ম্যাশ ছবির স্যালি ক্যালেম্যান মারা গিয়েছেন
লস অ্যাঞ্জেলস : ২৪ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার অস্কার ও অ্যামি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত অভিনেত্রী স্যালি ক্যালেম্যান মারা গিয়েছেন। তিনি ১৯৭০ সালে মুক্তি পাওয়া পরিচালক রবাট অল্টম্যান’র ছবি ‘ম্যাশ’র উত্তেজক ঠোঁটের অধিকারী মাগারেট হুলিহানের চরিত্রে অভিনয় করে বিখ্যাত ছিলেন। এই শহরের উডল্যান্ড হিলস অংশে নিজের বাড়িতে ৮৪ বছর বয়সে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে চলে গিয়েছেন তিনি-জানিয়েছেন ম্যানেজার ও প্রচারক অ্যালেন আইক্লার।
সিনেমা ও টিভিতে ৬০ বছরের ক্যারিয়ার গড়েছিলেন ক্যালেম্যান। তিনি একজন কলেজ অধ্যাপকের চরিত্রেও অভিনয় করে নাম করেছিলেন, যিনি ছাত্র রডনে ডেনঞ্জারফিল্ডের ভালোবাসার কাছে ফিরছিলেন। ছবিটির নাম ‘ব্যাক টু স্কুল’, মুক্তি পেয়েছে ১৯৮৬ সালে। এটি কমেডি। তিনি তার জীবনের সবচেয়ে বড় পরিচালক রবার্ট অল্টম্যানের ছবিগুলোতে নিয়মিত অভিনয় করেছেন। ১৯৭০’র দশকে বেরিয়েছে ‘ব্রিস্টার ম্যাকক্লাউড’, ১৯৯২ সালে মুক্তি পেয়েছে ‘দি প্লেয়ার’, ১৯৯৪ সালে অভিনয় করেছেন ‘রেডি টু ওয়্যার’-এ। তবে এই বিখ্যাত ছবিগুলো নয়, তিনি সবসময়ই পরিচিত হয়েছেন, মানুষের মনে থাকবেন, মেজর হুলিয়ান হিসেবে, যে সবসময় আঁটসাঁট পোশাক পরতো, আর্মির এই নার্স কোরিয়ার যুদ্ধের সময় উশৃংঙ্খল সেনা চিকিৎসকদের হাতে নির্যাতিতা হয়েছে। এটি কমেডি। মেজর ফ্রাঙ্ক ব্রান্স’ চরিত্রে অভিনয় করা রবাট ডুভ্যালের সঙ্গে তার একটি উঞ্চ ভালোবাসার সম্পর্ক যেটি উত্থান, পতনে ভরা-এমন অভিনয় করে গিয়েছেন তিনি এখানে। আর্মি ক্যাম্পের পেছনে তার উত্তেজক ঠোঁটগুলোতে চুম্বন করেন প্রেমিক, সে দৃশ্যটি দর্শকদের কাছে এত ভালো লাগে যে, তিনি ‘হট লিপস’ ডাকনামেই এরপর থেকে খ্যাতিমান ছিলেন। ক্যালেম্যান বলেছেন, অল্টম্যান তার সেরাটি এই ছবিতে বের করে এনেছেন। আর সেই ঠোঁটে চুম্বন দৃশ্য নিয়ে ১৯৭০ সালে একটি টিভি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ‘এটি খুবই নিজেকে মুক্ত করে দেওয়ার মতো ভালো অনুভূতি ছিল। জীবনের প্রথম বারের মতো আমি এই সুযোগগুলো নিয়েছি, কোনোকিছু নিয়েই ভয় পাইনি।’
