অ্যামি অ্যাওয়ার্ড’ জয় করেছেন। তিনি মাকিন অভিনেত্রী, চিত্রনাট্য লেখিকাও। তার সঙ্গে থাকবেন আরেক স্টান্ড-আপ কমেডিয়ান, অভিনেত্রী এইমি শুমার। তিনি সাদা আমেরিকান। ২০০৮ সালে কৌতুক সিনেমা ‘ফিল প্রিটি’তে অসাধারণ অভিনয় করে ‘সেরা অভিনেত্রীর টনি অ্যাওয়ার্ড’ জয় করেছেন। তাদের সঙ্গী হবেন রিজাইনা হল। তিনিও কৌতুকাভিনেত্রী। রিজাইনা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের নিউ ইয়র্ক চলচ্চিত্র সমালোচকদের সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জয় করেছেন প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান মেয়ে হিসেবে। ফলে তিনজন কৌতুকাভিনেত্রী এবারের উপস্থাপনাটি করবেন। অন্যরকম বিষয় হবে। নারীদের সবাই কৌতুকে অসাধারণ। তারা তিনজনে এবারই প্রথম এক হচ্ছেন অস্কারে।
অস্কার উৎসবটির শো পরিচালক থাকছেন ‘উইল প্যাকার’। মার্কিন এই চলচ্চিত্র প্রযোজকও কৃষ্ণাঙ্গ। হলিউডের হলিউড রিপোর্টার তাকে কমেডির সবচেয়ে শক্তিশালী মানুষদের অন্যতম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২৮টি প্রযোজিত সিনেমার মধ্যে খুব নাম করেছে-‘গালস ট্রিপ’, ‘রাইড অ্যালং’’ ও ‘থিংক লাইক অ্যা ম্যান’। তার ‘দি উইল প্যাকার প্রডাকশনস’ ও ‘দি উইল প্যাকার মিডিয়া’র চিফ অব স্টাফস ‘শায়লা কাউয়ান’ নামের কৃষ্ণাঙ্গ যুবতীটি মিলে তাদের বাছাই করেছেন। তিনি উইল প্যাকারের থিংক ট্যাংক। তাদের মাধ্যমে হাস্য, রসে ভরপুর থাকবে এই অস্কার। মোট পাঁচজন প্রধান কুশীলবের চারজনই কালো।
ওয়ান্ডা সাইকস, এইমি শুমার ও রিজাইনা হল-এই তিন উপস্থাপিকা মিলে ১৬ মার্চ, গতকাল, কুশীলবদের বাকি তালিকাটি প্রকাশ করেছেন। যারা পারফরমেন্স করবেন অস্কারের মঞ্চে। কালো মেয়ে ‘হালেই বেইলি’ অভিনয় করেন। কমেডিয়ান হিসেবে সুনাম আছে। গায়িকা, গীতিকারও। কৃষ্ণাঙ্গ যুবক ও নামকরা গায়ক ‘শন কোম্বস’ উঠবেন মঞ্চে। যেখানে তিনি ‘পাফ ড্যাডি’ নামে খ্যাত। মার্কিন র্যাপার। রেকড নির্বাহি, প্রযোজক, গীতিকার, অভিনেতা ও উদ্যোক্তা। ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত তার প্রথম অ্যালবামটিই খুব নাম করেছে-‘নো ওয়ে আউট’। এই সিরিজটির এরপরের অ্যালবামগুলোও বাণিজ্যিকভাবে সাফল্য লাভ করেছে-‘ফরএভার (১৯৯৯)’, দি সাগা কন্টিনিউজ (২০০১)’ ও ‘প্রেস প্রে (২০০৬)’। ২০০৯ সালে তিনি ব্যান্ডদলটি গড়ে তোলেন ‘ডার্টি মানি’। তাদের পরের বছর অত্যন্ত সফল অ্যালবাম বের করেছেন ‘লাস্ট ট্রেন টু প্যারিস’। থাকবেন মঞ্চে ‘জেমি লি কার্টিস’। প্রবীণ ও বিশ্বখ্যাত অভিনেত্রী দুটি ‘গোল্ডেন গ্লোব’, একটি ‘ব্রিটিশ অ্যাকাডেমি ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড’ জয় করেছেন। লেখিকা হিসেবেও খ্যাত। ১৯৯৮ সালে এই জেমি লি কার্টিসকে হলিউডের হল অব ফেমে সম্মানের সঙ্গে আসন দেওয়া হয়েছে। আরো আসবেন মাকিন