আদালতের আদেশ কঠোরভাবে মানতে নিপুণ-জায়েদের প্রতি নির্দেশ
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালনের বিষয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের দেওয়া স্থিতাবস্থার (স্ট্যাটাসকো) আদেশ কঠোরভাবে মানতে নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
আদালতের আদেশ অমান্য করার অভিযোগে চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তারের বিরুদ্ধে চিত্রনায়ক জায়েদ খানের করা আদালত অবমাননার আবেদনের শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ আজ সোমবার এই আদেশ দেন।
আদালতের আদেশের পর গণমাধ্যমকে জায়েদ খানের আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, জায়েদ খানই এই পদে দায়িত্ব পালন করবেন।
এদিকে নিপুণের আইনজীবী বলেছেন, নিপুণ আক্তারই দায়িত্ব পালন করবেন।
আদালতে জায়েদ খানের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী আহসানুল করিম ও নাহিদ সুলতানা যুথি। আর নিপুণের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন রোকন উদ্দিন মাহমুদ।
উল্লেখ্য গত ২৮ জানুয়ারি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২২-২৪ মেয়াদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষে শনিবার ভোরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার পীরজাদা শহিদুল হারুন এফডিসিতে ফলাফল ঘোষণা করেন। তাতে গত দুই মেয়াদে শিল্পী সমিতির সভাপতি থাকা মিশা সওদাগরকে ৪৩ ভোটে হারিয়ে এবার সভাপতি হন ইলিয়াস কাঞ্চন। আর সাধারণ সম্পাদক পদে পরপর তিনবার জেতা জায়েদ খানের কাছে ১৩ ভোটে হারেন ইলিয়াস কাঞ্চনের প্যানেলের প্রার্থী নিপুণ আক্তার।
কিন্তু অর্থ দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ এনে নির্বাচনী আপিল বোর্ডে জায়েদ খান ও কার্যকরী পরিষদের সদস্য চুন্নুর পদ বাতিলের আবেদন করেন নিপুণ। সে আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নির্বাচনী আপিল বোর্ডকে সমাজসেবা অধিদপ্তর চিঠি দেয়।
পরে জায়েদ খান ও চুন্নুর বিষয়ে বৈঠকে বসে সমিতির নির্বাচনী আপিল বোর্ড। বৈঠক শেষে বোর্ডের প্রধান ও চলচ্চিত্র নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান জায়েদের প্রার্থিতা বাতিল বলে সাধারণ সম্পাদক পদে নিপুণকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করেন।
নিপুণকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা এবং নিজের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান। রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনী আপিল বোর্ড কর্তৃক জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে। সেই সঙ্গে জায়েদের প্রার্থিতা বাতিল করে নিপুণকে বিজয়ী ঘোষণার বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করা হয়। এ ছাড়া নিপুণের অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচনী আপিল বোর্ডকে সিদ্ধান্ত নিতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়।
পরে হাইকোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন নিপুণ। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে বিষয়টি প্রধান বিচারপতি প্রধান বিচারপতির এজলাসে শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন। সে পর্যন্ত চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে দুজনের কেউই দায়িত্ব পালন করতে পারবে না মর্মে স্থিতাবস্থার (স্ট্যাটাসকো) আদেশ দেওয়া হয়।
এরপর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি নিয়ে হাইকোর্টকেই তাদের জারি করা রুলটি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া হাইকোর্টে রুল নিস্পত্তির আগ পর্যন্ত চেম্বার আদালতের দেওয়া আদেশই বহাল থাকবে বলে নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ।
পরে হাইকোর্ট রুল শুনানি শেষে সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খান বৈধ বলে রায় দেয়। কিন্তু হাইকোর্টের সে রায়ের বিরুদ্ধে নিপুণ আক্তারের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে চেম্বার আদালত হাইকোর্টের রায় চার সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে বিষয়টি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে ৪ এপ্রিল শুনানির জন্য দিন ধার্য করে। এই সময় পর্যন্ত আদালত সাধারণ সম্পাদক পদে স্থিতাবস্থার (স্ট্যাটাসকো) আদেশ দেন।
এমএ/টিটি