‘ম্যাশ’ নামের বিখ্যাত ছবিটি সেবারের অস্কার বা অ্যকাডেমি অ্যাওয়াডের পাঁচটি শাখায় মনোনীত হয়েছিল। তবে সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী হিসেবে ঘুম থেকে জেগে ওঠার মতো কারণের জন্য পুরস্কার পাননি। কেননা, তিনি এখানে ডুভ্যাল, ডোনাল্ড সুলথারল্যান্ড ও এলিয়ট গোল্ডেন সঙ্গে অভিনয় করেছেন বলে ভালোভাবে বোঝা যায়নি। একটি টেলিভিশন সিরিজ হিসেবে পরে রূপদান করা হয়েছে ছবিটিকে। ১১টি সেশন ধরে টানা চলেছে। তার চরিত্রে অভিনয় করেছেন লরেটা সুইট।
স্যালি ক্লেয়ার কেলেম্যান জন্মেছিলেন ১৯৩৭ সালের ২ জুন, ক্যালিফোনিয়ার লং বিচে। তার বাবা ছিলেন একজন পিয়ানো বাদক ও তেল কম্পানির একজিকিউটিভ। তারা তাকে ছোট শিশু অবস্থায় নিয়ে আসেন লস অ্যাঞ্জেলসে। ভর্তি করে দিয়েছিলেন হলিউড হাই স্কুলে।
জীবনের শুরুর দিকে তার আগ্রহ ছিল জ্যাজ গান গাইবেন। তিনি এই ভালোবাসা থেকে ১৮ বছর বয়সে ভার্ভ রেকর্ডসের সঙ্গে চুক্তিও করেছিলেন। তবে এরপর অভিনয়ের দিকে ছুটতে লাগলেন। ১৯৭২ সালের আগে গানে কোনো ভূমিকা রাখেননি। সে বছরই প্রথম অ্যালবাম বের করলেন ‘রোল উইথ দি ফিলিং’। কোনো সময় তিনি গানের আসরে গাইতেন, কখনো তার চরিত্রগুলোতে। অভিনয়ের পুরো ক্যারিয়ারেই তিনি এভাবে গানের ভালোবাসা প্রকাশ করে গিয়েছেন, অ্যালবাম করেছেন। ২০০৭ সালে শেষ অ্যালবামটি প্রকাশ করেছেন হলিউডের অভিনেত্রী নিজের নামে-‘স্যালি’।
জীবনের শুরুতে নিউ ইয়র্ক সিটি কলেজে তিনি অভিনয়ের ক্লাস করেছেন। অভিনয় করতেন শহরের মঞ্চেও। তার নাটকটির নাম, ‘লুক ব্যাক ইন অ্যাঙ্গার’। সেখানে তার কলেজের ক্লাসমেট জ্যাক নিকলসন ও অন্যান্য ভবিষ্যতের তারকারা অভিনয় করেছেন।
শুরুর ক্যারিয়ারে তিনি বেশিরভাগ অভিনয় টিভিতে করেছেন। সেখানে তার বিখ্যাত হয়েছে ‘শাইয়্যান’। এটি ১৯৬২ সালে বেরিয়েছে, তার চরিত্রটিই ছিল মূল। অতিথি শিল্পী ছিলেন তিনি ‘দি টুইলাইট জোন’, ‘দি আউটার লিমিটস’, ‘হি আলফ্রেড হিচকক আওয়ার’ ও ‘বোনানজা’তে।
তিনি আসল ‘স্টার ট্রেক’ ছবিতে বিমানচালক হিসেবে ডা. এলিজাবেথ ডেহনের নামে অভিনয় করেছেন। তাতে আপন শ্রদ্ধা আদায় করে নিয়েছেন ভক্তদের কাছ থেকে।
অভিনেতা উইলিয়াম ডাফির সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। এইজন্য তাকে গর্ভপাত করতে হয়েছে। ম্যাশ বেরুনোর পর প্রযোজক রিক অ্যাডেলস্টাইনকে বিয়ে করেছেন। পরে তাকে তালাক দিয়েছেন। রক গানের দলের মাক ফারনেরের সঙ্গে সম্পর্ক করেছেন। আরো অনেকের সঙ্গে সম্পর্ক করার পর প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার জোনাথন ডি. ক্রেইনকে বিয়ে করেছেন ও ৩৬ বছরের দাম্পত্য জীবনে দুবার তাদের বিচ্ছেদ হয়েছে। তাদের কোনো সন্তান ছিল না।
ওএস।