অভিনেতা ও মঞ্চনাট্য পরিচালক-‘উডি হারেলসন’। একটি ‘প্রাইম টাইম অ্যামি অ্যাওয়ার্ড’ ও দুটি ‘স্কিন অ্যাক্টরস গিল্ড অ্যাওয়াড’ আছে তার। পারফরমেন্সের জন্য উঠবেন অস্কারের মঞ্চে ‘স্যামুয়েল এল জ্যাকসন’। এই মানুষগুলোর মধ্যে তিনি সবচেয়ে প্রবীণ। ১৯৪৮ সালে জন্ম। তার প্রজন্মের সবচেয়ে বিখ্যাত ও রোজগার করা অভিনেতাদের একজন কৃষ্ণাঙ্গ। ‘কামিং টু আমেরিকা’, ‘জুইস’, ‘ট্রু রোমান্স’সহ তার অনেক বিখ্যাত ছবি আছে। ‘জুরাসিক পার্ক’, ‘ফ্রেশ’-এও অভিনয় করে সুনাম কুড়িয়েছেন। মোটে ২৩ বছরের কানাডিয়ান গায়ক ও গীতিকার ‘শন ম্যান্ডেজ’ আসবেন। উঠবেন ‘টাইলার প্যারি’। একজন কালো আমেরিকান অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার। মা ও খালাকে ঘরে তিনি ‘মাডিয়া’ নামের একটি চরিত্র তৈরি ও অভিনয় করে সুনাম কুড়িয়েছেন। বয়স্ক ও কঠিন ধরণের আফ্রিকান-আমেরিকান নারীদের চরিত্র এটি। ছবি ও নাটকগুলো কৌতুকময় তবে গুরুত্বপূণ বিষয় নিয়ে বানানো হয়। তাতে নীতিশিক্ষা থাকে। অবিশ্বাস, সম্পর্কে যুক্ত মানুষদের হয়রানি ও একজনের কোনো কাজের ফলাফলগুলো তিনি এখানে কাজ করেন। সবশেষে তিন উপস্থাপিকা আনছেন রবাট অ্যালিস সিলবারস্টাইন নামের মার্কিন সঙ্গীত নির্বাহি ও ব্যবসায়ীর মেয়ে; ডায়না রস নামের বিশ্বখ্যাত মার্কিন বিনোদনধমী গায়িকা ও অভিনেত্রী, ‘দি সুপ্রিমস’ গায়িকার দলের প্রধান; মার্কিন লেবেল রেকড কম্পানি মোটাউন’র বিচারে ১৯৬০’র দশকের সবচেয়ে সফল ও বিশ্বের সর্বকালের, সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া মেয়েদের গানের দলগুলো অন্যতম, তাদের গানগুলো মার্কিন মেয়েদের দলের গানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার সবার ওপরে ছিল; তাদের মেয়ে ‘ট্রেইসি এলিস রস’। একজন আমেরিকান অভিনেত্রী, গায়িকা, টিভি উপস্থাপিকা, প্রযোজক ও পরিচালক। ২০০০ থেকে টানা আট বছর চলা টিভিতে ‘গার্লফ্রেন্ডস’র প্রধান চরিত্রে ছিলেন। ২০১৪ থেকে আজ পর্যন্ত চলা ‘ব্র্যাক-আইশ’-এ তে প্রধান চরিত্র আছেন।
তারা যোগ দেবেন এর আগেই ঘোষণা করা নামকরা মুখগুলোর সঙ্গে। তারা হলেন-যারা জানেন না, খোঁজ রাখেন না বা রাখেননি তাদের জন্য বলা, প্রথমজন ‘রুথ ই. কার্টার’। ৬১ বছরের একজন বিখ্যাত মার্কিন সিনেমা ও চলচ্চিত্রের কস্টিউম ডিজাইনার। পুরো চরিত্র বা চরিত্রটি কেমন হবে তার জন্য এই নারী ডিজাইনগুলো করেন। দুবারের অস্কার জয় করা বিশ্বখ্যাত অভিনেতা ‘কেভিন কস্টনার’। তিনি একজন প্রযোজকও। দুটি ‘গোল্ডেন গ্লোব’ আছে। আছে একটি ‘প্রাইম টাইম অ্যামি অ্যাওয়ার্ড’ ও দুটি ‘স্কিন অ্যাক্টরস গিল্ড অ্যাওয়ার্ড’। অস্কারে আলো ছড়াতে উঠবেন স্যার ফিলিপ অ্যান্থনি হপকিন্স। ব্রিটেনের শাসনাধীন ওয়েলসের ৮৪ বছরের মানুষটি দুটি অস্কার, চারটি ব্রিটিশ অ্যাকাডেমি ফিল্ম, দুটি প্রাইম টাইম এবং একটি ব্রিটিশ অ্যকাডেমি টিভি অ্যাওয়ার্ড জয় করেছেন। তিনি লেখক, চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক। মঞ্চে আসবেন ইংরেজ অভিনেত্রী ‘লিলি জেমস’। সিনডারেলা ছবিতে সিনডারেলার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি ২০১৫ সালের ছবিতে। আরো আসবেন ব্রিটিশ কালো অভিনেতা ‘ড্যানিয়েল কালুইয়া’। ৩৩ বছরের অভিনেতাটি কিশোর বয়স থেকে অভিনয় করেছেন। ‘জোওয়ি ক্রাভিজ’ আমেরিকান অভিনেত্রী, গায়িকা ও মডেল। মা-বাবা দুজনেই অভিনেতা। অভিনেতা-সঙ্গীত শিল্পী লেনি ক্রাভেজ ও অভিনেতা লিসা বনেটের মেয়ে। নিজেও দারুণ অভিনেত্রী। মিলা কুচিনের পুরো নাম মিলেনা মারকাভনা কুনিচ। ১৯৮৩ সালে ইউক্রেনে জন্ম নেওয়া একজন আমেরিকান অভিনেতা। তাদের ইহুদি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ১৯৯১ সালে সাত বছর বয়সে সমাজতন্ত্রের শেষ সময়ে সোভিয়েত ইউক্রেন থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। ১৪ বছর বয়সে তার ফক্স টিভিতে অভিনয় জীবনের শুরু। মিলা কুনিচ হলিউডের অভিনেতা অ্যাস্টন কুচারের স্ত্রী। ২০১৫ সালে বিয়ে করেছেন। বিশ্বখ্যাত গায়িকা ‘লেডি গাগা’ থাকবেন মঞ্চে। গানের বৈচিত্র্য ও নিজেকে বারবার ভাঙা-গড়ার জন্য অসাধারণ সুন্দরী মার্কিন গায়িকাটি প্রয়োজনে অভিনেত্রী নাম করেছেন সারা দুনিয়ায়। তিনি গাইবেন। মাকিন-কলম্বিয়ান অভিনেতা, কমেডিয়ান, প্রযোজক ও লেখক ‘জন লেগুইজামো’ আসবেন। চীনে জন্ম নেওয়া মোটে ৩২ বছরের ‘সিমু লু’ কানাডিয়ান অভিনেতা-স্টান্টম্যান হিসেবে মঞ্চে উঠবেন। মার্কিন অভিনেতা ‘রামি মালেক’ আসবেন। তিন মার্কিন অভিনেতা। সেরা অভিনেতার টিভির প্রাইম টাইম অ্যাওয়ার্ড জয় করেছেন। কেনিয়ায় জন্ম নেওয়া মেক্সিকান অভিনেত্রী লুপিতা নিওনগ’ও থাকবেন তাদের সঙ্গে। কেনিয়ার অধ্যাপক, নামকরা রাজনীতিবিদ ও লেখক পিটার এনিয়াং’ নিওনগ’র মেয়ে। ‘রোসি পেরেজ’ থাকবেন অস্কারে। তিনি ৫৭ বছরের। মার্কিন অভিনেত্রী, কোরিওগ্রাফার ও অধিকারকর্মী। ‘ক্রিস রক’ উঠবেন। একজন মাকিন স্টান্ড-আপ কমেডিয়ান, অভিনেতা, লেখক, প্রযোজক ও পরিচালক, তিনিও ৫৭। ‘নওমি স্কট’ বিশ্বখ্যাত ইংরেজ অভিনেত্রী, গায়িকা। ডিজনির আলাদীনের প্রিন্সেস জেসমিন ছিলেন। আসবেন বিশ্বখ্যাত কালো আমেরিকান অভিনেতা ‘ওয়েসলি স্নাইপস’। টাইম ১০০’র অন্যতম। একজন মার্কিন অভিনেতা, ছবি প্রযোজক। ‘উমা থারম্যান’ও বিশ্বখ্যাত অভিনেত্রী। লেখেন, প্রযোজনা করেন, মডেল হিসেবে সেরাদের একজন। আরেকজনকেও আমরা সবাই চিনি-‘জন ট্রাভোল্টা’। একটি ‘গোল্ডেন গ্লোব’ জিতেছেন, গানও করেন। সব শেষ নামটি তারা দিয়েছেন ৭৪ বছরের, দক্ষিণ কোরিয়ার পাঁচ দশকের টিভি ও সিনেমা অভিনেত্রী ‘ইয়ু-চুং ইয়ুন’। একবার অস্কার লাভ করেছেন। আরো নাম আসছে বলে খবরে প্রকাশ। ফলে যারা আছেন এবারের অস্কারে, তাদের ছবিগুলো আরেকটি গল্পে।
ওএস।